তাপদাহে হাঁসফাঁস-আজ আরও বাড়তে পারে

- আপডেট সময় : ১০:২২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

তখন ভরদুপুর। ক্রমেই বাড়ছে রোদের তেজ। খরতাপ থেকে রেহাই পেতে রুমাল মাথায় তরমুজ খাচ্ছেন কারওয়ান বাজারের পথচারী সাফওয়ান সাদিক। পাশেই রাস্তার মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সজল কৃষ্ণ। মাথায় ছাতা, তবুও গ্রীষ্মের তাপদাহে হাঁসফাঁস করছেন তিনি।
এভাবেই গেল সপ্তাহ জুড়ে প্রচন্ড তাপমাত্রা বড্ড ভুগিয়েছে ঢাকার পথচারীদের। আর এতে সবচেয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয় মোটরসাইকেল আরোহী ও শ্রমজীবী মানুষদের। পাশাপাশি সড়কের তীব্র জ্যাম যেন তাপদাহকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার এই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে রাজধানীতে দেখা যায় তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নদীপথে রাজধানীর ফলের আড়তে আসছে তরমুজ। তাই ফলের আড়তে এখন বেশিরভাগ জায়গাই দখল করে আছে তরমুজ। যা তৃষ্ণার্ত পথচারীর পিপাসা মেটানোর অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে গরমে অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে ছোটেন ডাবের দোকানে। এই সুযোগে ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। ডাব প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। তবে সন্ধ্যায় গরম কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমে যায়। সন্ধ্যায় কোনো কোনো বিক্রেতাকে ৩০-৩৫ টাকায়ও ডাব বিক্রি করতে দেখা যায়।
চৈত্রসংক্রান্তিতে বৃষ্টির দেখা পেয়েছিল রাজধানীবাসী! কিন্তু বৈশাখে আর বৃষ্টির নাম নেই। এই সুযোগে সূর্যও প্রচন্ড উত্তাপের রাজত্ব করছে। পাশাপাশি বৈশাখের গরম দেশ জুড়েই পড়েছে। একদিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার সারা দেশে তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।ছেলে রাফসানকে ভেতরে দিয়ে উত্তরখান বিএইচ খান স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করছেন মা আফরোজা সাদিকা।
তিনি বলেন, আজ যে রোদ, মাথা থেকে ছাতাই নামাতে পারছি না। ছেলেটাও হাঁপিয়ে উঠছে। স্কুলে নিয়ে আসাই এখন কষ্ট হচ্ছে। স্কুলের বাইরে আমরা অভিভাবকরা তীব্র গরমে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারছি না। একটা বৃষ্টি হলে ভালো হতো।
অন্যদিকে দিনকে দিন গ্রীষ্মের খরতাপ বাড়ছে তো বাড়ছেই। রোদ-গরমের তীব্রতায় জীবন যেন ওষ্ঠাগত। এ গরমে রাস্তার খোলা শরবত পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোদের তীব্রতায় পানিশূন্যতা মেটাতে প্রচুর খাবার স্যালাইন খাওয়ার তাগিদ তাদের।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ দুপুর সোয়া ২টার দিকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এই দাবদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল মাদারীপুর জেলায় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৭ দশমিক ২, চট্টগ্রামের রাঙামাটি, কুমিল্লা ও ফেনীতে ৩৮ দশমিক ৪, সিলেটে ৩৮ দশমিক ৩, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ৫, রংপুর বিভাগের মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩৬ দশমিক ৭ ও বরিশালে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তবে ৮ বিভাগের মধ্যে খুলনা বিভাগে গরম বেশি পড়েছে। এই বিভাগের সাতক্ষীরায় ৩৯, যশোরে ৩৯ দশমিক ৩, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৮ এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ শুক্রবারও তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ মাসের শেষ দিকে মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।