নিজস্ব প্রতিবেদক;
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বনানীর এফআর টাওয়ারে বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এর অংশ হিসেবে চিহ্নিত অতি অগ্নিঝুঁকি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে নতুন করে পরিদর্শন শেষে সতর্কতার জন্য ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে নোটিশ/ব্যানার টাঙিয়ে দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বার বার তাগিদ দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের ৩৯ ভবন ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এবার ওইসব ভবনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে প্রয়োজনে মামলা করা হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি, সাভারে ৫টি, গাজীপুরে ৭টি এবং নারায়ণগঞ্জে ১২টি ভবন ও মার্কেটকে চিহ্নিত করে অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। প্রত্যেকটি ভবন ও মার্কেটে টাঙানো হয়েছে ‘ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ ব্যানার।
চলতি মাসের গত ১ এপ্রিল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর তাদের ঘোষণা দৃশ্যমান করার জন্য ভবন মালিক ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া শুরু করে।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় জনগণকে সচেতন করার জন্য ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যানার দেখে অধিকাংশ মানুষের সচেতনা বাড়বে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের পরিচালিত জরিপে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত এবং এখনো ঝুঁকি নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি এমন সব মার্কেট, আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনায় এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে এমন সব স্থাপনায় এ কার্যক্রম চালু থাকবে।’
ফায়ার সার্ভিসের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা
রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ভবন ও মার্কেটগুলো হলো : সুকন্যা টাওয়ার, ২০ তলা আবাসিক ভবন, ৩৫ মিরপুর; গোল্ডেন টাওয়ার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট; হাজি মিলন টাওয়ার, সিদ্দিকবাজার; বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান; নূর ম্যানশন গাউছিয়া মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড; সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ওয়ারী; রাজ্জাক শপিং কমপ্লেক্স, মগবাজার; গুলফিশান ও আড়ং কমপ্লেক্স, মগবাজার; ছায়ানীড় আবাসিক ভবন, সাতরাস্তা; নয়ামাটি মার্কেট; রহমতউল্লাহ ম্যানশন, পাটুয়াটুলী রোড, সদরঘাট; খাঁন প্লাজা, ইসলামপুর রোড; লায়ন টাওয়ার, ইসলামপুর রোড; ইস্ট বেঙ্গল মার্কেট, চিত্তরঞ্জন রোড ও মায়াকাটারা মার্কেট, চিত্তরঞ্জন রোড।
সাভারের চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেট :
জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থা শপিং কমপ্লেক্স, সাভার বাসস্ট্যান্ড; হেমায়েতপুর সুপার মার্কেট; সাভার সিটি টাওয়ার ডি/২৫ তালবাগ সাভার; বিসমিল্লাহ টাওয়ার ৯/১০ পার্বতীনগর, থানা রোড এবং চৌরাঙ্গী সুপার মার্কেট, সাভার বাসস্ট্যান্ড।
গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ভবন ও মার্কেট :
ওয়াসিফ নিট কম্পোজিট লিমিটেড ভোগড়া; চান্দনা চৌরাস্তার সাসটেক্স বিডি লিমিটেড; চান্দনা চৌরাস্তার মে ফ্যাশন লিমিটেড; চান্দনা চৌরাস্তার শাপলা ম্যানশন; চান্দনা চৌরাস্তার রহমান শপিংমল; টঙ্গী বাজারের সোনালী অর্কিট এবং টঙ্গী বাজারের হাজি মার্কেট।
নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেট :
নয়ামাটি মার্কেট, ডিআইটি বঙ্গবন্ধু রোড; গাউছিয়া মার্কেট, রুপগঞ্জ; দেওভোগ মার্কেট; হোশিয়ারি মার্কেট, উকিলপাড়া; আল জয়নাল প্লাজা, টান বাজার; রিভারভিউ কমপ্লেক্স, টান বাজার; টর্কিড প্লাজা, নয়ামাটি; দেলোয়ার টাওয়ার, সিরাজউদ্দৌলা রোড; জাকির টাওয়ার, সিরাজউদ্দৌলা রোড; হাজি নূরউদ্দিন টাওয়ার, পুলিশলাইন; আল হাকিম টাওয়ার, চাষাড়া এবং মার্ক টাওয়ার, চাষাড়া।
প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৭১ জন এবং আহত হন অনেকে। এ ঘটনার পর রাজধানীর অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো। চুড়িহাট্টার আগুনের রেশ কাটতে না কাটতে গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহত এবং ৭১ জন আহত হন।