কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে খামারিদের হেলথ কার্ড ও প্রশিক্ষণ প্রকল্প।
- আপডেট সময় : ০১:৪০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯ ১২৪ বার পড়া হয়েছে
হাফিজুর রহমান শফিক; গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদে অধিকাংশ পশুর চাহিদা মিটিয়ে আসছে দেশীয় পশু । আর এর পেছনে দেশি খামারিদের সাফল্য ও ভূমিকা শতভাগ। দেশের অভ্যান্তরিন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার লক্ষ্যে সরকার বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে খামারিদের হেলথ কার্ড প্রদান অন্যতম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মোট গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮১ লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে ষাঁড় ১ কোটি ৯ লাখ ৭৬টি এবং গাভীর সংখ্যা ১ কোটি ৭২ লাখ ১৩ হাজারটি। প্রতি বছর কোরবানি ঈদে সারাদেশে প্রায় ৪২ থেকে ৪৪ লাখ গরু জবাই করা হয়। এর মধ্যে ৯০ ভাগের মতই যোগান দেয় দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। বাকি গরু ভারত, নেপাল অথবা মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। সরকার দেশে মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে কোরবানির সময়ে যাতে অন্য দেশ থেকে গরু আমদানি করতে না হয় সেজন্য বেশ উদ্দ্যেগি সরকার। যাতে আমদানির উপর কুরবানীর ইদের মৌসুমে নির্ভরশীল হতে না হয়।
এই বিষয় লক্ষ্য রেখে সারাদেশে গরু মোটাতাজাকরণের ওপর ১ লাখ ১০ হাজার ৫৭৫ জন খামারিকে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে ৫০ ভাগ নারীকে খামার কাজে সুযোগ দিয়ে স্বাবলম্বী করতে আগ্রহী সরকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিদের গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে এসব মানুষের জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি কয়েক লাখ মানুষকে স্বাবলম্বীও করা হবে। এসব প্রশিক্ষণ নেওয়া নির্বাচিত খামারিদের একটি করে হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ, বিতরণের সেবা এবং গরুর স্বাস্থ্য, সমস্যা বিষয়ক তথ্য উল্লেখ থাকবে। এই কার্ড প্রকল্প পরিচালক অফিস এবং স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে বিতরণ ও তদারকি করা হবে।
যাদের কমপক্ষে দুটি বাড়ন্ত এঁড়ে, ষাড় বাছুর আছে বা পালন করার সামর্থ্য আছে তাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে প্রতি বছর তিন ব্যাচে ৭৫ জন আগ্রহী প্রান্তিক খামারিকে সুফলভোগী খামারি হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। খামারি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৫০ ভাগ নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে সরকার।
তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫০ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
প্রকল্পের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী মণ্ডল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে গত কয়েক বছর কোরবানিতে দেশীয় গরুতে চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছি। এটা ধরে রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষাধিক খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। খামারিদেরকে গরুর স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করতেই এমন উদ্যোগ। হেলথ কার্ড নিতে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪৯১টি উপজেলায় নির্বাচিত খামারিদের মধ্যে প্রযুক্তির সুবিধা হস্তান্তর করা হবে। দেশের সব এলাকায় গরু পালন করা তেমন একটা হয় না। এলাকার আবহাওয়া ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে গরু পালন পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে। ফলে সব উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। গবাদি পশুর বাসস্থান, প্রাথমিক চিকিৎসা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ, সাইলেজ প্রস্তুতকরণ, খড় সংরক্ষণ পদ্ধতি, উন্নত ঘাস চাষ ও গরুর শারীরিক ওজন নির্ণয় পদ্ধতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন খামারিরা। ইউরিয়া ও মোলাসেস মিশ্রিত খড় পদ্ধতির বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে নিরাপদে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ গরু পালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এটা ধরে রাখতে সারাদেশে লক্ষাধিক খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশের সব জেলায় সমানতালে গরু পালন করা হয় না। যেসব এলাকায় বেশি হারে গরু পালন করা হয় সেই সব এলাকা বেছে নেওয়া হবে। খুব কম সময়ের মধ্যেই সারাদেশে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে বলেও জানান তিনি।