বিয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারীরা

- আপডেট সময় : ০৭:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯ ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক;
বিয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নারীরা। বিপদসংকুল পাহাড়, নদী ও সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে এসব নারীদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছিয়ে দিচ্ছে মানবপাচারকারীরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা নারী পাচারের এমন দৃশ্য। মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে সেখানে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের।
২০১৭ সালে আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হওয়া দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ কক্সবাজারের টেকনাফের একাধিক আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নেয়। এখানকার কুতুপালং এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
এ শিবির থেকেই নারী পাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে। শরণার্থী শিবিরে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতা ভোগে নারীরা। প্লাস্টিক ও বাঁশের তৈরি ঘরে তাদের গোপনীয়তাও রক্ষা হয় না ঠিকঠাক মতো।
রোহিঙ্গা বিষয়ক অধিকার সংগঠকেরা আলজাজিরাকে জানায়, মালয়েশিয়ায় আগ থেকেই অবস্থানরত রোহিঙ্গা পুরুষদের বিয়ের জন্য শরণার্থী শিবির থেকে নিয়মিত নারী পাচার হচ্ছে। গত এক বছরে শতাধিক নারী পাচার হয়ে গেছে বলে তারা জানান।
শরণার্থী শিবির থেকে বের করে আনা থেকে শুরু করে ভারত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সড়কপথে বা নৌপথে মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসা, এমনকি জায়গামতো পৌঁছে দেওয়ার জন্য একাধিকবার গাড়ি ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ বহন করে বিবাহ ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা। কারণ সেখানকার স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে শরণার্থী শিবিরের নারীদের এমন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
সেনওয়ারা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, এক মানবপাচারকারীর মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ায় আসেন। দুই সপ্তাহের পাহাড়, নদী, সড়কপথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি।
২৩ বছরের এ তরুণী জানান, সম্পূর্ণ অচেনা এক রোহিঙ্গাকে বিয়ে করতেই তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, “শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আমরা হেঁটে ভারত সীমান্ত পাড়ি দিই। কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করে আমরা শেষমেশ মালয়েশিয়ায় ঢুকি। আমার সঙ্গে আরেকটি মেয়ে ছিল। আমাদের দুজনের সঙ্গে ছিল একজন পাচারকারী।”
তিনি বলেন, “এ সময় আমি অনেক আতঙ্কে ছিলাম। আমি শুনেছি পাচারকারীরা অনেক মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। তাই আমি খুব ভীত ছিলাম।”
মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের গবেষক জন কুইনলি বলেন, “সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ এবং ভারত দিয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছার একটি রুট ব্যবহার করছে মানবপাচারকারীরা। এর জন্য তারা কয়েকবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্ত ব্যবহার করে অবৈধপথে ঢুকে পড়ছে মালয়েশিয়ায়।”
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই। তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত নয়। এর মধ্যে নোয়াখালী দ্বীপে স্থানান্তর করছে বাংলাদেশ সরকার, যাতে তারা ভীত। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ঝোঁক বেশি। এতে নারী ও শিশুদের সংখ্যাও কম নয়। মেয়েদের মালয়েশিয়াতেই বিয়ে দিতে চায় রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। অনেকেই আবার শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়েরও।”
এদিকে মালয়েশিয়ায় স্বামীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন কিছু ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে ফোর্টিফাই রাইটস। তাদের সঙ্গে কাজ করা রোহিঙ্গা উইম্যানস ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক পরিচালিত এক গবেষণা দেখা গেছে, বিয়ের পর অনেক অনেক নারীই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। তাদের কোনো কাজেও যেতে দেওয়া হয় না। পড়াশোনাও করতে দেওয়া হয় না।
কুইনলি জানান, বাল্যবিয়ে হওয়া এমন অল্প বয়সী রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। গৃহবন্দী হয়ে দাসত্বের মতো তাদের জীবন যাপন করতে হয় তাদের।
তিনি বলেন, “এক রোহিঙ্গা মেয়ে আমাকে বলে, এমন অল্পবয়সে সে বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না।”