#প্রায় এক যুগ ধরে বাজারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কোটি কোটি টাকা লুটপাট
#সমবায়ের কিছু কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে চুপ
#ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা ও কোন প্রকার পুনর্বাসন পরিকল্পনা ছাড়াই একাধিক ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তি কমিটি সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট কর্তৃক কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ।
#দুর্নীতি দমন কমিশন ও সমবায়ের অভিযোগ করেও সুরাহা নেই
রুবেল আহমেদ: রাজধানী ঢাকার অতি পরিচিত এলাকা শান্তিনগর এলাকায় অবস্থিত ‘শান্তিনগর বাজার’। সমবয় অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত চলমান এই বাজারটি প্রায় দেড়শ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। তথ্য মিলেছে, এই শান্তিনগর বাজারের উপর হঠাৎ পরেছে ১২ শকুনের নজর!
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে থেকেই ঢাকা শহরের শান্তিনগর বাজারে ব্যবসা করে একদল ভালো মানুষ ব্যবসায়ীরা, যারা আজীবন রাজধানী শহরে বসবাসকারী সকল শ্রেণীর মানূষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল রকমের পণ্যসামগ্ৰী বেচাকিনা করে সেবা প্রদান করেন। ঐতিহ্যবাহী শান্তিনগর বাজারের এই শান্তিপূর্ণ অবস্থাটি হঠাৎ তছনছ করে দেবার আবারও একটা গোপন পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে জানান বাজারের দোকান মালিক, শেয়ার হোল্ডার, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, শান্তিনগর বাজারের আজীবনের মালিক শ্রেনীর লোকজন ও শেয়ার হোল্ডারদের সাথে প্রতারণা করে এই বাজারেরই একদল হাইব্রিড ব্যবসায়ীরা কমিটির উচ্চ পর্যায়ের পদগুলো কিনে নিয়ে অনেকদিন ধরেই একধরনের খেইল খেলছে, যা অনৈতিক ও অবৈধও বটে। ক্ষমতাসীন এসব হাইব্রিডরা বাজারের মূল স্তম্ভ দোকান মালিকদের কোণঠাসা করে রেখেছে। একাধিক ডেভলপার কোম্পানির সাথে চুক্তি করে প্রায় অর্ধশতিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র, এমনটাই তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে।
শান্তিনগর বাজার দোকান মালিক সমিতি (রেজিঃ নং -ঢ ৩২১৭) এবং আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড এর শেয়ারহোল্ডার ও দোকান মালিক স্বার্থ সংরক্ষণ ফোরামের একটি লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী শান্তিনগর বাজারে আজ লুটেরা চক্রের রাহুগ্ৰাসের কবলে পরেছে। গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ রাতের আঁধারে বর্তমান কমিটির ১২ সদস্য ধানমন্ডিতে গিয়ে ‘কস্প্রহিনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড’ -এর সাথে চুক্তি করে ৩ কোটি টাকা নিয়ে এসেছে আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড -এর উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২ লঙ্ঘন করে, দোকান মালিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করে, এমনকি ভবিষ্যৎ দোকান প্রদানের চুক্তি ছাড়াই উক্ত ডেভেলাপার বরাবর এ বাজারের সম্পত্তি হস্তান্তর করার চুক্তি করার ফলে গভীর হুমকির মুখে পরেছে শেয়ার হোল্ডার, দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সহায় সম্পদ। এতে করে উচ্ছেদের শিকার হবে দোকান মালিক। চিরতরে বেহাত হবে দোকান মালিকের দোকান। রুজি-রুটি বন্ধ হয়ে অগণিত ব্যবসায়ীগণ হবে ভিখারি।”
লিখিত বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “রাতের আঁধারে সম্পত্তির এ চুক্তির শর্তানুসারে প্রায় ৫০০ টাকা মূল্যমানের ১০২ কাঠা সম্পত্তির মালিকপক্ষ (আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড) আর্থিক মূল্যমান হিসেবে পাচ্ছে মাত্র ২৮%, অন্যদিকে ডেভেলাপার (কস্প্রহিনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড) আর্থিক মূল্যমান হিসেবে পাচ্ছে প্রায় ৭২%। যেকোনো মার্কেটের নিচতলা তথা ১ম তলা এবং ২য় তলা যা সর্বোচ্চ মূল্যে হস্তান্তর হয়। শুধু এই দুই ফ্লোরের মূল্যমান কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা, যা দেয়া হয়েছে ডেভেলাপারকে।”
উল্লেখ্য যে উন্নয়নের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে একের পর এক নতুন নতুন কোম্পানির সাথে চুক্তি চুক্তি খেলা করে আমিনবাগ কো-অপারেটিভ -এর লুটেরা কমিটি এভাবে প্রতিবারই হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
২০০৫ সালে প্রকাশ্য চুক্তিতে ১০ লাখ টাকা গ্ৰহন করে আইডিয়াল হোম বিল্ডার্স হতে কিন্তু গোপন কমিশন বানিজ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন তাদেরকে সাড়ে তিন (৩.৫) কোটি টাকা পরিশোধ করছে।
২০১০ সালে প্রকাশ্য চুক্তিতে ৫০ লাখ টাকা গ্ৰহন করে সিদ্দিক রিয়েল এস্টেট হতে কিন্তু গোপনে ১কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যক্তিগত চেকের মাধ্যমে এনেছিলো। ফলে এখন তাদেরকে পরিশোধ করছে আড়াই (২.৫) কোটি টাকা।
নকশী হোমস হতে কত টাকা নিয়ে চুক্তি করেছে এবং তাদেরকে কত টাকা ফেরত দিচ্ছে তা গোপন করছে।
চুক্তি চুক্তি খেলার মাধ্যমে টাকা লুটের সর্বশেষ কোম্পানি হোলো ‘কস্প্রহিনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড’।
এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ও অধিকার বঞ্চিত শান্তিনগর বাজার দোকান মালিক সমিতি এবং আমিনবাজার কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড এর শেয়ারহোল্ডার ও দোকান মালিক স্বার্থ সংরক্ষণ ফোরাম একটি লিখিত দাবী জানান।
ভুক্তভোগীদের তাদের দাবি:
১. ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ রাতের আঁধারে সম্পাদিত অবৈধ, অসম, লজ্জাজনক চুক্তি এবং আম-মোক্তার বাতিল করতে হবে;
২. উন্নয়নের নামে চুক্তি চুক্তি খেলা বাদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষ্যে এজিএম-এ পাশকৃত উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২ মেনে ডেভেলপার এর সাথে প্রকাশ্য চুক্তি করতে হবে;
৩. শান্তিনগর বাজার যেনো ক্রেতাশুন্য না হয়, সেজন্য বাজার বন্ধ না করে উন্নয়নের কাজ ৩ ভাগে করতে হবে;
৪. উন্নয়ন চুক্তিতে প্রতি শেয়ার হোল্ডারের জন্য ১০০ বর্গফুট -এর অধিক স্পেস বরাদ্দের জন্য শেয়ারহোল্ডার-সোসাইটি-ডেভেলাপার ত্রিপাক্ষিক রেজিস্ট্রার্ড চুক্তি করতে হবে;
৫. উন্নয়ন চুক্তিতে প্রত্যেক দোকান মালিককে তার বর্তমান দোকানের বর্গফুটের সমান একটি দোকান ১ম তলা/নিচতলায় অবশ্যই থাকতে হবে এবং আরেকটি দোকান ৩য়/৫ম তলায় থাকতে হবে। অর্থাৎ দোকানের বিপরীতে প্রত্যেক দোকান মালিকের ২টি দোকান প্রাপ্তির রেজিস্ট্রার্ড চুক্তর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে;
৬. উন্নয়ন চুক্তিতে বিদ্যমান মসজিদ-মাদ্রাসার যথাযথ পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শরিয়তের বিধানানুসারে ওয়াকফকৃত মসজিদে সাধারণ মুসল্লিগণের ব্যবস্থা রাখতে হবে;
৭. উন্নয়ন চুক্তিতে কৃষ্টি ও কল্যান সংসদের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শান্তিনগরের ঐতিহ্যবাহী শান্তিনগর বাজারটি বারবার দুর্নীতি কালো ছায়ায় আচ্ছাদিত করে, তারা কারা? কারা সেই ১২জন দাপুটে যাদের সাথে মিলিত হয়েছে কিছু হঠাৎ ধনী ও হাইব্রিড তথাকথিত ব্যবসায়ীরা যারা এই বাজারটি নিয়ে বার বার ছিনিমিনি খেলছে অনেক বছর ধরেই!
শান্তিনগর বাজারে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের আদ্যপান্তসহ আরো অনেক অজানা রহস্যের অনুসন্ধানী রিপোর্ট নিয়ে এসেছে একদল সংবাদকর্মীরা, যার বিস্তারিত ধারাবাহিক ধাপে ধাপে ভাবে প্রকাশিত হবে, সেসব অজানা তথসমূহ জানতে চোখ রাখুন, আমাদের সাথেই থাকুন…