ছোট্ট হাসানের সমুদ্র জয়ের গল্প
- আপডেট সময় : ১০:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০১৯ ২০৫ বার পড়া হয়েছে
ফিচার ডেস্ক;
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের জেলেপাড়ার হাসান। মাত্র আট বছর বয়সের শিশুটি এখন পর্যন্ত স্কুলে পা বাড়ায়নি। শুনতে অবাক লাগলেও মাত্র চার বছর বয়স থেকে সে জেলেপাড়ার অন্য জেলের সঙ্গে মাছ ধরে নিয়মিত। অভাব-অনটনের তীব্র সংকটের কাছে হার মেনে জীবিকার জন্য গভীর সমুদ্রে সংগ্রাম করাটা হাসানের প্রতিদিনের রুটিন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আবদুর রহমান সালেহ-
জীবনে একদিনের জন্যও স্কুলের চৌকাঠ না পেরোনো হাসানের গল্প শুনে নিজেকে সর্বোচ্চ সুখী মানুষদের মতো করে ভাবতে ইচ্ছে করছে। যদিও সর্বদা সুখী মানুষের মতো ভাবা এই আমাকেও প্রতিনিয়ত কম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে যেতে হয় না, বিষয়টি এমনও নয়। তবে হাসানের স্কুলে যেতে না পারার আক্ষেপ, দূর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার যুদ্ধের কাছে আমার মতো মানুষের সংগ্রামের কথা নিতান্তই হাস্যকর। অবশ্য এ যুদ্ধের মাঝেও হাসানরা হাসে, জীবিকার মাধ্যমে হাসায় পরিবারকে।
সম্প্রতি আমরা গিয়েছিলাম জেলেপাড়ায়। উদ্দেশ্য জেলেপাড়ার শিশুদের খোঁজ নেওয়া। খুঁজতে গিয়েই সেখানে দেখা পাই হাসানের। জেলেপাড়ার হাসেম আলী মুন্সীর ছেলে হাসান। হাসেম আলীর এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েটি হাসানের চেয়ে বয়সে বড়। তাই বিয়ে হয়ে গেছে। হাসেম আলী বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই হাসানের আয় দিয়েই এখন সংসার চলে।
সেদিন হাসানসহ অন্য সব শিশু এক কেজি মুড়ি এবং সামান্য টাকার অন্যান্য ইফতারকেই আনন্দভরে গ্রহণ করল। দামি উপহার পেলে অভিজাত পরিবারের বাচ্চারা যেমন আনন্দভরে গ্রহণ করে, জেলেপাড়ার শিশুগুলো সম্ভবত তার চেয়েও অনেক বেশি উচ্ছ্বাস নিয়ে একত্রে ইফতার করেছে। ইফতারিতে কী উপাদান ছিল সেটা বিবেচ্য নয়, আনন্দটাই মুখ্য। জেলেপাড়ার শিশুরা যেন এমনটাই জানান দিলো পুরো সময়জুড়ে।
হাসানের গল্প নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টরি বানানোর ইচ্ছে হলো। হাসানের গল্পটি উঠে আসা দরকার। উঠে আসা দরকার হাসানের মতো মানুষের তার পরিবারকে হাসানোর গল্পও। যে পরিবারে সকালে পান্তা ভাত, দুপুরে সামান্য তরকারি এবং রাতে নামমাত্র খাবার হলেই একটি হাসিমুখর দিনের সমাপ্তি হয়ে যায়।
আট বছর বয়সী একটি বাচ্চা ছেলে পরিবারের রুটি-রুজির তাগিদে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সুখে আছে, আছে স্বস্তিতে। জেলেপাড়ার এই পরিবারগুলো নিজেদের রুটি-রুজিতেই সন্তুষ্ট। কোন ধরনের প্রতারণা কিংবা খুব বেশি উচ্চাভিলাষী ভাবনা তাদের বিরক্ত করে না! তারা অল্পতেই খুশি, অল্পতেই উচ্ছ্বসিত।
‘পদ্মা নদীর মাঝি’র ভদ্রপাড়ার হোসেন মিয়ারা যেখানে উচ্চাভিলাষী প্রতারক হয়, জেলেপাড়ার সংগ্রামী হাসানেরা সেখানে হয় সংগ্রামী ও উদ্যমী। হোসেন মিয়াদের জন্য নিন্দা, আশা করি তাদের শুভবোধ জাগ্রত হবে। আর হাসানেরা ভালো থাকুক।
অবশ্য হাসানেরা ভালো থাকবে। বললেও থাকবে, না বললেও থাকবে। এর একটিই কারণ, হাসানদের মতো মানুষেরা অল্পতেই তুষ্ট থাকে। ভালো থাকার জন্য অল্পতেই তুষ্ট থাকার মতো বড় অস্ত্র আর কী হতে পারে?
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।