হাসপাতালে ঢুকে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি ছাত্রলীগ নেতার
- আপডেট সময় : ০৪:৫১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০১৯ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক |
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে দায়িত্বরত নারী চিকিৎসক ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এমনকি ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে চিকিৎসকদের হত্যা ও ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে এসে কর্মবিরতি পালন করেছেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তারা কাজে যোগ দেন।
জানা যায়, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের অনুসারী সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী চিকিৎসা নিতে গিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। সারোয়ার ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে তাদের হত্যা ও ধর্ষণেরও হুমকি দেন।
নিজের ফেসবুক পোস্টে ডা. নাজিফা আনজুম নিশাত নামের একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক বলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুরোধে আমি রোগী দেখতে যাই। গিয়ে দেখি রোগীর সঙ্গে আরও ১৫/১৬ জন রয়েছেন। তখন একজন বাদে বাকিদের বেরিয়ে যেতে বলি। কিন্তু জবাবে তারা বলেন, ‘তোমার এমডিকে আমি কানধরে এনে দাঁড় করাবো। কর ট্রিটমেন্ট।’
‘আমি তখন বললাম, কি বললেন আপনি? সে বললো, (আঙুল উঁচিয়ে), কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই-তোকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে সিএ, আইএমও রুমে গিয়ে ভাইয়া-আপুদের ঘটনা জানাই।
তারপর সেই ছেলে আমার পেছন পেছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলল- তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো।…বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো। আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো. ..।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সারোয়ার বলেন, ‘আমার এক বন্ধুর পেটে ব্যথা উঠেছিল, অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা মনে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ২০/২৫ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক পত্রিকা পড়ছিলেন। কিন্তু রোগী দেখতে আসেননি।’
তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বলেছিলাম, বন্ধুর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমাদের মন চাইছিল না, তাকে চিকিৎসা না দিয়ে চলে আসি। তখন চিকিৎসকরা বললেন- আমরা বের না হলে তারা চিকিৎসা করবেন না।’
‘আমরা বলছিলাম, আমরা চলে যাচ্ছি, আপনার চিকিৎসা করেন। তখন ডাক্টাররা উত্তেজিত হয়ে বলেন- শেখ হাসিনা আসলেও আমরা বের না হলে তারা চিকিৎসা করবেন না। তখন আমার রাগ উঠে গেছে। আমি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসার জন্য ফোন দিয়েছিল। আমরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টা মিটমাট করে নেব।’
এ ব্যাপারে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হোসেন বলেন- ‘তারা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করেছেন। আমরা তো তা করতে পারি না। চিকিৎসাসেবাও বন্ধ রাখতে পারি না। এটা মেনে নিয়েই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
ফেসবুকে ডা. নাজিফা আনজুম নিশাতের পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হল-
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের আজকে দুপুরের ঘটনা। ইউরোলজির এক প্যাশেন্ট আসলো। ডিউটি ডাক্তার এর অনুরোধে আমি গেলাম পেশেন্ট রিসিভ করতে। কারণ আমার এডমিশন ছিল। গিয়ে দেখি প্রায় ১৫/১৬ জন ছেলে সাথে আছে। পেশেন্ট এর হিস্ট্রি নিতে নিতে খুব বিনয়ের সাথে বললাম, আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান।
একজন বললেন, আমাদের সামনেই ট্রিটমেন্ট দেন। আমি বললাম, পেশেন্ট কে এক্সপোজ করতে হবে। আর হসপিটালের তো একটা প্রটোকল আছে। তারা বললেন তারা সবাই থাকবেন এবং সবার সামনেই আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে।
তারপর এদের মধ্যে একজন এর অনুরোধে বাকিরা বেরিয়ে গেলেন। তিনজন দাড়িয়ে থাকলেন। পেশেন্ট কে এক্সামিন করতে করতে আবার মানুষ ঢোকা শুরু করলো। আমি তখন বললাম, “দেখুন আপনাদের আমি বারবার বলেছি আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান।”
যথেষ্ট বিনয়ের সাথে। তখন এদের মধ্যে সরোয়ার নামের একজন বললো, “তোমার এমডিকে আমি কানধরে এনে দাড় করাবো। কর ট্রিটমেন্ট”।
আমি তখন বললাম, কি বললেন আপনি? সে বললো, (আগুল উচিয়ে) “কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও”।
আমি বললাম, “দেখেন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির জন্য যে ট্রিটমেন্ট, আপনার পেশেন্টের জন্যও একই ট্রিটমেন্ট। সবাইকে আমরা একই ভাবে চিকিৎসা দেই। এবং সবার জন্য একই নিয়ম। সুতরাং আপনাদের বের হতে হবে।”
এরমধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে CA, IMO রুমে গিয়ে ভাইয়া, আপুদের ঘটনা জানাই। তারপর সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে, তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো। বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো।আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো. ..
আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর সি এ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে। তার গালাগালির ভিডিও ও আছে। এই হল একজন ডিউটি ডক্টর এর নিরাপত্তার অবস্থা। আমরাও রোজা রাখি। আমাদেরও ক্লান্তি হয়, ক্ষুধা লাগে। কিন্তু পেশেন্টের প্রতি এসবের কোন আঁচ পরতে দেইনা। এত ঘটনার মধ্যেও সেই পেশেন্টের কাগজপত্র শক্ত করে আমার হাতে ধরা ছিল। তার ট্রিটমেন্ট ও দেয়া হয়েছে। যদিও তারা পরে DORB নিয়ে চলে যায়। কোথায় আমাদের নিরাপত্তা? রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে আমরা কতকাল জিম্মি থাকব???
বি: দ্র: স্ট্যাটাসের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
https://youtu.be/ZvaYFM3Z-_Q