আদালত প্রতিবেদক;
এক মাস সময় দেওয়া সত্ত্বেও গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেট চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না করায় পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের প্রতি হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতেই হবে। টাকা না দিলে কী করতে হবে, আমরা জানি।’
ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে পুনরায় সময় চাওয়া হলে বুধবার (১৫ মে) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালত আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘টাকা না দিয়েই সময় চাচ্ছেন, তা কি হয়?’
আদালত আরও বলেন, ‘আপনাদের ব্যবসা কি বন্ধ আছে? আমরা কি রিসিভার নিয়োগ দেব? ঈদের ছুটির আগেই ১৮, ১৯ মের মধ্যে কিছু টাকা পরিশোধ করে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করুন। আমরা আপনাদের সমস্যা বিবেচনা করছি। অন্যথায় কী করতে হয় তা আমরা জানি।’
ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী সময় আবেদন করলে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ সব কথা করেন।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২২ মে দিন ধার্য করেন আদালত। বুধবার রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামসুল হক রেজা। গ্রীনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে আদালতের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য আরও ৩ লাখ টাকা দেয়। অবশিষ্ট ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে এক মাস সময় দেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গ্রীনলাইনের মালিক মো. আলাউদ্দিন ও তার আইনজীবীর মাধ্যমে রাসেলের হাতে এ চেক তুলে দেন। এ সময় আদালত চেকটি যাচাই-বাচাই করেন। বাকি ৪৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাদের এক মাস সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে সিআরপি বা অন্য কোনো হাসপাতালে রাসেলের কৃত্রিম পা স্থাপনসহ সব চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রীনলাইন পরিবহনকে বলেন।
গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রিট আবেদন করেন।
এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ১৪ মে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ এক রায়ে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরে এ নিয়ে আরও কয়েক দফা আদেশ হয়েছে। এসব আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাসেল সরকারের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় ১১ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন আদালত।