ঢাকা ১২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




ব্যাংক খাতে সাইবার ঝুঁকি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:২১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন এখন আবশ্যিক বিষয়। দেশে ইন্টারনেট চালু হয়েছে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও আন্ত সংযোগ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া বলতে যা বোঝায় তার সূচনা হয়েছে অনেক পরে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ডিজিটাইজেশনকে অন্যতম প্রধান এজেন্ডা করেছিল। তাতে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়াও দিয়েছে। ক্ষমতাসীন হয়ে তারা ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে; যদিও অনেক পথ বাকি। ডিজিটাইজেশনের ফলে নতুন পরিসর সৃষ্টি হয়েছে, যাকে বলে সাইবার স্পেস।

দেশের অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবস্থাও ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এ বিষয়ক অগ্রগতি লক্ষণীয়। যেকোনো ব্যবস্থার, হোক তা ম্যানুয়াল বা ডিজিটাল, অসুবিধার কিছু দিক থাকে; ডিজিটাইজড ও ইন্টারনেটেড ব্যবস্থারও রয়েছে। সাইবার স্পেস সৃষ্টির সঙ্গে নতুন ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে এবং সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সাইবারজগতের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে এবং এর জন্য সুদক্ষ জনবল না থাকলে ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে। বিশ্বজুড়ে এমন নজির কম নয়। আমরাও এরই মধ্যে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি—বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সাইবার স্পেসেই ঘটেছে।

দেশের ব্যাংকিং খাত সাইবার-ঝুঁকি মোকাবেলায় শতভাগ প্রস্তুত নয়। অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। গত সোমবার ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে রাজধানীতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তার জন্য নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়াল (এনজিএফডাব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক স্থাপন হয়েছে এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটির স্থাপন অনুমোদনপর্বে রয়েছে। ফলে আংশিক ও অনুমোদনপর্বে থাকা ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। যেকোনো সময় এগুলো সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে পারে। প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) বিভাগে কর্মরত জনবলের চিত্রও তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের আইটি বিভাগে জনবল ছিল তিন হাজার ২১৩ জন; প্রতিষ্ঠানপ্রতি গড়ে ৫৭ জন। সর্বনিম্ন জনবল ছয়জন ও সর্বোচ্চ জনবল ৩৭৪ জন। ব্যাংক খাতে আইটি-বিষয়ক জনবল ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অভাব রয়েছে, এটা স্পষ্ট। ৫০ শতাংশ ব্যাংকই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি আর্থিক খাতের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য স্বস্তিকর নয়। যেকোনো সময় বিপর্যকর সাইবার হামলার শঙ্কা রয়েছে। আইটি বিভাগকে, বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে শুধু মুনাফার দিকে মনোযোগ দিলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন ও জনবলের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। সাইবার নিরাপত্তার সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎপর হওয়া জরুরি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ব্যাংক খাতে সাইবার ঝুঁকি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি

আপডেট সময় : ১১:২১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯

রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন এখন আবশ্যিক বিষয়। দেশে ইন্টারনেট চালু হয়েছে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও আন্ত সংযোগ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া বলতে যা বোঝায় তার সূচনা হয়েছে অনেক পরে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ডিজিটাইজেশনকে অন্যতম প্রধান এজেন্ডা করেছিল। তাতে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়াও দিয়েছে। ক্ষমতাসীন হয়ে তারা ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে; যদিও অনেক পথ বাকি। ডিজিটাইজেশনের ফলে নতুন পরিসর সৃষ্টি হয়েছে, যাকে বলে সাইবার স্পেস।

দেশের অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবস্থাও ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এ বিষয়ক অগ্রগতি লক্ষণীয়। যেকোনো ব্যবস্থার, হোক তা ম্যানুয়াল বা ডিজিটাল, অসুবিধার কিছু দিক থাকে; ডিজিটাইজড ও ইন্টারনেটেড ব্যবস্থারও রয়েছে। সাইবার স্পেস সৃষ্টির সঙ্গে নতুন ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে এবং সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সাইবারজগতের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে এবং এর জন্য সুদক্ষ জনবল না থাকলে ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে। বিশ্বজুড়ে এমন নজির কম নয়। আমরাও এরই মধ্যে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি—বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সাইবার স্পেসেই ঘটেছে।

দেশের ব্যাংকিং খাত সাইবার-ঝুঁকি মোকাবেলায় শতভাগ প্রস্তুত নয়। অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। গত সোমবার ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে রাজধানীতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তার জন্য নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়াল (এনজিএফডাব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক স্থাপন হয়েছে এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটির স্থাপন অনুমোদনপর্বে রয়েছে। ফলে আংশিক ও অনুমোদনপর্বে থাকা ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। যেকোনো সময় এগুলো সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে পারে। প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) বিভাগে কর্মরত জনবলের চিত্রও তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের আইটি বিভাগে জনবল ছিল তিন হাজার ২১৩ জন; প্রতিষ্ঠানপ্রতি গড়ে ৫৭ জন। সর্বনিম্ন জনবল ছয়জন ও সর্বোচ্চ জনবল ৩৭৪ জন। ব্যাংক খাতে আইটি-বিষয়ক জনবল ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অভাব রয়েছে, এটা স্পষ্ট। ৫০ শতাংশ ব্যাংকই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি আর্থিক খাতের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য স্বস্তিকর নয়। যেকোনো সময় বিপর্যকর সাইবার হামলার শঙ্কা রয়েছে। আইটি বিভাগকে, বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করে শুধু মুনাফার দিকে মনোযোগ দিলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন ও জনবলের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। সাইবার নিরাপত্তার সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎপর হওয়া জরুরি।