ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সুনামগঞ্জে প্রবাসী সাংবাদিকের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা Logo নিজেই মাদকাসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা; মাসে মাসোহারা আদায় ৭লাখ! Logo দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রকারী মাস্টারমাইন্ড সেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তার শাপলা Logo ‘শেখ হাসিনা ও জিয়াউলের বিরুদ্ধে ২০০ গুমের প্রমাণ মিলেছে’ Logo দুর্নীতির ছায়ায় রাজউক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান! Logo নিয়মিত চুমু খেলে মিলবে যে শারীরিক উপকার Logo প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন আজ, সফরসঙ্গী যারা Logo জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হলেন মুহাম্মদ আবু আবিদ Logo প্রধান উপদেষ্টার দেয়া নির্বাচনী সময়ে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি Logo ডেসটিনি প্রতারক রফিকুল আমিনের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন




পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখছেন হতদরিদ্র নারীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪২:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯ ২০৮ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বেড়ুয়া গ্রামে ফিরোজা বেগমের বসবাস। ঠিক একযুগ আগে স্বামী আজীম উদ্দিন তাকে ছেড়ে নতুন করে অন্য কারও সঙ্গে সংসার শুরু করেন।

এরপর থেকেই একমাত্র ছেলে রমজানকে বুকে আগলে পথ চলা শুরু করেন তিনি। কখনো কিষানির আবার কখনো অন্যের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করেন তিনি। স্বপ্ন একটাই পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করবেন একমাত্র ছেলেকে।

এ লক্ষ্যে অনেক কষ্টের মাঝেও ছেলেকে পড়ালেখার জন্য ভর্তি করেন স্থানীয় আলীয়া মাদ্রাসায়। পেটে ভাত না জুটলেও অনেক কষ্টে ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন। দেখতে দেখতে ছেলে রমজান তার মেধার পরিচয় দিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠে।

কিন্তু দারিদ্র্য যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের আবার সুখ কিসের। মরার উপর বিষ ফোঁড়া যে লেগেই থাকে। ছেলের অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা অংশ নিতে করতে হবে ফরম পূরণ। এর জন্য টাকা দরকার। যা জোগাড় করতে পারেননি ফিরোজা বেগম।

তাই ছেলেরও লেখাপড়া আর আগায়নি। ওখানেই লেখাপড়ার ইতি টেনে সংসারের খরচ জোগাড় করতে মনোনিবেশ করেন রমজান। থাকার জন্যও নেই একটি ঘর। কখনো সুপারি গাছের খোল আবার কখনও মিটিং-মিছিলের ব্যানার-ফেস্টুনে চারদিক বেষ্টনি দিয়ে থাকা শুরু করে মা-ছেলে।

তাই মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে গাজীপুরের একটি হোটেলে ওয়েটারের কাজ নেয় রমজান। স্বপ্ন মায়ের জন্য একটি ঘর তৈরি করবে। ঠিক তখনই একটি এনজিওর মাধ্যমে পাকা ঘর পেয়ে যান ফিরোজা বেগম।

এনজিওটির নিজস্ব অর্থায়নে দেশি-বিদেশি ভলেন্টিয়ার এসে নির্মাণ করে দেয় পাকা বাড়ি। হাসি ফুটে ফিরোজা ও রমজানের মুখে।

বাড়ি পেয়ে এখন ফিরোজা বেগমের একটাই লক্ষ্য ছেলেকে আবার লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবে। ছেলে সরকারি বড় একটা চাকরি করবে। মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।

শুধু ফিরোজা বেগম নয়, একই গ্রামের সুমলা বেগম ও রাবেয়া নামে আরও দুই অসহায় নারী পেয়েছেন একই ধরনের ঘর। তারাও ঘর পেয়ে স্বপ্ন দেখছেন নিজেদের সন্তানদের মানুষ করার। সম্প্রতি ওই গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ডে বিল্ড’ শীর্ষক এক বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটির সহযোগিতায় ওই নারীদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর জন আর্মস্ট্রং গনমাধ্যমকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। যাতে নারীরা উন্নততর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং আর্থিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের পথে বাধা দূর করতে পারে।

তিনি যুগান্তরকে আরও বলেন, সমর্থন পেলে নারী নিজের ও পরিবারের উন্নততর ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, ভারসাম্য এবং স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের ইউএস বিজনেস ও ইএমইএর প্রেসিডেন্ট মিশেল খালাফ বলেন, নারীদের জন্য বিশদ পরিসরে সুফল বয়ে আনতে এ ধরনের কাজ করতে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী। আর ভবিষ্যতেও আমরা এ ধরনের কাজ করে যাব। স্বপ্ন দেখাব আরও অসহায় মানুষকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখছেন হতদরিদ্র নারীরা

আপডেট সময় : ০৯:৪২:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বেড়ুয়া গ্রামে ফিরোজা বেগমের বসবাস। ঠিক একযুগ আগে স্বামী আজীম উদ্দিন তাকে ছেড়ে নতুন করে অন্য কারও সঙ্গে সংসার শুরু করেন।

এরপর থেকেই একমাত্র ছেলে রমজানকে বুকে আগলে পথ চলা শুরু করেন তিনি। কখনো কিষানির আবার কখনো অন্যের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করেন তিনি। স্বপ্ন একটাই পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করবেন একমাত্র ছেলেকে।

এ লক্ষ্যে অনেক কষ্টের মাঝেও ছেলেকে পড়ালেখার জন্য ভর্তি করেন স্থানীয় আলীয়া মাদ্রাসায়। পেটে ভাত না জুটলেও অনেক কষ্টে ছেলের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন। দেখতে দেখতে ছেলে রমজান তার মেধার পরিচয় দিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠে।

কিন্তু দারিদ্র্য যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের আবার সুখ কিসের। মরার উপর বিষ ফোঁড়া যে লেগেই থাকে। ছেলের অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা অংশ নিতে করতে হবে ফরম পূরণ। এর জন্য টাকা দরকার। যা জোগাড় করতে পারেননি ফিরোজা বেগম।

তাই ছেলেরও লেখাপড়া আর আগায়নি। ওখানেই লেখাপড়ার ইতি টেনে সংসারের খরচ জোগাড় করতে মনোনিবেশ করেন রমজান। থাকার জন্যও নেই একটি ঘর। কখনো সুপারি গাছের খোল আবার কখনও মিটিং-মিছিলের ব্যানার-ফেস্টুনে চারদিক বেষ্টনি দিয়ে থাকা শুরু করে মা-ছেলে।

তাই মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে গাজীপুরের একটি হোটেলে ওয়েটারের কাজ নেয় রমজান। স্বপ্ন মায়ের জন্য একটি ঘর তৈরি করবে। ঠিক তখনই একটি এনজিওর মাধ্যমে পাকা ঘর পেয়ে যান ফিরোজা বেগম।

এনজিওটির নিজস্ব অর্থায়নে দেশি-বিদেশি ভলেন্টিয়ার এসে নির্মাণ করে দেয় পাকা বাড়ি। হাসি ফুটে ফিরোজা ও রমজানের মুখে।

বাড়ি পেয়ে এখন ফিরোজা বেগমের একটাই লক্ষ্য ছেলেকে আবার লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবে। ছেলে সরকারি বড় একটা চাকরি করবে। মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।

শুধু ফিরোজা বেগম নয়, একই গ্রামের সুমলা বেগম ও রাবেয়া নামে আরও দুই অসহায় নারী পেয়েছেন একই ধরনের ঘর। তারাও ঘর পেয়ে স্বপ্ন দেখছেন নিজেদের সন্তানদের মানুষ করার। সম্প্রতি ওই গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ডে বিল্ড’ শীর্ষক এক বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটির সহযোগিতায় ওই নারীদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর জন আর্মস্ট্রং গনমাধ্যমকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। যাতে নারীরা উন্নততর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং আর্থিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের পথে বাধা দূর করতে পারে।

তিনি যুগান্তরকে আরও বলেন, সমর্থন পেলে নারী নিজের ও পরিবারের উন্নততর ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, ভারসাম্য এবং স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের ইউএস বিজনেস ও ইএমইএর প্রেসিডেন্ট মিশেল খালাফ বলেন, নারীদের জন্য বিশদ পরিসরে সুফল বয়ে আনতে এ ধরনের কাজ করতে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী। আর ভবিষ্যতেও আমরা এ ধরনের কাজ করে যাব। স্বপ্ন দেখাব আরও অসহায় মানুষকে।