ডোন্ট কেয়ার এনিথিং
সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী মারুফ যেন আইনের ঊর্ধ্বে
- আপডেট সময় : ১০:৪৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩ ৩১২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনি ক্ষমতাধর প্রকৌশলী। স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারী চাকরিজীবি। যার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন সহ দীর্ঘ সময় মানিকগঞ্জে কর্মরত এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে হাজারো দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পড়েছে দূর্নীতি দমন কমিশনে। তিনি মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস ইল হাসান মারুফ । অপরাধ ও অভিযোগ বা যতই সংবাদ প্রচার হোক না কেন কোন কিছুই পরোয়া করেন না তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে অসংখ্য সংবাদমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশের পরেও টনক নড়েনি ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের।
সূত্র বলছে, নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস ইল হাসান মারুফ দীর্ঘদিন যাবত মানিকগঞ্জে আছেন। তাই স্বাভাবিক কারণেই এই এলাকার সবকিছু তার জানাশুনা। তাকে কোন টাকা না দিলে কোন কাজ করে না তিনি। তার মদদে মানিকগঞ্জ জেলার সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে বহু প্রতিষ্টান নির্মান করেছে দখলকারীরা। যেসব অপকর্ম তার ইশারায়ই হচ্ছে। শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম। কৌশলে তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী নিজ কর্মস্থলে রাত্রী যাপনের কথা থাকলেও বছরজুড়ে নিয়মিত রাত্রী যাপন করেন শশুর বাড়ী সাভারে। ‘স্বামী-স্ত্রী’ দুজনই সরকারী কর্মকতা হওয়ায় সরকারী অর্থ আত্মসাতের মিশনে মাঠে নেমেছে এই দম্পতি।
সূত্র বলছে নির্বাহী প্রকৌশলী মারুফ মানিকগঞ্জে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির দোকান খুলে বসেছেন। এর আগেও তিনি আখানে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি অলৌকিকভাবে সেই বদলি বদলে ফেলেন এবং আবারও পদোন্নতি নিয়ে একই জায়গায় ফিরে আসেন। কারণ তিনি জানেন এইখানে প্রতি মাসে কোটি টাকা কামানোর উপায়।
সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার অপরাধ ও অপকর্মের সংবাদ প্রচার করার পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পায়তারা করেন এমনকি থানায় অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে রূপান্তর না পেয়ে রহস্যজনক কারনেই রাস্তা থেকে ফিরে আসেন এবং অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। সরকারি নাম্বারে ফোন দিলে তিনি কখনোই রিসিভ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে সর্বমহলে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে কোন সাংবাদিক খোঁজখবর নিতে গেলে বিভিন্ন মাধ্যমে সেসব সাংবাদিকদেরকে মামলার হুমকি দিয়ে থাকেন। এমনকি তথ্য অধিকার আইন তোয়াক্কা করেন না তিনি।
সূত্র জানায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর চন্দ্রা রোডের সাথে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প কারখানা। এখানকার বেশীর ভাগ কারখানা ‘সওজে’র কাছ থেকে প্রবেশপথের অনুমতি না নিয়ে বানিয়েছে প্রবেশপথ। আর এসব পথকে পুজি করে প্রকৌশলী মারুফ হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকা।
এছাড়াও ইতিপূর্বে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বাথুলিতে লোড কন্ট্রোল (ওজন নিয়ন্ত্রণ) স্টেশনে অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক হতে রশিদ ছাড়া টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মারুফের বিরুদ্ধে।
একাধিক পরিবহণ থেকে রশিদ ছাড়া একাধিক ট্রাক হতে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে কেনো? এমন প্রশ্নে লোড কন্ট্রোল স্টেশনের ম্যানেজার দাবী করেন, আমাদের স্থায়ী নিয়োগের কেউ টাকা নিচ্ছে না। কিছুদিন আগে টাকা নেওয়ার অপরাধে অস্থায়ী তিন কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেগনাম রিসোর্স সেন্টার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হোসেন জনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, আমাদের কেউ টাকা আদায়ের সাথে যুক্ত নেই। এখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে শুধু বলা হয়েছে অতিরিক্ত ওজনের ট্রাকচালকদের সতর্ক করার জন্য। কোন ট্রাক জরিমানা নেওয়ার অধিকার আমাদের দেওয়া হয়নি।
তাহলে আপনাদের এখানের একাধিক কর্মচারীকে কিছুদিন আগে টাকা আদায়ের অভিযোগে কেন প্রত্যাহার করা হলো? এ প্রশ্নের উত্তরে রেগনাম রিসোর্স সেন্টার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বলেন, তারা কেউ আমাদের স্থায়ী নিয়োগের কেউ না। আপনাদের ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানে কিভাবে অন্যরা কাজ করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি সওজ থেকে লোড কন্ট্রোল (ওজন নিয়ন্ত্রণ) স্টেশনে ইজারা নিয়েছি।
গোটা মানিকগঞ্জের সড়কের সকল কিছুই মানিকগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউসুল হাসান মারুফ নির্দেশনায় হয়ে থাকে। তিনি কি অস্থায়ী ভাবে লোক নিয়োগের বিষয়ে আপনাকে নির্দেশনা দিয়েছে? আমি এ বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি আমার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কেউ এখানে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সাথে যুক্ত না।
গাউসুল হাসান মারুফ নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে আশার আগে এই মানিকগঞ্জে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসাবে ২০১৫ সালের জানুয়ারির থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার পরে বদলি হলেও পরবর্তীতে ২০২০ সালের মার্চে পুনরায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে আসার পর থেকে তাঁর ইচ্ছার বাইরে এখানে কিছু হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকগঞ্জ ‘সওজ’ এর একাধিক কর্মচারী এ প্রতিবেদককে বলেন, তার কথা ছাড়া কোন কিছু হয়না। তিনি আসার পর থেকেই এই অফিসে যত অনিয়ম শুরু হয়েছে। শুনেছি আমাদের স্যারের (গাউস ইল হাসান মারুফ) অনেক ক্ষমতা। তার সঙে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়রে সচিবের জোড়ে তার এই অপকর্ম করলেও বলার কেউ নেই।
এই বিষয়ে মানিকগঞ্জের সহজের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস ইল হাসান মারুফ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ( পর্ব –১ )