ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




ফখরুলকে নিয়ে ধূম্রজাল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০১৯ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্য হিসেবে চারজন শপথ নিলেও বিরত থেকেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে রাজনৈতিক মহলে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও পুরো বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তারা।

যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, তার বিরত থাকা এবং বাকিদের শপথ নেয়া পুরো বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং দলীয় কৌশল। এরপর গত ৩ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের সমন্বয়ের অভাবে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার সমন্বয়ের অভাব। এই অভাব থেকে কর্মীদের মধ্যে, জনগণের মধ্যে নানা সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই যে প্রশ্ন উঠেছে, সবাই পার্লামেন্টে গেল মহাসচিব গেল না কেন? এটা আমার কাছেও খটকা লাগে, দলের সিদ্ধান্তে সবাই গেলে মহাসচিব যাবেন না কেন? আলাদা কারো ভালো থাকা বা আলাদা কারো হিরো হওয়ার সুযোগ নাই। তিনি কেন সংসদে যোগ দিলেন না নিশ্চয়ই সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন।’

বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তার ইঙ্গিত মিললো বগুড়া-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনের কথায়ও।

তিনি বলেন, ‘তিনি (মহাসচিব) কেন শপথ নেননি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘মহাসচিব শপথ নেননি, অন্যরা নিয়েছেন এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নেতাদের কেউ কেউ বলেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদের অনুমতি না দিলেও তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করত। সে কারণে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই দলে মহাসচিব থাকলে দলের মধ্যে ভাঙন বা আরও বিপর্যয় দেখা দিত। সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক বা বেঠিক হয়েছে তা সময়ই বলে দেবে।’

মহাসচিব শপথ গ্রহণ না করায় সন্তোষ প্রকাশ করে দলটির কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী হয়েছে এটা দেশ-বিদেশের সবাই জানে। নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে তো মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা সংসদে যেতে পারেন না। তিনি সংসদে গেলে বিএনপির নৈতিক অবস্থান থাকে না। এই নির্বাচনে তথাকথিত জয়লাভ করে দলের যারা সংসদে গেছেন তারা জাতীয় পর্যায়ের কেউ নয়। তারা সংসদে যাওয়া এবং মহাসচিবের না যাওয়া দলের সিদ্ধান্ত সময়পোযোগী।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের জন্য যে স্যাকরিফাইস করলেন তা শুধু বিএনপি নয় গোটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে দলের অন্য সিনিয়র কোনো নেতা হলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যেত বলে আমি বিশ্বাস করি না। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জায়গায় অন্য কেউ হলে তিনিও শপথ নিতেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রায় হাজার নেতার নামের আগে বিভিন্ন ধরনের বিশেষণ থাকলেও একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামের আগে প্রায় প্রত্যেক নেতাকর্মীই বলেন- পরিচ্ছন্ন নেতা মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না গ্রহণ না করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা কটাক্ষ করে বলেছেন, মহাসচিব পদ হারাতে হবে এজন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেননি।

অন্যদিকে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তাতে এই প্রথম একজন প্রার্থী বিজয়ী হবার পরে সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন না। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংসদের যে কোনো ইতিহাস লেখা হলে এই বিষয় উল্লেখ থাকবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কারণেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে আলোচিত হবেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ এবং সঠিকতা নিয়ে মতভিন্নতা থাকবে, এর ফল নিয়ে অনেক কথা এখনও বাকি রয়ে গেছে। তবে বাস্তবতার নিরিখে নৈর্ব্যক্তিকভাবে বিবেচনা করলে এই বিষয়টি মোটেই এড়ানো যাবে না।’

চারজনের শপথ নেয়া এবং একজনের শপথ থেকে বিরত থাকা নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি নেই।’

গয়েশ্চর চন্দ্র রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘তার বক্তব্যের আভিধানিক অর্থ একটা, মূল অর্থ একটা। তিনি মূলত দলীয় সিদ্ধান্তের কথাই বলেছেন।’

সার্বিকভাবে এ বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনি যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন এটা নীতি নির্ধারণী ফোরামের কেউ বা দলের মুখপাত্র বলতে পারবেন। আমি নীতি নির্ধারণী ফোরামের কেউ নই। সুতরাং এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ফখরুলকে নিয়ে ধূম্রজাল

আপডেট সময় : ১১:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক;

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্য হিসেবে চারজন শপথ নিলেও বিরত থেকেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে রাজনৈতিক মহলে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও পুরো বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তারা।

যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, তার বিরত থাকা এবং বাকিদের শপথ নেয়া পুরো বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং দলীয় কৌশল। এরপর গত ৩ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের সমন্বয়ের অভাবে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার সমন্বয়ের অভাব। এই অভাব থেকে কর্মীদের মধ্যে, জনগণের মধ্যে নানা সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই যে প্রশ্ন উঠেছে, সবাই পার্লামেন্টে গেল মহাসচিব গেল না কেন? এটা আমার কাছেও খটকা লাগে, দলের সিদ্ধান্তে সবাই গেলে মহাসচিব যাবেন না কেন? আলাদা কারো ভালো থাকা বা আলাদা কারো হিরো হওয়ার সুযোগ নাই। তিনি কেন সংসদে যোগ দিলেন না নিশ্চয়ই সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন।’

বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তার ইঙ্গিত মিললো বগুড়া-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনের কথায়ও।

তিনি বলেন, ‘তিনি (মহাসচিব) কেন শপথ নেননি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘মহাসচিব শপথ নেননি, অন্যরা নিয়েছেন এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নেতাদের কেউ কেউ বলেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদের অনুমতি না দিলেও তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করত। সে কারণে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই দলে মহাসচিব থাকলে দলের মধ্যে ভাঙন বা আরও বিপর্যয় দেখা দিত। সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক বা বেঠিক হয়েছে তা সময়ই বলে দেবে।’

মহাসচিব শপথ গ্রহণ না করায় সন্তোষ প্রকাশ করে দলটির কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী হয়েছে এটা দেশ-বিদেশের সবাই জানে। নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে তো মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা সংসদে যেতে পারেন না। তিনি সংসদে গেলে বিএনপির নৈতিক অবস্থান থাকে না। এই নির্বাচনে তথাকথিত জয়লাভ করে দলের যারা সংসদে গেছেন তারা জাতীয় পর্যায়ের কেউ নয়। তারা সংসদে যাওয়া এবং মহাসচিবের না যাওয়া দলের সিদ্ধান্ত সময়পোযোগী।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের জন্য যে স্যাকরিফাইস করলেন তা শুধু বিএনপি নয় গোটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে দলের অন্য সিনিয়র কোনো নেতা হলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যেত বলে আমি বিশ্বাস করি না। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জায়গায় অন্য কেউ হলে তিনিও শপথ নিতেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রায় হাজার নেতার নামের আগে বিভিন্ন ধরনের বিশেষণ থাকলেও একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামের আগে প্রায় প্রত্যেক নেতাকর্মীই বলেন- পরিচ্ছন্ন নেতা মির্জা ফখরল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না গ্রহণ না করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা কটাক্ষ করে বলেছেন, মহাসচিব পদ হারাতে হবে এজন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেননি।

অন্যদিকে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তাতে এই প্রথম একজন প্রার্থী বিজয়ী হবার পরে সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন না। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংসদের যে কোনো ইতিহাস লেখা হলে এই বিষয় উল্লেখ থাকবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কারণেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে আলোচিত হবেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ এবং সঠিকতা নিয়ে মতভিন্নতা থাকবে, এর ফল নিয়ে অনেক কথা এখনও বাকি রয়ে গেছে। তবে বাস্তবতার নিরিখে নৈর্ব্যক্তিকভাবে বিবেচনা করলে এই বিষয়টি মোটেই এড়ানো যাবে না।’

চারজনের শপথ নেয়া এবং একজনের শপথ থেকে বিরত থাকা নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি নেই।’

গয়েশ্চর চন্দ্র রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘তার বক্তব্যের আভিধানিক অর্থ একটা, মূল অর্থ একটা। তিনি মূলত দলীয় সিদ্ধান্তের কথাই বলেছেন।’

সার্বিকভাবে এ বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনি যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন এটা নীতি নির্ধারণী ফোরামের কেউ বা দলের মুখপাত্র বলতে পারবেন। আমি নীতি নির্ধারণী ফোরামের কেউ নই। সুতরাং এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’