ঢাবি প্রতিনিধি;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অনুমোদনহীন সংগঠনগুলোর আধিপাত্য লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলছে। তারা প্রশাসন থেকে কোন ধরনের অনুমতি না নিয়েই টিএসসিতে কক্ষ দখল করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৩টি সংগঠনের অনুমোদন দেওয়া আছে। তাদেরকে প্রতি বছরের নির্ধারিত সময়ে বাজেট প্রদান করা হয়। কিন্তু এর বাইরে আরও ২৭টি সংগঠন আছে। যাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন অনুমোদন নেই। শুধু মৌখিকভাবে এসব সংগঠনগুলোকে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া আছে। কিন্তু এর বাইরে রয়েছে কিছু ভূঁইফোড় সংগঠন। যাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন ধরণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম ছাড়াই ফর্ম বিক্রি করে অবৈধ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আছে এসব সংগঠনগুলোর আশ্রয় দিচ্ছে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার । এসব সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃতি সংসদ, , মুক্তবাক, কণ্ঠস্বর, উদ্ভাসন, কথা আবৃতি চর্চা কেন্দ্র, সংবৃতা ইত্যাদি।
টিএসসি এলাকায় যাতায়াত করেন এমন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এ সব অবৈধ সংগঠনগুলোর অধিকাংশই টিএসসির নিচে বিভিন্ন সময় ফর্ম বিক্রি করে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন ধরণের ফর্ম বিক্রি করার অনুমতি না নিয়ে তারা এভাবে ফর্ম বিক্রি করে লক্ষ্যাধিক টাকা আয় করছেন।
এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো বিশ্ববিদ্যালয় আবৃতি সংসদ। গত কয়েকমাস আগে গঠিত হওয়া নবগঠিত এ সংগঠনটির বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। জানা যায়, তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে টিএসসির নিচে দিনের নির্ধারিত সময়ে ফর্ম বিক্রি করেন। এজন্য তারা প্রতিটি ফর্মের মূল্য পাঁচ টাকা করে নেন। অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবি, তাদের বাজেট দেওয়া হয়না তাই তারা ফর্ম বিক্রি করে টাকা আয় করেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে টিএসসিতে একটি রুম দখলেরও অভিযোগ উঠেছে। টিএসসির দ্বিতীয় তলায় একটি রুম দখলের পর টিএসসি কর্তৃপক্ষ পরে এই রুমটি সিলগালা করে দেয়। টিএসসির এই অবৈধ সংগঠনের ফর্ম বিক্রি করে টাকা আয় ও তাদের রুম দখলের পেছনে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদারের হাত আছে বলে জানা যায়। আসিফ তালুকদারও তাদের সহযোগিতার কথাও সাংবাদিকদের সঙ্গে একাধিকবার স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে আসিফ তালুকদার বলেন, তারা টিএসসিতে সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। ডাকসুর সাংস্কৃতি সম্পাদক হিসেবে এসব দেখা আমার দায়িত্ব। তবে আমি কোনো অবৈধ সংগঠনকে ইন্ধন দেই নাই।
যদিও ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংস্কৃতিক সম্পাদক টিএসসির একটি অবৈধ সংগঠন থেকে টাকা আয় ও রুম দখলের কাজে সমর্থন দিতে পারে না বলে একাধিক ডাকসুর অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন। তারা এই কাজে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ন‚র বলেন, ডাকসু একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এখানে অনেক প্রোগ্রাম, মিটিং হয়। এসব দায়িত্ব ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদকের। কিন্তু টিএসসি কেন্দ্রিক যেসব সংগঠন রয়েছে সেখানে ডাকসুর হস্তক্ষেপ করার কোন নিয়ম নেই। তারা তাদের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সম্পাদক যদি কোন হস্তক্ষেপ করে থাকে তবে আমরা ডাকসুর পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব। তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডাকসু ব্যবস্থা নিবে। অন্যদিকে, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা আছে- ‘সাংস্কৃতিক সম্পাদক স্বাভাবিক অবস্থায় নির্বাহী কমিটির ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতি সেশনে এক বা একাধিকবার সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।’ এছাড়া, টিএসসি কেন্দ্রিক অন্যান্য একাধিক সংগঠনের নেতারা আসিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ করেন। তারা বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে আসিফ তালুকদার বিভিন্ন সময় আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন। এর আগেও আসিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে টিএসসির মধ্যে ঢাবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের একটি প্রোগ্রামে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। পরে এসোসিয়েশনের নেতারা তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে তারা আসিফ তালুকদারের শাস্তিও চান।