পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর যৌনপেশায় জড়ানোর গল্প!
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় : ১১:৫৫:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯ ১৯৬ বার পড়া হয়েছে
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সুমি। জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। রাজধানীর মিরপুরে বেড়ে ওঠা। পড়েন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। এরই মধ্যে তিনি জড়িত হয়েছেন যৌনপেশায় বা কলগার্ল সার্ভিসে।
সুমি বলেন, এইসএসসি পাশের পর যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই তারা বাবার ছোট্ট ব্যবসাটি চরম লোকসানে পড়ে। সহযোগীর প্রতারণায় ২৫ লাখ টাকা পুঁজি হারান।
এরই সঙ্গে কপাল পোড়ে পুরো পরিবারের। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়াতে সুমিকেই পুরো পরিবারের হাল ধরতে হয়। এরই একপর্যায়ে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন। এর পর শুরু হয় এক নতুন জীবন।
সম্প্রতি সময় টিভির অনুষ্ঠান ‘সময়ের অসঙ্গতি’তে খোলামেলা কথা বলেছেন সুমি। তুলে ধরেছেন কীভাবে তিনি এই পেশায় এসেছেন।
সুমি বলেন, তার বাবার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তাদের খুব দুর্দশা শুরু হয়। ঋণ বাড়তে থাকে। অনেক দিন বাসায় খাবার থাকতো না।
শুরু সুমি টিউশনি করে চলার চেষ্টা করেন। এর পর তিনি বিডিজবসের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে চাকরির চেষ্টা চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে এক জায়গা থেকে তিনি ডাক পান। গুলশান ১ নম্বরে তাদের অফিসে যান সুমি। পরে তাকে ইন্টাভিউয়ের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল রেডিসন।
সুমি বলেন, ‘আমি প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না, এটা কি কোনো অফিস, নাকি… নরম্যালি সোফাটোফা ছিল…। তো আমি বসলাম। অনেক্ষণ পরে একটা লোক আসলো, অফিসার টাইপের। আমি তখনো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। কারণ তখনও আমার মাথায় ঘুরছিল, জবটা আমার দরকার। জবটা কনফার্ম করতে হবে। আমার জবটা পেতে হবে। আমার পেট চলবে হবে, পড়াশুনা করতে হবে।’
‘আমি ভাবছি যে ইন্টারভিউ হয়তো এভাবে নেয়, এটা ওদের সিস্টেম। আমি অতকিছু বুঝতে পারিনি। এর পর উনি আসল। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম, যে লোকটাকে অফিসার বলা হলো, ওইলোকটা আমাকে যে নিযে আসলে অফিসার লোকটাকে কিছু টাকা ধরায় দিচ্ছে। আমার তখন মেনে একটু খটকা লাগলো, ওনাকে কেন উনি টাকা ধরায় দিচ্ছে?’
‘আমি একটু ভয়ও পেলাম, এরকম সিচুয়েশনে তো কখনো পড়ি নাই। আর আমি একা ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে কী হবে। তো উনি আমার কাছে আসলেন, প্রথম যিনি আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন উনি। আমি ওনার দিকে তাকায় ছিলাম। আমি ওনাকে প্রশ্ন করলাম, আমার ইন্টারভিউ কি হবে? তখন ওনার হাতের টাকা আমাকে দেখিয়ে বললো, ‘‘বুঝতে পেরেছে তো তুমি?’’ আমি বললাম, আমি কী বুঝতে পারবো? আপনি বলেছিলেন এখানে স্পা করানো হবে, মেয়েদের বা বিউটি পারলারে একটা কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন তো আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’
‘তো উনি বললেন যে, ‘‘বাকিটা তোমার দায়িত্ব’’। আমি বললাম, বাকিটা আমার কাজ? আমি তো বুঝতে পারলাম না কিছু। উনি বললেন যে, এখন আর কিছু বুঝতে হবে না, যা হবার তা হয়ে গেছে।’
সুমি বলেন, ‘আমি কী করবো তখন? আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি কি এখানে বসে থাকবো, নাকি চলে যাবো, নাকি চিৎকার করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এরপর উনি বললেন যে, কাজটা তোমাকে করতে হবে, ওনাকে সময় দিতে হবে। এতটুকু বয়স আমার হয়েছে যে কাউকে সময় দেওয়ার মানে কী তা বোঝার। তখন আমি বললাম যে, আমার পক্ষে এটা কখনোই সম্ভব না। আমি এটা পারব না।’
‘উনি বললেন, তুমি যদি জবটা করতে চাও, তোমার যদি টাকার দরকার হয়, যদি পেট চালাইতে চাও, যদি বেঁচে থাকতে চাও, তাহলে তোমার এই কাজটা করা দরকার।’
‘আর আমার সমস্যাটা ওনাকে বলেছিলাম ইন্টাভিউয়ের সময়। আমার পরিবারের কী অবস্থা, সেই সুযোগটাই উনি নিয়েছেন। আর ওরা আমাকে হুমকিও দিয়েছিল, আমি যদি এটা না করি তাহলে আমার কাগজপত্রও (ইন্টাভিউয়ের জন্য জমা নেওয়া সনদ) ফেরত পাব না। এটা বলে উনি চলে গেলেন।’
তখন আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। চুপচাপ বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। আমি ভাবলাম, আমার পড়াশুনা করা দরকার; আমি ভাবলাম যে আমার ছোট ভাই আছে, বোন আছে, আমার বাবা মা আছে, আমার তখন মনে হলো আমার পরিবারের গার্ডিয়ান আমি। আমি যদি ওদেরকে একটা হাত বাড়াই, আমি যদি ওদেরকে হেল্প করি, তাহলে মনে হয় ওরা ভালো থাকবে।’
‘এর পর ওইলোক আসলো। উনি বললো, এখান থেকে বের হওয়া যাবে না। আমি ওনাকে রিকোয়েস্ট করলাম, আমি ওনাকে বললাম, আমাকে প্লিজ যেতে দেন,’ বলতে বলতে চোখে পানি চলে আসে সুমির। বলেন, ‘উনি আমার কোনো কথা শোনেননি। উনি আমাকে অনেক জোর করেছেন। এবং উনি…।’
এরপর নিজেকে কিছু সামলে নিয়ে সুমি জানান, ওই কাজের জন্য তিনি ১০ হাজারের মতো টাকা পেয়েছিলেন। পরে তিনি বাসায় ফিরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের সবার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেন, থাকে বেঁচে থাকতে হবে।
https://youtu.be/pKegAjqcn5Q
‘পরে আমার মনে হতো লাগলো যা হবার তা তো হয়েই গেছে। আমি কেন মরে যাব? আমি পরিবারের জন্য বাঁচবো। পড়াশুনা শেষ করবো।,’ বলেন সুমি।
এর পর সুমিকে জানানো হয় মাসে তাকে এরকম তিনটা ‘কাজ’ করতে হবে। এরপর সুমি ফেসবুকে কলগার্ল সার্ভিসের একটি গ্রুপেও যুক্ত হন। সেখানেও ‘কাজ’ পেতে থাকেন। গ্রাহকদের মধ্যে সরকারি চাকুরিজীবী, বেসরকারি চাকুরিজীবীরাই বেশি। কিছু ছাত্রও আছে বলে তিনি জানান।
সুমি জানান, কিছু বাসাবাড়ি আছে, পরিবার নিয়ে থাকে এমন। সেখানে তিনি ও তার মতো অনেকে গ্রাহক নিয়ে যান। বিনিময়ে তাদের দু-তিন হাজার টাকা দেন।
সুমি তার জীবনের কাহিনী শেষ করেন কান্না আর আকুতি দিয়ে, ‘আমি এই জীবন থেকে বের হতে চাই। জানি না কবে পারবো। আমি সুন্দর জীবন, সুন্দর সংসার চাই।’