বিশেষ প্রতিনিধি |
সমুদ্রসীমা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সব ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে হয়।
শনিবার সকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি সুগন্ধায় ‘ওয়াটার ডিপ্লোমেসি’ নিয়ে আট দিনব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্সের উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি সই হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই চুক্তি সম্পাদনে ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’।
মন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সাফল্য। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সই হওয়া গঙ্গার পানিচুক্তিও সাফল্য।
ড. এ কে মোমেন বলেন, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সেটি চলমান থাকলে ভালো। আমি যখন ভারতে গিয়েছিলাম তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তারা বলেছেন, তারা বাকি নদীগুলোর সমস্যার বিষয়েও নীতিগতভাবে সম্মত এবং এটি এই অববাহিকার উপকারের জন্য হবে।
আব্দুল মোমেন বলেছেন, ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী সাত বছরের মধ্যে আবার দর-কষাকষি করে নতুন চুক্তি করতে হবে দুই দেশকে। এটি একটি ক্রিটিক্যাল টাইম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি থাকার সময়ে তিনি সমুদ্রসীমার বিরোধ সংক্রান্ত মামলায় ভূমিকা পালন করেন
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা না হলে সমুদ্রসীমা জয় করা হতো না। আমার নিজের কথা বলি। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল একটি আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা চায়। আমি যেদিন সই করতে গেলাম সেদিন আমার মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হলো, এতগুলো টাকা দেব, আবার মামলায় জিতব কিনা।
মন্ত্রী বলেন, আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। নেত্রী বললেন, আপনি বিসমিল্লাহ বলে সই করে দেন, সব ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে হয়। এরপরে আমি আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করলাম।
মিয়ানমারে অনেক বিদেশি তেল কোম্পানি কাজ করছে কিন্তু বাংলাদেশে কেন আসছে না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদেশি কোম্পানিগুলি হঠাৎ করে বিনিয়োগ করে না। বিনিয়োগের আগে তারা অনেক কিছু বিবেচনা করে। আমি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিশেষ করে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমুদ্র বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী, তারা এখানে কাজ করতে চায়।
মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। আমরা নদীর অববাহিকার বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম এবং এটা তুলে ধরতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। কারণ আমাদের প্রতিবেশী এটা চায়নি। আমরা চেয়েছিলাম উজান ও ভাটির দেশের ক্ষেত্রে অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু ওরা চাচ্ছিলেন এটার ওপর এককভাবে তাদের অধিকার থাকবে। আমাদের তখন জ্ঞানেরও অভাব ছিল। ইউরোপের রাইন নদীর তীরবর্তী দেশগুলো এবং আফ্রিকার নীল নদের পাদদেশগুলোর কাছে গেলাম এবং জানতে চাইলাম তারা কীভাবে করে। তারা বলল তারা সবাই মিলে এটি ঠিক করে। কোনও একক দেশের এটি ক্ষমতা নেই।