সকালের সংবাদ ডেস্ক; কথায় আছে পরাজয়ে ডরে না বীর। হিরো আলমও বীরের মতোই। তিনি এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে লড়ে দু' বার পরাজিত হন। কিন্তু এই পরাজয় তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং নব উদ্যমে তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। চলুন জেনে নেই হিরো আলমের 'এ-টু জেড'।
কে এই হিরো আলম?
ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। মিউজিক ভিডিও, শর্ট ফিল্ম আর ঢালিউড ফিল্মে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান। কিন্তু তাঁর কাজগুলো শৈল্পিক আনন্দের পরিবর্তে ফান ভিডিও হিসেবে নিছক টাইম পাসের জন্যই দেখা হয়েছে। তাঁর অভিনীত অনেক ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল ভিডিও হিসেবে ব্যাপক প্রচার পায়। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়নপত্র তুলে।
হিরো আলমের প্রথম জীবন
হিরো আলমের আসল নাম আশরাফুল আলম। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন চানাচুর বিক্রেতা। এরপর সিডি বিক্রেতা হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সিডির আমল চলে গেলে তাঁর মাথায় আসে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার কথা। বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের আশপাশের গ্রামে তিনি ডিশ ব্যবসা শুরু করেন। এখনও এলাকার লোকের কাছে তিনি ডিশ আলম নামেই পরিচিত।
তাঁর 'হিরো' হয়ে ওঠা
ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা শুরুর পরে তিনি একের পর এক মিউজিক ভিডিও বানাতে শুরু করেন। প্রথম গানের মডেলিং ভিডিওটি বানিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। তারপর থেকে লাগাতার ভিডিও বানিয়ে নিজের ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচার করতেন থাকেন। এরপর ইউটিউবে সেগুলো আপলোডের মাধ্যমে স্থুল বিনোদন প্রদায়ক হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যান। তিনি আলোচনায় চলে আসেন আর দেশবাসী তাঁকে হিরো আলম নামে এক ডাকে চিনে যায়। এই ধারাবাহিকতায় তিনি ঢাকাই সিনেমায় অভিনয়ও করে ফেলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন
সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। অভাব আর সৎ পিতার সংসারে এর বেশি পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি আলমের পক্ষে।
তাঁর বিবাহ এবং...
২০০৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সুমী। সুমী এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তবে প্রায় দশ বছর সংসার করার পরে গত বছর আলম তাঁর শ্যালিকাকে নিয়ে পালিয়েছিলেন। সেসময় স্থানীয় চেয়ারম্যান শালিসের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করেন।
হিরো আলমের পরিবার
স্ত্রী সাবিহা আক্তার সুমি, মেয়ে আলোমনি, আঁখি আলো এবং ছেলে আবির হোসেনের সাথে মা ও সৎবাবাকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর বড় মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী, মেজো মেয়ে ১ম শ্রেণির ছাত্রী আর ছেলের বয়স চার বছর।
হিরো আলমের বাবা মারা গেলে তাঁর মা’র অন্যত্র বিয়ে হয়। সৎ বাবা নিজের ছেলে-মেয়ের মতোই আলমকে মানুষ করেন। হিরো আলমকে তিনি খুব ভালোবাসলেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মনে। সৎ বাবা মনে করেন, আলম ইচ্ছা মতো টাকা উড়ায়। মিউজিক ভিডিও বানানোর নামে রাতদিন পড়ে থাকে নানা জায়গায়। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানদের কোনো খোঁজ রাখে না।
তিনি মনে করেন, আলমের ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবাকে কাছে পায় না। আলম তাঁর ছেলে-মেয়েদের খোঁজ রাখে না। বাড়ি-ঘরের প্রতিও তাঁর খেয়াল-টেয়াল কম।
'হিরো'র নির্বাচন কথায় আছে পরাজয়ে ডরে না বীর। হিরো আলমও বীরের মতোই। তিনি এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে লড়ে দুই বার পরাজিত হন। কিন্তু এই পরাজয় তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং নব উদ্যমে তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
হিরো আলমের নির্বাচনী এলাকা
হিরো আলম লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসন থেকে। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১২ হাজার ৮১।
'হিরো'র এন্টি পার্টি এবার হিরো আলমের বিপক্ষে প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় জাসদের সহ-সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মমতাজ উদ্দিন। সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী। কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন কবিরাজ। বগুড়া জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হেলালুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আলহাজ অধ্যাপক আহছানুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম।
দর্শক যখন ভোটার হিরো আলম হিরোর মতো এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এলাকাবাসী ভোটার হিসেবে তাঁর পাশে না থেকে বরং দর্শক হিসেবেই ব্যাপারটাকে উপভোগ করছেন। তাঁর এলাকার তরুণ প্রজন্ম হিরো আলম সম্পর্কে জানলেও প্রবীণরা কিন্তু তাকে সেভাবে চেনেনই না।
হিরো আলম দেশের টিভি-রেডিও-পত্রিকায় নিয়মিত হাজির হলেও নির্বাচনী প্রচারণার জন্য যাচ্ছেন না জনগণের দরজায়। ‘হিরো’ হিসেবে তিনি সারাদেশের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিন্তু ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এখনও।
গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া এলাকাবাসীর একাধিক বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তাঁর নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা মনে করেন- ইউটিউব, ফেসবুকের জনপ্রিয়তা আর নির্বাচনের মাঠের জনপ্রিয়তা এক নয়। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় চারদলীয় জোট এবং মহাজোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হিরো আলমের দর্শক থাকলেও খুব বেশি ভোটার থাকার কারণ থাকবে না।