ভারতের ব্যুরো চিফ- অনিরুদ্ধ পাল: সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পেয়েছে শিল্পী সংহতি দাসের নতুন বাংলা গান ‘অন্তত একবার দেখা করো’। গানটি লিখেছেন সুরঞ্জন দাস। সুর এবং কণ্ঠ সংহতির নিজের। এই গানটি ইতিমধ্যেই সংহতির ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত হওয়া শুরু হয়েছে। সংহতি জানিয়েছেন – তার পরবর্তী লক্ষ্য – দুই বাংলার মেলবন্ধন নিয়ে এক ভিন্ন স্বাদের বাংলা গান। তার ইচ্ছা, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে গানটি তিনি বাংলাদের রাজধানী ঢাকা শহরে গিয়েই গানটি রিলিজ করতে চান।
দুই বাংলার মেলববন্ধন নিয়ে গাওয়া গানটির কথাও লিখেছেন সুরঞ্জন। এই গানটির মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে দুই বাংলার মেলবন্ধনকে। বাংলা আমার , বাংলা সবার। কাঁটাতারের সীমানা দিয়ে হয়তো বাংলাকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এপার বাংলা আর ওপার বাংলা। কিন্তু দুই বাংলার মানুষের টান আজও গভীর, অটুট, সুদৃঢ় হয়ে আছে। কোথায় যেন এক বন্ধন রয়ে গিয়েছে। সেটাই সুরঞ্জন তুলে ধরেছে এই গানের মধ্যে।
সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সুরঞ্জনের লেখা ও সংহতির নিজের সুরে ও কণ্ঠে গাওয়া ‘অন্তত একবার দেখা কোরো’ গান মুক্তি পেয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক অরিজিৎ চক্রবর্তী। সঙ্গীত আয়োজক সৌরভ চক্রবর্তী, শিল্পী সংহতি দাস ও গীতিকার সুরঞ্জন দাস সহ বিশিষ্টরা।
গানটির সূচনা নিয়ে সংহতি বলেন- “সৌরভদার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমটাই হচ্ছে বিখ্যাত তিমির বিশ্বাস। তিনি থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত, মিউজিকের জন্য। আমি যখন গানটা কম্পোজ করি তখন আমার তিমিরদার কথা মাথায় এসেছিল। আমি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিমিরদা তখন বলেন যে আমি তো গানটা কম্পোজ করি না তবে সৌরভের নাম্বার দিচ্ছি। তবে তিমিরদার চিন্তা-ভাবনা এখানে সংযোজন করেছেন।“
এই প্রসঙ্গে সংগীতের আয়জক সৌরভ বলেন- “সংহতির সঙ্গে এটাই আমার প্রথম আয়োজন। এই গানটার সংগীত আয়োজনের দায়ি্ত্বে আমি ছিলাম। গানটার ডিজাইন করেছে রুদ্রনীল চৌধুরী এবং গাইয়েছেন সন্দীপন গাঙ্গুলি। এরা দুজনেই খুবই নামি মিউজিশিয়ান আমাদের ইন্ডাস্ট্রির। এটা একদমই অন্যরকমের গান। গানটা যখন প্রথম শুনেছিলাম তখনই আমার অন্যরকম লেগেছিল, ভালো লেগেছিল। তারপর আমরা গানটা তৈরি করলাম, গানটা রেকর্ড হয়েছে ভাইব্রেশন স্টুডিওতে, রাজেন বোসের তত্ত্বাবধানে। গানটা স্টুডিও ভাইব্রেশনে ছিলেন গৌতম বসু। একদম অন্যরকমের গান। সবাই শুনুন। শুনে আমাদের জানান। সবাইকে বলব, আরও বেশি করে বাংলা গান শুনুন। অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। তাহলে আমরা অনেক নতুন কাজ আপনাদের সামনে নিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত হব।“
গানটির ভাবনা সম্পর্কে গীতিকার সুরঞ্জন নিজের প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন- “‘অন্তত একবার দেখা কোরো- এই লাইনটার পর আমার যাদের কথা মনে পড়েছে- আমার প্রচুর বন্ধু বাইরে চলে গেছে। তারা বাইরে চাকরি করে। তাদের মধ্যে অনেকে ব্যাঙ্গালোরে, কেউ মুম্বইতে, কেউ পুণেতে আছে। তাদের সঙ্গে আমার বহুকাল দেখা হয় না। তাদের কথাও মনে পড়ছিল। কিছু মানুষ যারা আমার ফোনের কনট্যাক্ট লিস্টে থেকে যান অথচ তারা পৃথিবীতে আজ আর নেই। অথচ তাদের নাম্বারটা ডিলিট করতে ইচ্ছা করে না। তার কথাও মনে পড়ছিল। এইসব বিভিন্ন মানুষের কথাও মনে পড়ছিল। সেখান থেকেই গানটা লেখা। গানটি রেকর্ডিং-এর দিন সংহতি আমাকে বলল- আমি গানটা গাইতে গাইতে কেঁদে ফেলেছি। নিশ্চয়ই আমার কোনও অনুভূতির কাছাকাছি ওরও তেমন কোনও অনুভূতি হয়েছে। সমান না হলেও হয়েছে। এই যে পিছনে থাকা মানুষগুলি যারা আজ হয়তো আমাদের মধ্যে নেই, কেউ বাইরে থাকেন, কেউ সরে পড়েছেন , এমন অনেক মানুষ আছেন দূরে আছেন তাদের কাছে পৌঁছতে পারছিলাম না, সেই অনেক মানুষ মিলে গানের যে ইন্সপিরেশন তৈরি করে তা যে একজন লেখকের হাত দিয়ে বেরোয় কলম দিয়ে বেরোয় তারপর তা একজন সংগীত শিল্পীর কণ্ঠ দিয়ে বেরোয়। এই সমস্ত মানুষদের মনে রেখেই এই গানটা তোলা। যদি ভালো না লাগে, যতটা খারাপ লাগছে আমাদের জানান। আমরা যেন নিজেদের শুধরাতে পারি। আমরা যে কজন এখানে আছি আপনাদের জন্যই কাজটা করি। আমরা সমালোচনা নিতে পছন্দ করি। সবাই আমার সঙ্গে একমতই হবেন।“
“গানটা সিকোয়েন্স শূনেই বুঝতে পারছি যে এই গানটা একটা প্রেমের গান। গানটি লিখেছে সুরঞ্জন- ওর উপর আমার আস্থা আছে। খুব ভালো একটা গান লিখেছে। সংহতি খুব ভাল সুর করবে। আর সৌরভ বাবাই আমার খুব প্রিয়। ওর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে, ও ভাল মিউজিক করেছে। গানটা নিয়ে আমার পক্ষ থেকে অনেক সাধুবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের বলছি- একটা গান তৈরির পিছনে প্রচুর পরিশ্রম থাকে। ভূমিকা থাকে। যেমন এখানে সৌরভ মিউজিকের আয়োজন করেছেন, সুরঞ্জন লিখেছেন, সংহতি গেয়েছেন, সুর করেছেন। সন্দীপন ভায়োলিন বাজিয়েছে , ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু ভাল মিজিশিয়ান। প্রত্যেকেরই বিশেষ সহযোগিতা আছে। সকলের প্রচেষ্ঠায় একটা গান তৈরি হয়। প্রত্যেককে আমি বলব, গানগুলো একবার শুনুন। তারপর ভাল লাগলে শেয়ার করুন। বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আমি আশা করব, এই গানটা লোকের মুখে মুখে ফেরে তবেই তা সার্থক হবে। “ বলেন সঙ্গীত পরিচালক অরিজিৎ চক্রবর্তী।
“আগে অবশ্যই নিজস্ব গান অরিজিনাল কাজ তো করেছি এবং আমি সবসময় চেষ্টা করি যাতে প্রতিটা গান প্রতিটা থেকে আলাদা হয়। এর আগে যে কাজটি ছিল তার নাম "রাতের আকাশ"। তার আগে যে অরিজিনাল কাজ ছিল "চোখের ভাষা" তারও আগে আমার অরিজিনাল কাজ "দুজনে হারাই কোথাও".সবকটাই আমার নিজস্ব কম্পোজিশন এবং সবকটা গান ই ভিন্ন। তবে এর মধ্যে ‘ অন্তত একবার দেখা করো ‘বিশেষ ভাবে আমার খুব কাছের একটি গান.। গানের কথাটি পড়েই আমার মনে হয়েছিল যে গানটা আমার, আমার নিজের কথা বলছে। এবং প্রত্যেকে আমার মনে হয় নিজেকে গানটার সাথে রিলেট করতে পারবেন।“ যোগ করেন সংহতি।
“বাংলা ছাড়া হিন্দি তো গেয়েছি এবং অসমীয়া ভাষাতেও গান গিয়েছি, ও সেখানে আমার বেশ কয়েকটি অরিজিনাল কাজ রয়েছে কভার /রিমেক তো আছেই. বাংলা সাথে সাথে অসমীয়া ভাষাও আমার ভীষণ আপন এবং প্রিয় একটি ভাষা তাই বাংলার সাথে আসাম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। এবং সেখানের প্রতি দায়িত্ব রেখে সমানভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইনফ্যাক্ট আমার নিজের কম্পোজিশন ‘চোখের ভাষা’ এর অসমীয়া ভার্সনও আমি করেছি।“ “অন্য ভাষায় গান গেয়েছি তার অবশ্যই রেকর্ডিং হয়েছে এবং ভিডিও বানানো হয়েছে কিছু গান আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে কিছু আরও বিভিন্ন নাম করা চ্যানেলে থেকে প্রকাশ পেয়েছে যেমন টাইমস মিউজিক ধনী রেকর্ডস ইত্যাদি।“ যোগ করেন সংহতি।
সঙ্গীত জগতে অনেক শিল্পীর সান্নিধ্যই পেয়েছেন সংহতি। যার মধ্যে সর্বাগ্রে আছেন-আসামের বিখ্যাত এবং বলিউডের জুবিন গর্গ । যিনি প্রতিমুহূর্তে আমাকে উনি অনুপ্রাণিত করেন সাপোর্ট করেন গাইড করেন। এছাড়াও আছেন জনপ্রিয় গায়ক কে কে। পাশাপাশি কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার পরিবারের সঙ্গেও একটা যোগসূত্র তৈরি হয়েছে।