দেড় শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক এলজিইডির হিসেব রক্ষক তরিকুল!
- আপডেট সময় : ১০:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৪ ২৬৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবি এম তরিকুল ইসলাম আগারগাঁওয়ের এলজিইডি অফিসের হিসাব রক্ষক। বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের আগড়া গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, তিনি এবং তার স্ত্রী প্রায় দেড় শ কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুদ একটি অভিযোগ পেয়েছে। দুদক সেটা তদন্ত করছে।
দুদকের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর আগারগাঁও এলজিইডি অফিসে যান। সেখানে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার অর্থ সম্পদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
সূত্র জানায়, তরিকুল দীর্ঘদিন যাবৎ একই দপ্তরে থাকার সুবাদে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকের ছত্রছায়ায় এলজিইডিতে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এসব সম্পদ তরিকুল ও তার স্ত্রী জাকিয়া পারভীনের নামে এবং বেনামে রয়েছে।
তরিকুলের বিভিন্ন সম্পদের বিষয়ে সম্প্রতি খবরের কাগজের নিজস্ব অনুসন্ধানে তার গ্রামের বাড়ি, নিজ জেলা শহর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদকের অভিযোগের সূত্র জানায়, ধানমন্ডি এলাকায় তরিকুলের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাসা নং-৩৪/১। এই ফ্ল্যাট দুটি স্বামী ও স্ত্রীর নামে। যেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকার বেশি। মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড এলাকার ১০ নম্বর রোডে জমিসহ ৮ তলা বাড়ি রয়েছে তার। সেটির বাজারমূল্য আনুমানিক ২০ কোটি টাকার বেশি।
উত্তরায় ৭ তলা আলিশান একটি বাড়ি রয়েছে তরিকুলের। যার বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার বেশি। ইস্টার্ন হাউজিং রূপনগরের ডি/৫ এলাকায় সপ্তম ও অষ্টম তলায় দুটি ফ্লোর কিনেছেন স্ত্রীর নামে, বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় ৫ কোটি টাকা। তরিকুল এত সব সম্পদ গড়েও ক্ষান্ত হননি। আশুলিয়া জিরাবো বাজারের ৩ নম্বর রোডে ২০ কাঠা জমিতে পঞ্চম তলা একটি বাড়ি তৈরি করেছেন। বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় ১৭ কোটি টাকা। মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার ৪ নম্বর রোডের ৬/১১৫ এলাকায় ১৫ কাঠা জমিতে বাড়ি করেছেন। বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরিকুল নিজ শহর যশোরে তার স্ত্রীর নামে ৭ তলা একটি আলিশান বাড়ি এবং নিজ এলাকার আগড়ার মাঠে (বিলে) ঘেরসহ প্রায় ১৭০ বিঘার মতো জমি ক্রয় করেছেন। এর মধ্যে বৌলেনার মাঠে ৯০ বিঘা জমি রয়েছে বলে তার এলাকার বর্তমান মেম্বার ও সাবেক মেম্বার এবং বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান খবরের কাগজকে জানিয়েছেন। এলাকার ভূমি অফিস থেকেও এসব সম্পদ যে তার, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে প্রতি বিঘার বাজারমূল্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমান বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকারও বেশি।
মাঠের এসব জমির মালিক তরিকুলের আপন তিন ভাই ও পালিত ভাইয়ের নামে রয়েছে। তার সব কিছু পালিত ভাই দেখাশোনা করেন। এলাকাবাসী জানান, তার বাবা বিএনপি-জামায়াতের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে তরিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এসব সম্পদ আমার বাবা রেখে গেছেন।’
এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন, শুধু কি চেয়ারম্যান হয়ে এত সম্পদ গড়েছেন, নাকি আগে থেকেই ছিল? এমন প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার সম্পদের বিষয়ে আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে চাই না।’ আপনার বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘সেটা দুদকের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া হবে’।
এই বিষয়ে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর জোনের প্রকৌশলী মো. সুজায়েত হোসেন জানান, ‘এসব ঘটনা তো শুনেছি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে, সেহেতু এটি দুদক দেখবে। আর এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে।’
এই বিষয়ে দুদকের দায়িত্বশীল এক উপপরিচালক অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তরিকুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা তার গ্রামের বাড়ি ও শহরের সব জায়গার অর্থ-সম্পদের বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, যে কোনো অভিযোগই দুদক আমলে নিয়ে তদন্ত করে। কাউকে এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয় না। আগারগাঁও এলজিইডি অফিসের হিসাব রক্ষক এবি এম তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি দুদক খতিয়ে দেখছে। সেটা আমলে নিয়েই তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।
দুদকের এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার অফিসে যাচ্ছেন এবং তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিচ্ছেন। তথ্যপ্রমাণ হাতে পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দুদক।