বিশেষ প্রতিনিধি: রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা তথা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমবায়ের আওতাধীন একটি খ্রিস্টান আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দখল রাখার অভিযোগ উঠেছে আগস্টিন পিউরিফিকেশনের বিরুদ্ধে।
সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সদস্য যুগ্ম নিবন্ধক শেখ মো: কামাল হোসেন এবং সদস্য পরিদর্শক তায়েফ মো: মোশারফ হোসেন চৌধুরীর পারস্পরিক যোগসাজসে; স্পষ্টত: সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে কালবে সুপ্রীম চেয়ারম্যান পদ দখলে রেখেছেন আগস্টিন পিউরিফিকেশন।
জানাগেছে, দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (ঝালব) এর ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করা হয়েছে। আগস্টিন পিউরিফিকেশন অর্থ ও পেশি শক্তিতে বলিয়ান। ফলে ডেলিগেটদের মধ্যে জেল জুলুমের আতংক বিরাজ করছে। যেকারনে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে আইনগত অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়। কালবার অবৈধ চেয়ারম্যান আগস্টিন পিউরিফিকেশন-কে অপসারন এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লংঘনের দায়ে নির্বাচন কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত নিবন্ধক কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সদস্য যুগ্ম নিবন্ধক শেখ মো: কামাল হোসেন এবং সদস্য পরিদর্শক তায়েফ মোঃ মোশারফ হোসেন চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের স্বপ্রণোদিত রুলের দাবি জানিয়েছেন কালবের ডেলিগেটগণ।
সূত্রমতে, দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কালব) এর ১১ নভেম্বর-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত নিবন্ধক কাজী মেসবাহ উদ্দিস আহমাদ আজান মিয়াক শেখ কামাল হোসেন এবং সদস্য
কালবে নির্বাচন করার জন্যে প্রাথমিক যোগ্যতা তথা সিউডিসিসি কোর্স সম্পন্ন করেন নি আগঠিন পিউরিফিকেশন। এমনকি সিউডিসিসি কোর্স করার পূর্বশর্ত ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস ম্যানেজমেন্ট কোর্সও সম্পন্ন করেন নি তিনি। আগষ্টিন পিউরিফিকেশন (রীট পিটিশন নং-১১৩২৭/২০২২) এবং তার পক্ষাবলম্বনকারি একজন পরিচালক প্রার্থী ডেভিড প্রবিন রোজারিও (রীট পিটিশন নং-১১৮০৮/২০২২) কালবের দীর্ঘ দিনের অনুসৃত উপ-আইনের বিধান বাতিলের জন্যে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট উপ-আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের প্রয়োগ স্থগিত করলেও সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেন। অর্থাৎ রীট পিটিশন নং-১১৮০৮/২০২২ এর বিষয়ে কোর্টের আপীলেট ডিভিশনের ফুল বেঞ্চ কর্তৃক রীট পিটিশন ১১৮০৮/২০২২ বিষয়ক ১২/১০/২০২২ তারিখের স্থগিতাদেশ ও নির্দেশনা স্থগিত করা হয়। ফলে সিইউডিসিসি কোর্স সম্পন্ন করার পরও মনোনয়ন পত্রের সাথে দাখিল না করার কারনে নির্বাচন কমিটি খোদ রীট পিটিশনার ডেভিড প্রবিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। তেমনি চেয়ারম্যান প্রার্থী আগস্টিন পিউরিফিকেশনের সিইউডিসিসি কোর্স না করা ও নির্বাচনী তফসিলের শর্ত অনুযায়ী মনোনয়ন পত্রের সাথে সিইউডিসিসি সনদ দাখিল না করার কারনে মনোনয়ন বাতিল করার কোন পত্র ইস্যু বা প্রার্থীতা বহাল রাখার কারন দর্শানো কোন পত্র ইস্যু ছাড়াই তার প্রার্থীতা বহাল রেখে দেন। আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান অথবা মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা স্পষ্টত: কেবল সমবায় আইন, বিধি বা কালবের উপ-আইনের লংখন নয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশেরও লংঘন
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আগস্টিন পিউরিফিকেশন-কে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা সম্পূর্ণ বেআইনী। তিনি বেআইনী ভাবে কালবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৬/৬/২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত কালবের বার্ষিক সাধারন সভায় একজন ডেলিগেট বিগত নির্বাচনে সিইউডিসিসি সনদ ও চেয়ারম্যানের পদে থাকার বৈধতার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আলোচনা করতে চাইলে, চেয়ারম্যান প্রাক্কালে আলবের উপ-আইন সংশোধন চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-১১৮০৮/২০২২ খুলে দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কালব) এর ২১/১১/২০১৯ তারিখের স্বারক নং-৩১৬(২) মূলে অনুমোদিত সমিতির সংশোধিত উপ- আইনের ২৭ ধারার ২,৪,৫ ও ৬ উপধারা স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে উপ-আইন সংশোধনের কারনে কোন প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাখ্যান বা না মঞ্জুর না করার আদেশ প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, উক্ত রীট অতিগোপনীয়তার সাথে করা হয় যাতে প্রতিপক্ষ অবগত হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে না পারে। এমনকি হাইকোর্টের কজলিস্টের তথ্যেও জালিয়াতি করা হয়েছে। কজলিপ্টে রীট পিটিশনারের নাম ডেভিড প্রবিন রোজারিও না লিখে লেখা হয়েছে'প্রবির রেজা' এবং বিবাদি যেখানে কালবের নির্বাচন কমিটি সেখানে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন"। উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ভুল তথ্য সংযোজন করেছে যাতে প্রতিপক্ষ বীটের আদেশ সম্পর্কে জানতে না পারে।
উপ-আইনে কালবের পরিচালিত সিইউডিসিসি কোর্সের কথাই বলা হয়েছে। কালবের উপ-আইন যেহেতু সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক কি অনুমোদিত সেহেতু উপ-আইনে সন্নিবিষ্ট দিইউডিসিসি কোর্সও অর্থ সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত বলে বিবেচিত হবে। তাছাড়া, সিইউডিসিসি কোর্সের প্রণেতা ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব ক্রেডিট ইউনিয়ন (উকু)। কোর্স মডিউল উকু সৃষ্ট। কালব কেবল আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশে উক্ত কোর্স পরিচালনা করে। যেমন এশিয়ার এই অন্যান্য দেশে আকুর মনোনিত সংস্থা উক্ত কোর্স পরিচালনা করে। যে কারনে বাংলাদেশে কালব ব্যতিত অন্যকোন সংস্থা এই নামে না এই রূপে কোন কোর্স পরিচালনা করতে পারে না। ফলে অন্যকোন সংস্থা প্রদত্ত জাল অথবা প্রকৃত কোন সনদই কালবের সিউডিসিসি কোর্স এর বিকল্প হতে পারে না।
সিইউডিসিসি কোর্স কালবে নির্বাচনের জন্য বাধ্যতামূলক বিষয়টি প্রথমত: বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যদের সর্বসমাতিতে কালব এর
কৌশলে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ বন্ধ করে দেন। নির্বাচনের উপবিধিরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক উপবিধিতে সংযোজন এর অনুমোদন নেয়া হয়। কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন পরিচালনায় এই কোর্সের শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারদের জন্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেত্ব কালব এর সদস্যবা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশয়ায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে সিইউডিসিসি কোর্স রেখেছে, উপবিধিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং নির্বাচনী তফসিলেও বিষয়টি বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে ছিল। তারপরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দি মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো- অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ এর 'চতুর্থ মেয়াদের অবৈধ চেয়ারম্যান' আগস্টিন পিউরিফিকেশন তারই বোর্ড সদস্য ডেভিড প্রবীনকে দিয়ে কজলিস্টে নাম বিকৃত করে অসৎ উদ্দেশ্যে রীট করিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাইকোর্ট থেকে রায় পেলেও মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিচক্ষন রায়ে কালব নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সিইউডিসিসি বহাল রাখা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় উপেক্ষা করার ক্ষমতা সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশনের ছিলো না। কিন্তু বাস্তবে তা-ই হয়েছে, তাহলে এখন প্রশ্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় কারণে? উত্তর সহজ। যেহেতু এখানে বিষয়টি আগটিনের। তাই বল, প্রশাসনিক ক্ষমতা, পেশী বল সবই তার পকেটে। মেজবাহ-কামাল-তায়েফ যারা আগষ্টিনকে অন্যায়ভাবে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলো তারা জানেন ও বিশ্বাস করেন এদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো শক্তি নেই অন্যায়ের বিচার করার। তাই এখন কালব এর ডেলিগেটগণ তাদের প্রাণের সংগঠন রক্ষার শেষ ভরসা হিসেবে আশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির দিকে। এমতাবস্থায় সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক আদালত অবমাননার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্ব প্রণোদিত রুল(সুয়োমটো) জাতিই কালবের অসহায় ডেলিগেটদের একমাত্র অবলম্বন হতে পারে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
আগস্টিন পিউরিফিকেশনের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির আরো ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হবে পরবর্তী সংবাদে...