ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ছড়ানো গুজবে সয়লাব Logo সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে Logo জবিতে আজীবন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo শাবিতে হল প্রশাসনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নোটিসে জোর পূর্বক সাইন আদায় Logo এবার সামনে আসছে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের মারধরের আরো ঘটনা Logo আবাসিক হল ছাড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা Logo নিরাপত্তার স্বার্থে শাবি শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড সাথে রাখার আহবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের Logo জনস্বাস্থ্যের প্রধান সাধুর যত অসাধু কর্ম: দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ! Logo বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখা যুগ্ম পরিচালক আলমগীরের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য  Logo রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটনকে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে নিন্দা ও প্রতিবাদ




মাছ, মাংস, সবজির বাজারে চরম অস্বস্তি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯ ১০৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;

• গরুর মাংসের কেজি ৫৭০ টাকা
• দেশি মুরগির কেজি ৫৫০ টাকা
• ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫৫-১৬০
• মাছের বাজারেও রয়েছে অস্বস্তি
• অস্বস্তিতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের

রাতে সেহেরি খেতে হবে। তাই রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাজারে গতকাল সোমবার ছিল মানুষের ব্যাপক ভিড়। বাজারে ঢুকতেই মাংসের দোকান। মাংস বিক্রেতারা আগের মতো ‘আসেন স্যার, আসেন স্যার’ বলে কদর করছেন না। জানতে চাইলে গরুর মাংসের দর হাঁকা হলো প্রতি কেজি ৫৭০ টাকা। এক মাস আগে একই বাজারে যা ছিল ৫০০ টাকা। যদিও পবিত্র রমজান উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্ধারিত গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা।

মাংসের দোকানের উল্টো পাশে মুরগির দোকান। দেশি মুরগির প্রতি কেজি দর ৫৫০ টাকা চাইলেন বিক্রেতা। এটাও এক মাস আগের চেয়ে ১০০ টাকা বাড়তি। ফার্মের কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে, যা সাধারণত ২৩০ টাকার মধ্যে থাকে। ব্রয়লার মুরগির দর শবে বরাতের আগে প্রতি কেজি ৩০ টাকা বেড়ে ১৬৫ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা কমে ১৪০–১৪৫ টাকায় নামে। গতকাল ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫৫–১৬০ টাকায় উঠেছে।

স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। শাকসবজির বাড়তি দর। চিনির দাম সামান্য বেড়েছে। ডালের দামও কিছুটা বাড়তি। অবশ্য ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম নিয়ে হইচই নেই। তবে সব মিলিয়ে রোজায় বাজারদর নিয়ে স্বস্তি নেই নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের।

মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে মাছের দোকানে তিন কেজি ওজনের পদ্মার বোয়ালের প্রতি কেজি দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। মাঝারি ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০। নদীর কুঁচে চিংড়িও ১ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করতে রাজি নন বিক্রেতারা। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজির মাছের মধ্যে আছে বাইন, চাষের চিংড়ি, টাটকিনি, ফলি, সরপুঁটি ইত্যাদি।

রুই–কাতলা বরং সাশ্রয়ী। দুই কেজি আকারের জীবন্ত রুইয়ের দর ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় উঠেছে। যে তেলাপিয়া ১৮০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটা ২৫০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। চাষের পাঙাশও এখন ১৮০ টাকা, দর বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মতো।

নদীর বেলে মাছগুলোর আকার মোটামুটি বড়। তাজা, যেন এইমাত্র ধরে আনা হয়েছে। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে বোয়াল, বাছা, কাজলী, চিংড়ি, আইড়, বাতাসী ইত্যাদি মাছও রয়েছে। প্রতি কেজি দর ১ হাজার টাকা থেকে শুরু। কিন্তু দাম এত বেশি যে বেশির ভাগ ক্রেতাই সামনে হাঁটা দিচ্ছিলেন।

রোজার আগের দিন বলেই কি এত দাম? মাছ বিক্রেতা মো. মাসুম বললেন, তিন–চার দিন ধরেই এমন চলছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়তি।

রোজার জরুরি পণ্য শসা ও কাঁচা মরিচ। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে হাইব্রিড শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেল, কয়েক দিন আগেও যা ৩০ টাকা ছিল। সেখানে কাঁচা মরিচের দর কেজিতে ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০–১২০ টাকায় উঠেছে। লম্বা বেগুনের দর প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা। বাকি সবজির বেশির ভাগ ৬০–৮০ টাকা কেজি।

বেগুনবাড়ি থেকে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাক রান্নার জন্য তাঁর স্ত্রী কুঁচে চিংড়ি নিতে বলেছিলেন। শাক, চিংড়ি—কোনোটাই কেনেননি। তিনি বলেন, লাউশাকের মুঠি ৫০ টাকা। কুঁচে চিংড়ি ৭০০ টাকা কেজি। অথচ ধানের মণ ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়–ব্যয় জরিপের ২০১৬ প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ধনীদের আয় বেড়েছে। বিপরীতে একেবারে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। এসব পরিসংখ্যানের বাস্তবতা বাজারে গেলে টের পাওয়া যায়। হাজার টাকা কেজির মাছ যেমন অবিক্রীত থাকে না, তেমনি মুরগির ফেলে দেওয়া পা, মাথা, কলিজা–গিলার বাজারও জমজমাট। কারওয়ান বাজারে এসবের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘একশ্রেণির ক্রেতা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ওনারা সম্পদশালী মানুষ, সেটা বৈধ-অবৈধ যে উপায়েই অর্জিত হোক। দর–কষাকষি না করলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পান।’ তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষেরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মাছ, মাংস, সবজির বাজারে চরম অস্বস্তি

আপডেট সময় : ১২:২৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক;

• গরুর মাংসের কেজি ৫৭০ টাকা
• দেশি মুরগির কেজি ৫৫০ টাকা
• ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫৫-১৬০
• মাছের বাজারেও রয়েছে অস্বস্তি
• অস্বস্তিতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের

রাতে সেহেরি খেতে হবে। তাই রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাজারে গতকাল সোমবার ছিল মানুষের ব্যাপক ভিড়। বাজারে ঢুকতেই মাংসের দোকান। মাংস বিক্রেতারা আগের মতো ‘আসেন স্যার, আসেন স্যার’ বলে কদর করছেন না। জানতে চাইলে গরুর মাংসের দর হাঁকা হলো প্রতি কেজি ৫৭০ টাকা। এক মাস আগে একই বাজারে যা ছিল ৫০০ টাকা। যদিও পবিত্র রমজান উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্ধারিত গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা।

মাংসের দোকানের উল্টো পাশে মুরগির দোকান। দেশি মুরগির প্রতি কেজি দর ৫৫০ টাকা চাইলেন বিক্রেতা। এটাও এক মাস আগের চেয়ে ১০০ টাকা বাড়তি। ফার্মের কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে, যা সাধারণত ২৩০ টাকার মধ্যে থাকে। ব্রয়লার মুরগির দর শবে বরাতের আগে প্রতি কেজি ৩০ টাকা বেড়ে ১৬৫ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা কমে ১৪০–১৪৫ টাকায় নামে। গতকাল ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫৫–১৬০ টাকায় উঠেছে।

স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। শাকসবজির বাড়তি দর। চিনির দাম সামান্য বেড়েছে। ডালের দামও কিছুটা বাড়তি। অবশ্য ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম নিয়ে হইচই নেই। তবে সব মিলিয়ে রোজায় বাজারদর নিয়ে স্বস্তি নেই নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের।

মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে মাছের দোকানে তিন কেজি ওজনের পদ্মার বোয়ালের প্রতি কেজি দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। মাঝারি ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০। নদীর কুঁচে চিংড়িও ১ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করতে রাজি নন বিক্রেতারা। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজির মাছের মধ্যে আছে বাইন, চাষের চিংড়ি, টাটকিনি, ফলি, সরপুঁটি ইত্যাদি।

রুই–কাতলা বরং সাশ্রয়ী। দুই কেজি আকারের জীবন্ত রুইয়ের দর ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় উঠেছে। যে তেলাপিয়া ১৮০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটা ২৫০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। চাষের পাঙাশও এখন ১৮০ টাকা, দর বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মতো।

নদীর বেলে মাছগুলোর আকার মোটামুটি বড়। তাজা, যেন এইমাত্র ধরে আনা হয়েছে। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে বোয়াল, বাছা, কাজলী, চিংড়ি, আইড়, বাতাসী ইত্যাদি মাছও রয়েছে। প্রতি কেজি দর ১ হাজার টাকা থেকে শুরু। কিন্তু দাম এত বেশি যে বেশির ভাগ ক্রেতাই সামনে হাঁটা দিচ্ছিলেন।

রোজার আগের দিন বলেই কি এত দাম? মাছ বিক্রেতা মো. মাসুম বললেন, তিন–চার দিন ধরেই এমন চলছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়তি।

রোজার জরুরি পণ্য শসা ও কাঁচা মরিচ। ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে হাইব্রিড শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেল, কয়েক দিন আগেও যা ৩০ টাকা ছিল। সেখানে কাঁচা মরিচের দর কেজিতে ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০–১২০ টাকায় উঠেছে। লম্বা বেগুনের দর প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা। বাকি সবজির বেশির ভাগ ৬০–৮০ টাকা কেজি।

বেগুনবাড়ি থেকে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাক রান্নার জন্য তাঁর স্ত্রী কুঁচে চিংড়ি নিতে বলেছিলেন। শাক, চিংড়ি—কোনোটাই কেনেননি। তিনি বলেন, লাউশাকের মুঠি ৫০ টাকা। কুঁচে চিংড়ি ৭০০ টাকা কেজি। অথচ ধানের মণ ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়–ব্যয় জরিপের ২০১৬ প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ধনীদের আয় বেড়েছে। বিপরীতে একেবারে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। এসব পরিসংখ্যানের বাস্তবতা বাজারে গেলে টের পাওয়া যায়। হাজার টাকা কেজির মাছ যেমন অবিক্রীত থাকে না, তেমনি মুরগির ফেলে দেওয়া পা, মাথা, কলিজা–গিলার বাজারও জমজমাট। কারওয়ান বাজারে এসবের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘একশ্রেণির ক্রেতা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ওনারা সম্পদশালী মানুষ, সেটা বৈধ-অবৈধ যে উপায়েই অর্জিত হোক। দর–কষাকষি না করলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পান।’ তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষেরা।