নিজস্ব প্রতিবেদক;
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বরিশালে এক হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৯ হাজার ৫৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে , বরিশালে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ৭৬ কিলোমিটার। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বাতাস শুরু হয়। রাত আড়াইটার দিকে ৭৬ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও বরিশালে থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফনীর প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় টানা তৃতীয় দিনের মতো বরিশাল নদীবন্দরসহ সারা দেশে সকল ধরনের নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশালের উজিরপুরের সাতলা-বাঁগধা এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীতে পানির স্তর ছিলো ১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। আজ শনিবার তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার। তবে পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা শাখার উপ-পরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বরিশালসহ দেশের সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, ফণী মোকাবেলায় সব ধরনের সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঝোড়ো হাওয়ায় জেলার ১ হাজার ১৫টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৯ হাজার ৫৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৬৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষণিক তা মেরামত করা হয়। এছাড়া সাতলা-বাগধা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে শিবপুর পয়েন্টে ২০ মিটার সামান্য ক্ষতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা হয়েছে। ঝড়ে কোনো গবাদি পশুর মারা যাওয়া খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, ৩৩১টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ হাজার ৫৬৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন সাইক্লোন শেল্টারে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ঘূণিঝড় ফণীতে বরিশাল জেলায় কম ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস জানান, বরিশাল বিভাগের বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে দুইজন এবং ভোলা সদরে একজনসহ মোট তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তায় দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বেরিবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় হয়নি । ঘূর্ণিঝড় ফণী পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলেও তিনি জানান।