ঢাকা ১১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্বৈরাচার সরকারের দোসর বিসিক কর্মকর্তা সরোয়ার: দুর্নীতিতে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড় Logo শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা মোজাম্মেলকে ফায়ার সার্ভিসে বহাল রাখতে মরিয়া সিন্ডিকেট Logo Logo স্বৈরাচার সরকারের দোসর সিন্ডিকেট ফায়ার সার্ভিসে বহাল তবিয়তে Logo উত্তরার আতংক ছোটন পুলিশের খাঁচায় Logo বিশ্ব কন্যা শিশু দিবসে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক এম শিমুল খান Logo জাতীয় সংসদে অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ইলিয়াস: দেশ-বিদেশের সম্পদের পাহাড়! Logo স্বৈরাচারের দোসরদের থাবায় পৈত্রিক সম্পদ হতে বিতারিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতাহার হোসেন Logo জিয়া সাইবার ফোর্স ঢাকা মহানগর উত্তর’ আহব্বায়ক কমিটি গঠন Logo বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নেতা এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী




হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ, বেডের চেয়ে তিনগুণ রোগী হাসপাতালে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ৮৭ বার পড়া হয়েছে

জয়পুরহাট প্রতিনিধি |

জয়পুরহাটে প্রচণ্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমের কারণে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেডের থেকে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এতো ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না থাকায় মেঝেতে জায়গা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈরি আবহাওয়া ও প্রখর রোদ, ধুলোবালির পাশাপাশি অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতা, ভ্যাপসা গরমের কারণে রোটা নামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। গত এক সপ্তাহ থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ২১৫ জন রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা বেশী।
মার্চ-এপ্রিল মাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এই রোগে আক্রান্তদের প্রথমে জ্বর পরে তাদের একাধিকবার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি জয়পুরহাট সদর উপজেলার রাঘবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী রুহিনা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে আসার পর জ্বর শুরু হয়, তারপর স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা চিকিৎসা দেয়, কিন্তু দুইদিনেও বমি ও পাতলা পায়খানা ভালো না হওয়ায় আবারো চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালগঞ্জ গ্রামের ৬ বছরের ছেলে আলী হোসেন এর মা বিউটি বেগম জানান, তার ছেলে শনিবার সকালে জ্বর হয়, রাত থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে বন্ধ না হলে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুর জেলার হিলির দক্ষিণ বাসুদেপুর গ্রামের ৬ মাসের শিশু সোয়াইব হোসেন এর মা শাকিলা আক্তার বলেন, বুধবার বিকেল থেকেই জ্বর, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল। এখন জ্বর, বমি না থাকলেও পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়নি, যে পানি পান করছে তাই বের হয়ে যাচ্ছে।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবুল হোসেন জানান, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা, প্রচণ্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মানুষের খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রোটা ভাইরাসের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যা অস্বাস্থ্যকর খাবার ও দুষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।
জয়পুরহাট জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রাশেদ মোবারক বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বর্তমানে কিছুটা বেড়েছে। গোটা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার আক্রান্ত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে এর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল থেকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। তাছাড়া খাওয়ার আগে ও পায়খানা থেকে আসার পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে। টিউবয়লের পানি পান করতে হবে এবং পাতলা পায়খানার লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক যেতে হবে। এছাড়া অবস্থা গুরুতর হলে জেলা হাসপাতালে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা কেটে যাবে।
জেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেডের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটা মনে করছেন জয়পুরহাটবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ, বেডের চেয়ে তিনগুণ রোগী হাসপাতালে

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

জয়পুরহাট প্রতিনিধি |

জয়পুরহাটে প্রচণ্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমের কারণে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেডের থেকে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এতো ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না থাকায় মেঝেতে জায়গা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈরি আবহাওয়া ও প্রখর রোদ, ধুলোবালির পাশাপাশি অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতা, ভ্যাপসা গরমের কারণে রোটা নামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। গত এক সপ্তাহ থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ২১৫ জন রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা বেশী।
মার্চ-এপ্রিল মাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এই রোগে আক্রান্তদের প্রথমে জ্বর পরে তাদের একাধিকবার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি জয়পুরহাট সদর উপজেলার রাঘবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী রুহিনা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে আসার পর জ্বর শুরু হয়, তারপর স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা চিকিৎসা দেয়, কিন্তু দুইদিনেও বমি ও পাতলা পায়খানা ভালো না হওয়ায় আবারো চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালগঞ্জ গ্রামের ৬ বছরের ছেলে আলী হোসেন এর মা বিউটি বেগম জানান, তার ছেলে শনিবার সকালে জ্বর হয়, রাত থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে বন্ধ না হলে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুর জেলার হিলির দক্ষিণ বাসুদেপুর গ্রামের ৬ মাসের শিশু সোয়াইব হোসেন এর মা শাকিলা আক্তার বলেন, বুধবার বিকেল থেকেই জ্বর, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল। এখন জ্বর, বমি না থাকলেও পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়নি, যে পানি পান করছে তাই বের হয়ে যাচ্ছে।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবুল হোসেন জানান, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা, প্রচণ্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মানুষের খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রোটা ভাইরাসের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যা অস্বাস্থ্যকর খাবার ও দুষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।
জয়পুরহাট জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রাশেদ মোবারক বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বর্তমানে কিছুটা বেড়েছে। গোটা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার আক্রান্ত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে এর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। তবে হাসপাতাল থেকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। তাছাড়া খাওয়ার আগে ও পায়খানা থেকে আসার পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে। টিউবয়লের পানি পান করতে হবে এবং পাতলা পায়খানার লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক যেতে হবে। এছাড়া অবস্থা গুরুতর হলে জেলা হাসপাতালে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা কেটে যাবে।
জেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেডের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটা মনে করছেন জয়পুরহাটবাসী।