ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে ‘ধন্যবাদ’
- আপডেট সময় : ০৯:৫০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৯ ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
ফুটওভার ব্রিজ পার হওয়ার ঠিক আগ মুুহূর্তে সামান্য পরিশ্রম থেকে গা বাঁচিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হবার জন্য সঙ্গে থাকা বন্ধু বলল, “ধুর! আমরা বরং নিচ দিয়েই যাই, উপর দিয়ে যেতে বিরক্ত লাগে।”
আর ওই সময় আমার চোখ আটকে গেল বড় করে ধন্যবাদ লেখা একটি সাইনবোর্ডে। তর্জনি উঁচিয়ে তাকে বললাম, “এইসব ধন্যবাদ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জমা করে রাখতে হবে।”
আরেকদিন ওই একই ফুটওভার ব্রিজে উঠতে উঠতে আরেক বন্ধুকে বললাম, “এই যে আমরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছি, আমাদের সন্তানরাও করবে আশা রাখি।”
সড়ক দুর্ঘটনার চালকদের দোষের পাশাপাশি পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা না করা নিয়েও বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমরা সাধারণ মানুষ এতদিন ভাবতাম, শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খুব একটা আন্তরিক নন পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা আনতে আর নিয়ম মানতে বাধ্য করতে। চলতি বছরের ট্রাফিক সপ্তাহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাস্তায় নামানো হয়েছিল স্কাউট। এই স্কাউটের কাজ দেখে আমাদের চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে, আমি উপলব্ধি করতে পারছি রাস্তায় অনিয়মের জন্য পথচারীরাও অনেকাংশে দায়ী।
রাস্তায় পুলিশ সামান্য পয়সার বিনিময়ে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অপরাধের শাস্তি থেকে মুক্ত করে দেন – এমন একটা বদনাম আছে পুলিশের নামে। আমার দৃষ্টিতে, সাধারণ মানুষ যদি পুলিশকে এমন সুযোগ না করে দেয় তবে পুলিশের দ্বারা কী এমন দুর্নীতি করা সম্ভব? পুলিশের সদস্যরাও কিন্তু সাধারণ মানুষের কাতারেরই একজন। গাড়ি চালক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সৎ হতে হবে এমন প্রত্যাশা করা যেতে পারে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে পথচারীকেও দায়িত্বের পরিচয় দিতে হবে।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে মোবাইল কোর্ট বসানো হয়, অনেককেই জরিমানা করা হয়। এটা ভাল উদ্যোগ। তবে আমাদের এটাও খুঁজে দেখা জরুরি কেন মানুষ ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহার করতে চাইছে না।
অনেকের মতামত জেনেছি এ নিয়ে। কেউ বলছেন এইসব ব্রিজগুলো সঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। অনেকে বলছেন ব্রিজগুলো, ভিক্ষুক, হকার ও নেশাখোরদের দখলে থাকে। কিন্তু এটাও সত্য যে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। হকারদের দখল থেকে অনেক ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ মুক্ত করা গেছে।
এক সময় ঢাকা শহরের প্রতিটি রাস্তায় হেঁটে পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা ছিল, যা আজও আছে। পথচারীদের একটু বেশি সুযোগ দেওয়ার জন্য কয়েক বছরের ব্যবধানে অনেক স্পটে জেব্রা ক্রসিং তুলে দিয়ে স্থাপন করা হয় ফুটওভার ব্রিজ। এগুলো প্রায় দুই-তিনতলা ভবনের সমান উঁচু বলে ওঠা-নামার কষ্ট করতে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেন।
এই জ্যামের শহরে, রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে হাঁটার পর সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠার শারীরিক শক্তি অনেকরই থাকে না। এছাড়া অসুস্থ, বৃদ্ধ, শারিরীক প্রতিবন্ধী, হৃদরোগী, গর্ভবতী মহিলা, শিশু, মালামালসহ পথচারীর জন্য এই উচ্চতা পাড়ি দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও সঠিক নয় এবং অসম্ভবও।
আবার দেখা যায় পাবলিক বাসগুলোর স্টপেজের কারণেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার এড়িয়ে চলেন অনেকে। যেখানে রাস্তা পার হলেই বাস ধরা যায় সেখানে ব্রিজ পার হতে গেলে যেমন সময় লাগে বেশি তেমনি দূরত্বও বেড়ে যায়। পথচারীতে নিরুৎসাহিত করতে সিটি কর্পোরেশন অবশ্য লোহার বা স্টিলের গ্রিল বেড়া বা ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু ওই বেড়াও যেন আমাদের আটকে রাখতে পারছেনা যে, নিয়মানুবর্তিতার প্রশ্নে আমরা এতটা অধৈর্য।
বিতর্ক কিংবা আলোচনা-সমালোচনা কোনো সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারলেও অনেক সময় সমাধান এনে দিতে অপারগ। অসচেতনতা বা নিজেদের জাগ্রত বিবেককে উল্টো করে রেখে কখনোই একটি সুস্থ বা সুষ্ঠু ভবিষ্যৎ আশা করা যায় না। আমাদের মানসিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখান থেকে ভাল কিছু আশা করতে গেলে সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি আইনের বাস্তব প্রয়োগ থাকতে হবে।
ফুটওভার ব্রিজ না কি জেব্রা ক্রসিং – কোনটি বেশি উপযুক্ত সেটি নিয়ে প্রশ্ন রাখলে আমি বলব, দুটিরই দরকার আছে। এমনকি যেখানে ফুটওভার ব্রিজ আছে সেখানেও জেব্রা ক্রসিং থাকতে পারে তবে তা শুধুমাত্র অসুস্থ্য কিংবা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য হতে হবে।
আসলে ফুটওভার ব্রিজের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করা খুব জটিল বিষয় নয়, কর্তৃপক্ষও ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার শুধুমাত্র নিজের জন্যই নয়; একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং সচেতন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেতে আমাদেরও আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। এরই একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে যেখানে ফুটওভার ব্রিজ আছে সেখানে ফুটওভার ব্রিজ দিয়েই রাস্তা পার হওয়া।