নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৯৭১ সালের এদিন রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের বেশির ভাগ জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। ঢাকায় চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। চলছে কারফিউ আর ব্ল্যাক আউট। মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় ঢাকা রেডিওকেন্দ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয় ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর।
একাত্তরের এদিন ময়মনসিংহ শহরে পাক হানাদার বাহিনী ডাকবাংলো, কোওয়াটখালি, বড়বাজার, নিউমার্কেট, কালীবাড়ি ও সাহেব আলি রোড এলাকায় বহু নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করে। দিবাগত রাতে দৈনিক ইত্তেফাকের বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, পিপিআই সংবাদ সংস্থার প্রধান সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন সৈয়দ নাজমুল হককে আলবদর-আলশামস বাহিনীর খুনিরা তাদের বাসা থেকে অপহরণ করে। এরপর এ তিনজনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
হেলিকপ্টার এবং স্টিমারে মেঘনা নদী পেরিয়ে মিত্র বাহিনী ভৈরব বাজারে ঘাঁটি থেকে সোজা ঢাকার দিকে এগোচ্ছিল। সম্মিলিত বাহিনীর গোলার মুখে পাক হানাদার বাহিনী মেঘনার তীরে তাদের অগ্রগতি রোধ করতে পারেনি। বাইরে থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা যাতে ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য নদীপথে তাদের যতগুলো স্টিমার-গানবোট এগোনোর চেষ্টা করেছে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় সেসবের সলিল সমাধি হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করে। তার এ গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজি নিজ দুর্বলতা ঢাকার জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন, ‘কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা-আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।’
অন্যদিকে মিত্র বাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটা জাহাজ ভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে।
সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।