নড়েচড়ে বসেছে দুদক ও বিটিভি কর্তৃপক্ষ
বিটিভির টাকা আত্মসাৎ করে শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জিএম মাহফুজা! পর্ব ১
- আপডেট সময় : ০৮:১৩:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অগাস্ট ২০২৩ ১২২০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ সহ অসংখ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মোছা: মাহফুজা আক্তার কর্তৃক ২১ কোটি টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অবমাননা, দুর্নীতি, অপকর্ম, নৈতিক অবক্ষয়, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগের জন্য অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) কর্তৃপক্ষ। মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের বহুমাত্রিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক এবং বিটিভি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক সুজিত রায় গত ৭ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ৩ পাতার একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন যার ডায়রী নং ১৭৬৯। দুদক অভিযোগটি গ্রহণ করে বিভাগীয় তদন্তের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রেরণ করেছে যার স্মারক নং ১৫৯৫০ তারিখ ০৭/০৫/২০২৩ইং। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট প্রেরণের জন্য বিটিভির মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে যার স্মারক নং ১৫.০০.০০০০.০২৩.২৭. ০০১.১৭ (অংশ-১) ১৯২ তারিখ: ২৯.০৫.২০২৩। ইতোপূর্বেও দুদক বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরো ২ বার তদন্তের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বিটিভিতে পত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ফাইলগুলো গায়েব করা হয়।
অন্যদিকে মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে গত ১৯.০৩.২০২৩ তারিখে (ডায়রি নং-৯৪০) সংগীত শিল্পী অসিত রঞ্জন বিশ্বাস এবং ১৯.০৩.২০২৩ তারিখে (ডায়রী নং-৯৪১) শিল্পী সমাজের পক্ষে সংগীত শিল্পী জনাব মো: রুবেল মিয়া মহাপরিচালক বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ দাখিল করেছেন। এ ব্যাপারেও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
দাখিলকৃত লিখিত অভিযোগগুলো থেকে জানা গেছে, বিটিভি ও ঢাকা কেন্দ্রের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে অবৈধভাবে নিজেই জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত এক বছরে মোট ৬৩৯ টি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছেন। অন্যদিকে অসংখ্য অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার না করে ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান কাটপিচ করে অনুষ্ঠান নির্মাণ দেখিয়ে মোট ৭৯ লাখ ৪ হাজার ৫৯০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া তিনি এক কোডের টাকা আরেক কোডে ব্যবহার দেখিয়ে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৫০ টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি পিপিআর-এর নিয়ম না মেনে, কোন টেন্ডার আহবান না করে, দৈনিক ২/৩টি সরাসরি ক্রয় দেখিয়ে মাল না কিনেই টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন। অন্যদিকে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরেও কোন প্রকার পিপিআর-এর নিয়ম না মেনে দৈনিক ২৫ পঁচিশ হাজার টাকা করে ক্রয় দেখিয়ে ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৫৯০ টাকা নগদ আত্মসাৎ করেন। এই ক্রয়ের কোন বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি এমনকি মালামালও কোন কর্মকর্তা/কর্মচারি রিসিভ করেননি।
মাহফুজা আক্তার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে যোগদান করার পরই জিএম বাংলো মেরামত, এসি সংযোজন, সোফা, টেবিল, দামি সোপিচসহ বিভিন্ন ফার্নিচার এবং পর্দা ক্রয় দেখিয়ে ২১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৮ টাকা aডিজাইন শাখার কোড থেকে আত্মসাৎ করেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচালক ডিজাইন মীর আহসানুল আলম তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলেও মাহফুজা আক্তারের ভয়ে তৎকালীন মহাপরিচালক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্টে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যার সূত্র নম্বর-তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ১৫.০০.০০০০.০২৩.১২.০১৯. ১৯-৩৬৭; তারিখ: ০৩.১১.২০১৯। এই রিপোর্টের পর তার পদোন্নতি আটকে যায় কিন্তু পরবর্তীতে একজন রাজনীতিবিদ এবং একজন দুর্নীতিবাজ সাবেক সচিবের সক্রিয় হস্তক্ষেপে প্রায় এক বছর পর তার পদোন্নতি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও একাধিক বিশিষ্ট শিল্পীরা জানান, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ
কয়েক বছর রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকায় মাহফুজা আক্তার দ্রুতরা জনৈতিক পরিচয় পাল্টানোর চেষ্টা করেছেন। অবশ্য আমাদের সন্দেহ রয়েই গেছে যে, তিনি বিএনপি-জামাতের কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন কিনা? অন্যদিকে, মাহফুজা আক্তারের স্বেচ্ছাচারি এবং চারিত্রিক অবক্ষয়ের বিষয়টি সবার মুখে মুখে থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তাকে প্রমোট করা হচ্ছে তা নিয়ে এখন সবার মনে প্রশ্ন! অনেকে মনে করছেন, কিছু দুর্নীতিবাজ-চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ এবং আমলা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই মাহফুজা আক্তারকে ব্যবহার করেছেন। ফলে মাহফুজা আক্তারও তাদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে।
বিটিভি ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনেক কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাহফুজা আক্তার সবসময় বড় অংকের টাকা ও উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। বড় বড় কর্মকর্তাদের হাতে রাখতে নিজ খরচে তাদের বাড়িতে কাজের মেয়ে, দাড়োয়ান ও মালিও সাপ্লাই দেন। এই লোকদের মাধ্যমে মাহফুজা বড় কর্তাদের গোপন খবর সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তী সময়ে তাদের জিম্মি করেন। এই পন্থায় তিনি গত ০১ বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৫১জন নিয়োগ দিয়েছেন যাঁদের বেতন হয় বিটিভি থেকে কিন্তু কাজ করে বিভিন্ন কর্মকর্তার বাসায় ও ব্যক্তিগত অফিস কিংবা বাগানে। বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কলাকুশলীসহ অনেকেই বলছেন, এ দুর্নীতি, অপকর্ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রে সবসময় একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। কেপিআই প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার কারণে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এতে বিটিভির ভাবমূর্তিই শুধু নয়, রাষ্ট্রেরও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে।
অনেকেই বলেন, চলনে-বলনে কেতাদুরস্ত হ্রদমহিলার আড়ালে পচে যাওয়া নষ্ট সমাজের প্রতিচ্ছবি বিটিভির এই কর্মকর্তা। তার দুর্নীতি ও অপরাধ সাম্রাজ্যের বিষয়টি এখন বিটিভিতে ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ক্ষমতার দম্ভ ও আস্ফালন থেকে রেহাই পাচ্ছে না বিটিভিসহ অন্যান্য অফিসের অনেক বড় বড় কর্মকর্তাও। ইতোমধ্যেই দেশের প্রথম সারির কয়েকটি দৈনিকসহ সোস্যাল মিডিয়ায় তার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তদুপরি কেন মাহফুজা আক্তারের এই আস্ফালন? সমাজকি এভাবেই পচে যাবে? এ প্রশ্ন এখন সকলের।
সর্বশেষ জেনারেল ম্যানেজার নাসির মাহমুদ বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, মিথ্যাচার এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কয়েকবার মাহফুজা আক্তারকে লিখিত এবং মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
তাঁরা বলেন, মাহফুজা আক্তারের রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি এবং অনিয়ম। বিশেষ করে জাইকা প্রজেক্টের যে দুর্নীতি করেছিল তখনো তাকে কয়েকবার শোকজ ও সতর্ক করা হয়েছে কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি তার ক্ষমতার উৎস যাই হোক না কেন আমরা যেহেতু বিটিভিকে ধারণ করি; লালন করি সুতরাং এক মাহফুজাকে কেন্দ্র করে বিটিভির ভাবমূর্তি এভাবে বারবার ক্ষুন্ন হতে দেয়া যায় না। তাই তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরী। কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে মাহফুজা আক্তারকে একাধিকবার শোকজ করলেও তারা তাকে কখনও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হননি। টিভি সংশ্লিষ্ট এই
কর্মকর্তারা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাহফুজা আক্তার মন্ত্রণালয়কে তোয়াক্কা করেন নি। একাধিকবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকেই রেজিস্ট্রেশন করে বিদেশ গমন করেছেন এবং অন্য মানুষের প্রোডাকশন নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে পুরষ্কার বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি কঠোর নিয়ম থাকলেও এসব পুরষ্কারের কর/ভ্যাটও ফাঁকি দিয়েছেন তিনি। এত ক্ষমতা কিভাবে আসে, সেটাই সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়।
সূত্র জানায়, বিটিভি, ঢাকা কেন্দ্রের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাহফুজা আক্তার
তার অফিস কক্ষে গত ১৯ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি (ছবি) পুন:স্থাপন করে বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশেই তার ব্যক্তিগত নিজের ছবি স্থাপন করেন। বিষয়টি বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিল্পীবৃন্দের দৃষ্টিগোচর হলে তারা
প্রতিবাদ করেন। জিএম মাহফুজা আক্তার প্রথমে তোয়াক্কা করেননি কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি আরো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের চাপে ১৫ দিন পর অর্থাৎ গত ০২ ফেব্রুয়ারি মাহফুজা আক্তার ছবি নামিয়ে ফেলেন।
সুতরাং সংবিধান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আইন এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল ছবির পাশে ব্যক্তিগত ছবি টাঙ্গানো দেশে প্রচলিত আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। অন্তত: এ ক্ষেত্রে জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রণয়ন আইন, ২০০১ নামে অবহিত; বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ (২০০১ সালের ২ নং আইন) প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এখানেও সংবিধান অসহায়।
বিটিভির পরিচালক (অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা) জনাব জগদীশ এষ সম্প্রতি মাহফুজা আক্তার কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার প্রতিকৃতি অবমাননা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে বাংলাদেশ টেলিভিশনের
কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিল্পীদের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তাসহ মাহফুজা আক্তারের অনিয়ম
ও দুর্নীতির বিষয়গুলো তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মহাপরিচালক
বরাবর লিখিত পত্র দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে লেখা হলেও
অশুভ শক্তির কারণে ফাইলটি স্তুপ হয়ে আছে।
সরকারের নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সূত্রে জানা যায়, মাহফুজা আক্তার ছাত্র জীবনে ইসলামি ছাত্রী সংস্থা ও পরবর্তী সময়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন অর্থাৎ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এনএসআই রিপোর্টে জানায়, মাহফুজা আক্তারের সাথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এসএসএফ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ফাতমী আহামদ রুমী এবং তার ভাই প্রফেসর রফিকুল আলম রুমীর ছত্রছায়ায় ছাত্রদলের রাজনীতি, টেন্ডারবাজী, নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল অপকর্মের সাথে লিপ্ত ছিলেন। এমনকি নিজের চাকুরীটাও বাগিয়ে নিয়েছেন। তার নির্বাহী প্রযোজক থেকে প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের প্রাক তথ্য যাচাই-এর সময়
পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়েছেন এই পুরস্কর মহিলা। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে জিএম থাকাকালীন কবীর বাবু (শাহজাহান কবীর) নামে একজন অতিথি প্রযোজককে দিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এবং সেটি জাপানের এক প্রতিযোগিতা জমা দিয়ে পুরষ্কারের অর্থও জিতে নিয়েছেন। পরে পুরস্কারের অর্থ নিয়ে ঝামেলার কারণে কৌশলে তাকে জানের ভয়ভীতি দেখিয়ে চুক্তিভিত্তিক চাকুরি থেকেও অব্যাহতি দিয়ে দেন। এমন হাজারো অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা কেন্দ্রে বদলি হয়ে আসার পর এ কেন্দ্রের অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের দুর্নীতির অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। বিটিভির সূত্র বলেছে, বিটিভির ইতিহাসে এবার সেরা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রতিমাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় হতো মাহফুজা আক্তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ২ মাসেই সাড়ে ১৯ কোটি টাকা খরচ দেখিয়েছেন। এটি অস্বাভাবিক খরচ নাকি কোটি টাকা আত্মসাৎ তা নির্ণয়ের জন্য মহাপরিচালক তাঁকে শোকজ করেছেন। অনেকে বলেছে জিএম মাহফুজা আক্তার এবং অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো: আতাউর রহমান দুজন মিলে তাড়াহুড়া করে প্রায় ৩ কোটি টাকার নয়-ছয় করেছেন। তারা বলছেন খুব দ্রুত সময়ে আতাউর রহমানের ১টি ফ্ল্যাট এবং ১ টি স্লট কেনা এবং গ্রামের বাড়ী নির্মাণের কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন আতাউর রহমান। এর ফলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটির বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। অর্থ সংকটে ও জিএমের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাএবং ব্যর্থতায় বিটিভির ৭০-৮০ শতাংশ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং বন্ধ রয়েছে। অনেক শিল্পীর সম্মানীর টাকার চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হচ্ছে। বিটিভির যেসব কর্মচারী রাজস্ব খাতে নেই, তাঁরা ছয় মাস ধরে কোনো টাকা পাচ্ছেন না। এমনকি গাড়ির জ্বালানি কিনতে না পারায় অতিথিদের যাতায়াতে কোনো যানবাহনও দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
চলবে…. বিস্তারিত থাকবে দ্বিতীয় পর্বে।