ঢাকা ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ছড়ানো গুজবে সয়লাব Logo সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে Logo জবিতে আজীবন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo শাবিতে হল প্রশাসনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নোটিসে জোর পূর্বক সাইন আদায় Logo এবার সামনে আসছে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের মারধরের আরো ঘটনা Logo আবাসিক হল ছাড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা Logo নিরাপত্তার স্বার্থে শাবি শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড সাথে রাখার আহবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের Logo জনস্বাস্থ্যের প্রধান সাধুর যত অসাধু কর্ম: দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ! Logo বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখা যুগ্ম পরিচালক আলমগীরের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য  Logo রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটনকে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে নিন্দা ও প্রতিবাদ




ভয়ঙ্কর লুঙ্গি পার্টি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০১৯ ১২২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি;

পরনে আধ ময়লা শার্ট, লুঙ্গি। দেখেই মনে হবে শ্রমজীবী মানুষ। সাদামাটা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এই লুঙ্গি পার্টি। মুহূর্তের মধ্যে সখ্যতা গড়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয় এই চক্র। এমনকি গুমের অভিযোগও রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর এই লুঙ্গি পার্টিকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় এই পার্টির সদস্যরা সক্রিয়। সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানা এলাকার এক কিশোর নিখোঁজ হওয়ার পর এই চক্রের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাধিক টিম। ইতিমধ্যে তাদের কয়েক জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শিগগিরই এই লুঙ্গি পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর, মহাখালী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ এলাকায় রয়েছে লুঙ্গি পার্টির তৎপরতা। প্রতিটি এলাকায় অন্তত পাঁচ-সাতজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ঢাকায় নতুন আসা বা তেমন সচেতন না এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে এই চক্র। বিশেষ করে তাদের শিকার হন শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। নানা কৌশলে অল্প সময়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে চক্রের যে কোনো সদস্য। কৌশল হিসেবে চা-সিগারেট, বাদাম খাওয়ানো হয়। কথায় কথায় জেনে নেয় টার্গেটকৃত ব্যক্তির পরিচয়। এভাবেই একসময় মোবাইলফোন নম্বর আদান প্রদান করা হয়। ফোন নম্বর সেভ করার নামে বা অন্য কোনো কৌশলে মোবাইলফোন হাতে নিয়ে কল ডাইভার্ট অপশন চালু করে দেয় চক্রের সদস্যের নম্বরে। তারপরই মূল ঘটনার শুরু। ওই ব্যক্তির ফোনে আসা আত্মীয়-স্বজনের কল রিসিভ করে জানানো হয় ভয়ঙ্কর সংবাদ। ‘তিনি আমাদের কাছে বন্দি। দ্রুত আমাদের কাছে টাকা পাঠান। নইলে মেরে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেব।’ এভাবেই হুমকি-ধমকি দিয়ে টাকা দাবি করা হয়। ধার-দেনা করে স্বজনরা টাকা পাঠান। কখনও কখনও স্বজনদের জানানো হয় ‘তিনি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। কথা বলতে পারবেন না। চিকিৎসা করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা পাঠান। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে কোনো কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে মিশন সফল করে লুঙ্গি পার্টি।

সূত্র জানিয়েছে, লুঙ্গি পার্টির সদস্যরা কখনও কখনও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে। কৌশলে ওষুধ সেবন করিয়ে অজ্ঞান করে নিজেদের আস্তানায় আটকে রাখে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে। তারপর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।
ট্রেন ফেল করা যাত্রী বা ঢাকায় নতুন আসা যাত্রীদের টার্গেট করে আশপাশে ছড়িয়ে থাকে চক্রের সদস্যরা। টার্গেট পূরণ করতে প্রথমে একজন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে পরে ভিন্ন পরিচয়ে যোগ দেয় অন্যরা।

গত ২২শে এপ্রিল মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটে এরকম একটি ঘটনা। আব্দুল্লাহ নামে এক কিশোর হারিয়ে যায় বাসস্ট্যান্ড থেকে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার কলমাকান্দা এলাকা থেকে অভিমান করে ঢাকায় আসে আব্দুল্লাহ। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লুঙ্গি পার্টির খপ্পরে পড়ে এই কিশোর। বাসস্ট্যান্ডে একা একা পায়চারি করছিল সে। দেখেই মনে হচ্ছিল ঢাকায় নতুন এসেছে। সঙ্গে কেউ নেই। বেশ কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করে লুঙ্গি পার্টির সদস্যরা। তারপরই তাকে টার্গেট করে তারা। লুঙ্গি পার্টির এক সদস্য তাকে ডেকে নিয়ে নানা কথা বলে। বিস্কুট খেতে দেয়। তারপর চা পান করায়।

নিখোঁজের আগের তথ্যগুলো তদন্ত করে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, চায়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে তাকে অজ্ঞান করে কোথাও আটকে রাখা হয়েছে। আব্দুল্লাহর স্বজনরা জানান, ওই দিন ফোনে আব্দুল্লাহর বাবার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে এক ব্যক্তি হুমকি দিয়েছে, টাকা না দিলে ছেলেকে আর কখনো ফিরে পাবেন না। তাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। আব্দুল্লাহর পিতা একজন দরিদ্র কৃষক। তিনি নিজের অক্ষমতার কথা জানান। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে ৫ হাজার টাকাও দেয়া কঠিন।

তারপর থেকে কিশোর আব্দুল্লাহর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে নেত্রকোনোর কলমাকান্দার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা কলমাকান্দার থানার উপ-পরিদর্শক আবদুর রব জানান, ডিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। ঢাকায় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা লুঙ্গি পার্টি হিসেবে পরিচিত। তবে এখনো আব্দুল্লাহর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ আব্দুল্লাহ নেত্রকোনো জেলার কলমাকান্দা থানার চারালকোনা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের পুত্র।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ভয়ঙ্কর লুঙ্গি পার্টি

আপডেট সময় : ১০:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০১৯

বিশেষ প্রতিনিধি;

পরনে আধ ময়লা শার্ট, লুঙ্গি। দেখেই মনে হবে শ্রমজীবী মানুষ। সাদামাটা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এই লুঙ্গি পার্টি। মুহূর্তের মধ্যে সখ্যতা গড়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয় এই চক্র। এমনকি গুমের অভিযোগও রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। ভয়ঙ্কর এই লুঙ্গি পার্টিকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় এই পার্টির সদস্যরা সক্রিয়। সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানা এলাকার এক কিশোর নিখোঁজ হওয়ার পর এই চক্রের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাধিক টিম। ইতিমধ্যে তাদের কয়েক জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শিগগিরই এই লুঙ্গি পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর, মহাখালী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ এলাকায় রয়েছে লুঙ্গি পার্টির তৎপরতা। প্রতিটি এলাকায় অন্তত পাঁচ-সাতজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ঢাকায় নতুন আসা বা তেমন সচেতন না এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে এই চক্র। বিশেষ করে তাদের শিকার হন শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। নানা কৌশলে অল্প সময়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে চক্রের যে কোনো সদস্য। কৌশল হিসেবে চা-সিগারেট, বাদাম খাওয়ানো হয়। কথায় কথায় জেনে নেয় টার্গেটকৃত ব্যক্তির পরিচয়। এভাবেই একসময় মোবাইলফোন নম্বর আদান প্রদান করা হয়। ফোন নম্বর সেভ করার নামে বা অন্য কোনো কৌশলে মোবাইলফোন হাতে নিয়ে কল ডাইভার্ট অপশন চালু করে দেয় চক্রের সদস্যের নম্বরে। তারপরই মূল ঘটনার শুরু। ওই ব্যক্তির ফোনে আসা আত্মীয়-স্বজনের কল রিসিভ করে জানানো হয় ভয়ঙ্কর সংবাদ। ‘তিনি আমাদের কাছে বন্দি। দ্রুত আমাদের কাছে টাকা পাঠান। নইলে মেরে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেব।’ এভাবেই হুমকি-ধমকি দিয়ে টাকা দাবি করা হয়। ধার-দেনা করে স্বজনরা টাকা পাঠান। কখনও কখনও স্বজনদের জানানো হয় ‘তিনি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। কথা বলতে পারবেন না। চিকিৎসা করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা পাঠান। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে কোনো কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে মিশন সফল করে লুঙ্গি পার্টি।

সূত্র জানিয়েছে, লুঙ্গি পার্টির সদস্যরা কখনও কখনও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে। কৌশলে ওষুধ সেবন করিয়ে অজ্ঞান করে নিজেদের আস্তানায় আটকে রাখে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে। তারপর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।
ট্রেন ফেল করা যাত্রী বা ঢাকায় নতুন আসা যাত্রীদের টার্গেট করে আশপাশে ছড়িয়ে থাকে চক্রের সদস্যরা। টার্গেট পূরণ করতে প্রথমে একজন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে পরে ভিন্ন পরিচয়ে যোগ দেয় অন্যরা।

গত ২২শে এপ্রিল মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটে এরকম একটি ঘটনা। আব্দুল্লাহ নামে এক কিশোর হারিয়ে যায় বাসস্ট্যান্ড থেকে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার কলমাকান্দা এলাকা থেকে অভিমান করে ঢাকায় আসে আব্দুল্লাহ। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লুঙ্গি পার্টির খপ্পরে পড়ে এই কিশোর। বাসস্ট্যান্ডে একা একা পায়চারি করছিল সে। দেখেই মনে হচ্ছিল ঢাকায় নতুন এসেছে। সঙ্গে কেউ নেই। বেশ কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করে লুঙ্গি পার্টির সদস্যরা। তারপরই তাকে টার্গেট করে তারা। লুঙ্গি পার্টির এক সদস্য তাকে ডেকে নিয়ে নানা কথা বলে। বিস্কুট খেতে দেয়। তারপর চা পান করায়।

নিখোঁজের আগের তথ্যগুলো তদন্ত করে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, চায়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে তাকে অজ্ঞান করে কোথাও আটকে রাখা হয়েছে। আব্দুল্লাহর স্বজনরা জানান, ওই দিন ফোনে আব্দুল্লাহর বাবার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে এক ব্যক্তি হুমকি দিয়েছে, টাকা না দিলে ছেলেকে আর কখনো ফিরে পাবেন না। তাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। আব্দুল্লাহর পিতা একজন দরিদ্র কৃষক। তিনি নিজের অক্ষমতার কথা জানান। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে ৫ হাজার টাকাও দেয়া কঠিন।

তারপর থেকে কিশোর আব্দুল্লাহর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে নেত্রকোনোর কলমাকান্দার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা কলমাকান্দার থানার উপ-পরিদর্শক আবদুর রব জানান, ডিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। ঢাকায় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা লুঙ্গি পার্টি হিসেবে পরিচিত। তবে এখনো আব্দুল্লাহর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ আব্দুল্লাহ নেত্রকোনো জেলার কলমাকান্দা থানার চারালকোনা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের পুত্র।