জে রহমান; ডিএমপি খিলগাঁও জোনের সেই ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, দাপুটে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নাদিয়া জুঁইকে রাজধানী থেকে ৭০০ কিলোমিটার অদুরে রংপুর তার কুকীর্তি’র দায়ে বদলী করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও মাদক সম্রাটদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে নিজে অবৈধভাবে টাকা রোজগার করা। বাছাইকৃত দারোগাদের মাধ্যমে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সাধারণ মানুষকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে জেল হাজতে পাঠানোসহ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল এ নারী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চিহ্নিত অপরাধীদের কাছ থেকে দামি জিনিসপত্র উপঢৌকন গ্রহনের ব্যাপারে আলোচনা-সমালোচনায় চরম বিতর্কিত দাপুটে এসি নাদিয়া জুঁইকে অবশেষে খিলগাঁও ছাড়তে হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ নির্দেশে তাকে শুধু কিলগাঁও জোন নয় ডিএমপি ঢাকা ছেড়ে রংপুর যেতে হয়েছে। “দুষ্টের লালনকারী আর শিস্টের দমনকারী” ভয়ঙ্কর এক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খিলগাঁও এলাকায় সবার মাঝে পরিচিত লাভ করেন। চিহ্নিত মাদক ডিলার, পাইকারী মাদক বিক্রেতারা হয়ে উঠেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু ডিএমপি’র কতিপয় সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার বিশেষ আনুকুল্য পাওয়ায় এসি নাদিয়া জুঁই আরো বেশি বেপরোয়া হয়েও থাকতেন ধরাছোয়ার বাহিরে। তার সখ্যতা পাওয়া মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সম্রাটরা কয়েক মাসের মধ্যে গোটা খিলগাঁও, রামপুরা থানা এলাকা মাদক সম্রাজ্যে পরিনত করে সেখানে ৫০ এর উপরে স্পটে তিন শতাধিক পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীরা খোলামেলা ও বাজার বসিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবন করে সমানতালে। তার সখ্যতা পাওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করে তাদেরকেই এসি নাদিয়া জুঁই সাহেস্তা করতেন। অন্যদিকে এই এসি’র আস্কারা পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরাও সংঘবদ্ধভাবে মাদক বিরোধীদের উপর হামলা চালাতে থাকে। তারা উপুর্যপরি হামলা চালিয়ে ও কুপিয়ে অন্তত ৬ জনকে হাসপাতালে পাঠায়। আরেকদিকে মাদক বিরোধীদের আটক করে পুলিশ তাদের হাতেই মাদক উদ্ধার দেখিয়ে পাঠাতে থাকে জেলহাজতে। ফলে তখন থেকেই খিলগাঁও জোন এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপদ সাম্রাজ্যে পরিনত হয়ে আছে। এই বিশাল মাদক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার নেপথ্য যোগানদাতা হয়েও এসি নাদিয়া জুঁই ডিএমপি থেকে দক্ষ অফিসারের মর্যাদায় পুরস্কার লাভ করেছেন, জুটিয়ে নিয়েছেন সিনিয়রিটি’র মর্যাদাও।
বহু অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর তাকে ডিএমপি’র অন্য কোন জোনে বদলী করার আগেই নাদিয়া জুঁই নানারকম তদবির ও চাপ সৃষ্টির পায়তারা চালান। তিনি যে কোনো মূল্যে খিলগাঁও জোন আঁখড়ে থাকতে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হতেও দ্বিধা করেননি, তদবীর চালিয়েছেন ঠিকাদারদের মাধ্যমেও। কিন্তু এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশ সদর দপ্তর এক আদেশেই বহুল বিতর্কিত অজ্ঞাত ক্ষমতার দাপুটে নাদিয়াকে ডিএমপি ছাড়া করে রংপুরে বদলী করে দেওয়া হয়। তিনি বদলী হলেও রয়ে গেছেন তার সাঙ্গপাঙ্গ ওসি মশিউর রহমান, এসআই নাছিরউদ্দিন তুহিন, এএসআই ফজলু, এএসআই মাসুদ গাজী।
এসি নাদিয়া’র আশ্রিত মাদক সম্রাট নুরের মাদক ব্যবসা চলছে দেদরাচ্ছেঃ
খিলগাঁও জোনের সাবেক বিতর্কিত এসি নাদিয়া জুঁইয়ের লালন পালনকৃত সিপাহীবাগের মাদক সম্রাট নুর মোহাম্মদ। ইতিমধ্যে এই মাদক সম্রাটকে নিয়ে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা চারটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। এর আগে এসি নাদিয়া খিলগাঁও থাকাকালেও ওই গোয়েন্দা সংস্থা তিন টি প্রতিবেদন দিলে এসি নাদিয়া’র সাথে স-সম্পর্ক থাকায় খিলগাঁও থানা পুলিশ এই মাদক সম্রাটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ওই গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, খিলগাঁও থানার একাধিক মামলার আসামী নূর মোহাম্মদ (৩৯) মোবাঃ ০১৫১১-১১১৫৪৪, পিতাঃ আঃ রহমান। বাসাঃ ৩০০/১ সিবাহীবাগ আইচক্রীম গলি, থানাঃ খিলগাঁও- ঢাকা, একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ইতিপূর্বে গত ০৭/০৪/২০১৮, ৩০/০৪/১৮ ও ১০/০৭/২০১৮ খ্রিঃ খিলগাঁও থানার একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে ্রপতিবেদন দাখিল করার পর এবং সারা দেশব্যাপি মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে উক্ত ব্যক্তি অত্র এলাকা ছেড়ে দীর্ঘদিন যাবত আত্মগোপন করে ছিলেন বলিয়া জানা যায়। উক্ত ব্যক্তির নামে খিলগাঁও থানার মামলা নং ৫৪ তাং- ২৩/১০/১৭ খ্রিঃ মামলা নং- ৩৪ তাং- এবং মামলা নং- ৭৪, তাং- ২৪/০৫/১৮ খ্রিঃ। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ৩০/১২/২০১৮ খ্রিঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন পর আবার অত্র এলাকায় প্রবেশ করে তার একান্ত সহযোগী ১, সৌরভ রাসেল (৩১) মোবাঃ ০১৬১১-৪১৪১৫৬, এবং তার আপন ছোট ভাই মোঃ সোহেল (৩১) মিলে খিলগাঁও থানাধীন সিপাহীবাগ টেম্পুস্ট্যান্ড, আইচক্রীমগলি, গোড়ান, নবীনবাগ, ভ‚ইয়াপাড়া সহ নিজ বাসায় আবারো মাদকের রমরমা ব্যবসা করিতেছেন। ইতিপূর্বে উক্ত ব্যক্তির নামে ০৩ (তিন) বার মাদক সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করার পরও ইহার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করায় অত্র এলাকার যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে ছিনতাই সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সহিত জড়িয়ে পড়ছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, উক্ত ব্যক্তি তার বাসার দোতলায় প্রতিদিন সন্ধা ১৮,০০ ঘটিকা হতে ভোর ০৫,০০ ঘটিকা পর্যন্ত জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে থাকেন। উক্ত জুয়ার বোর্ডে প্রতিদিন চলে লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা। ইহাছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাসার চার পাশে এবং আইচক্রীম গলির মাথায় সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করেন।
সুত্রঃ সাপ্তাহিক তদন্ত চিত্র