ঈর্ষার বলি ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতারা

- আপডেট সময় : ১২:৫৭:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০১৯ ১৩৮ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ;
বিশেষ সুবিধায় ‘ভাই লীগ’ * শোভনকে ঠেকাতে একাট্টা সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতা * দ্বন্দ্বে ঘি ঢালছেন ওই সাবেকরাই
দুই সদস্য দিয়েই চলছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। মেয়াদ এক বছর পার হতে চললেও গতি নেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার। আওয়ামী লীগের দফায় দফায় চাপ আর আলটিমেটামের কারণে একটি খসড়া কমিটির তালিকা করেছে ছাত্রলীগ। তড়িঘড়ির এই তালিকায় হাজারও গরমিলে আপত্তি তুলেছেন পদবঞ্চিতরা।
তাদের মতে, ছাত্রলীগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান দুই মেরুতে। একজন অতিচালাক, ভাই লীগবেষ্টিত। আরেকজন সহজ-সরল, নেত্রীনির্ভর (শেখ হাসিনা)। অতি চালাক নেতাকে ঘিরে থাকা ছাত্রলীগের কতিপয় প্রভাবশালী নেতা নিজ বলয়ের কর্মীদের জন্য পদ বাগিয়ে নিতে ত্যাগীদের সম্পর্কে কুৎসা রটাচ্ছেন। এই ভাই লীগের ঈর্ষার বলি হচ্ছেন ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা।
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর (৩১ জুলাই) সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়। ৩০১ সদস্যের এই কমিটি এখনও চলছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কমিটি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান সোমবার বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর একটি তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। সে তালিকা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দলীয় সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। সাবেকদের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই কমিটি হয়েছে। ছাত্রলীগে কোনো ঈর্ষা কিংবা বিরূপ রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’
ছাত্রলীগের বর্তমান দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়- জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক কয়েকজন নেতা বলেন, অতীতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে এত তিক্ত সম্পর্ক ছিল না। এর প্রমাণ মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রলীগ আয়োজিত চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ভণ্ডুলের মধ্য দিয়ে। ঢাবির মল চত্বরে লোকসঙ্গীত উৎসব ও কনসার্ট গ্রুপিংয়ের কারণে হয়নি।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী ও স্যার সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক দুই জন ছাত্র নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এত বড় আয়োজনে আমন্ত্রণ পাননি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তাকে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। গ্রুপিং ও অনুষ্ঠানের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েই মূলত একটি পক্ষ শোভনকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।
বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন মহলে গেলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নানা অসঙ্গতির খবর গণভবনে গেলে ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করে ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা জানান, মূলত ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে কোণঠাসা করতেই অন্য শীর্ষ নেতারা একজোট হয়েছেন। কারণ উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়াই শোভনের জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি পদে শোভনের হারের পেছনেও ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ কয়েক নেতার (ভাই লীগ) তৎপরতা ছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
ডাকসু নির্বাচনের পর ১৭ মার্চ নির্বাচিত নেতারা গণভবনে গেলে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনকে পাশে বসিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শোভনের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তার পরিবারের রাজনৈতিক পটভূমির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোভন আওয়ামী পরিবারের সন্তান। ওর দাদা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি এমপিও ছিলেন। ওর বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান, ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।’
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদে ভাসছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। দায়িত্ব পাওয়ার এক বছরে কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর কারণে অনেকে প্রশংসা করছেন তার।
জানা যায়, শোভনের রাজনৈতিক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ইতিবাচক মন্তব্য খুব ভালো চোখে দেখছেন না ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতা (ভাই লীগ)। এ কারণেই কমিটি গঠন নিয়ে বেশ ঝামেলার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত গড়ায়। কেন্দ্রীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করে আলটিমেটাম দিয়ে প্রকৃত নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।