রাজউকের দুর্নীতি থামাবে কে?
রাজউকের অফিস সহকারী আনোয়ারের এত সম্পদের উৎস কি!
- আপডেট সময় : ০৩:৪৭:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
এইচ আর শফিক: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট কি জাদুর কাঠি আছে যার স্পর্শে তারা রাতারাতি সম্পদের পাহাড় বনে যান? দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রায় নিয়মিত এমন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবাদ ফলাউ করে প্রচার করা হয় তবুও ছিটেফোঁটা পরিমাণ টনক নড়েনা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের।
রাজউকের কর্মচারীদের ঘুষ দুর্নীতির বেপরোয়া গতির লাগাম টেনে ধরা অসম্ভব। এমন আরেকজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন। তথ্যগোপন করে চাকরিতে যোগদানসহ দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন একাধিক বাড়ি-গাড়ি-প্লট এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) লোন-৮ এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আনোয়ার হোসেন আলম।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে কর্মচারীর অবৈধ আয়ের উৎস অনুসন্ধান ও সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের আবেদন সহ একটি অভিযোগ জমা পড়েছে।
উক্ত অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জোন-মা এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আনোয়ার হোসেন আলমের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদানের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, টানা দুই যুগ একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বর্তমানে নগদ অর্থ, বাড়ি, গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাটসহ কয়েক কোটি টাকার মালিক এই আনোয়ার। ১৯৯৮ সালের ১৩মে মাষ্টাররোলে রাজউকে যোগদান করেন আনোয়ার হোসেন আলম। তখন নিয়োগপত্রে আনোয়ার যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন তা হচ্ছে- গ্রাম: আরামনগর বাজার, পোঃ সরিষাবাড়ী, থানা সরিষাবাড়ী, জেলা: জামালপুর। আলমের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ন 6422975695 এবং তার জন্ম তারিখ: ১৫ জুন ১৯৭৩ইং। অথচ ২০১৩ সালের ২৪ ে আনোয়ার হোসেন আলমের টিন (ট্যাক্সপেরার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-৭২৫-১১৪০১০৫৬) থেকে জানা গেছে, আলমের গ্রাম: মাজনাবাড়ি, পো: কুমারিয়াবাড়ি, থানাঃ কাজীপুর, জেলা: সিরাজগঞ্জ। সরকারী চাকুরী বিধিমতে আলম তথ্য গোপন করেছেন- যা দণ্ডনীয় অপরাধ । এদিকে রাজউক প্রধান কার্যালয়ের (অর্থ ও নিরীক্ষা শাখা) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ফারহানা সিদ্দিকা সম্পর্কে আলমের স্ত্রী। পদ-পদবীতে ক্ষুদ্র হলেও আনোয়ার ফারহানা দম্পতি বাড়ি-গাড়ি-এট- ফ্ল্যাটসহ অর্থ-বিত্তে প্রভাবশালী। আনোয়ার-ফারহানার সম্পদের বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক গত ৮ আগষ্ট রাজউকের সর্বস্তরের কর্মচারির পক্ষ হতে আপনার দপ্তরে (দুদক) একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলাম। ওই অভিযোগে উল্লেখ ছিলো- “আনোয়ার ও তার স্ত্রী ফারহানা স্থাবর-অস্থাবর সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক! খেল অনুযায়ী রাজউকের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে সাকুল্যে বেতন মাত্র ২৫/২৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মাসে গড় আর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সামান্য টাকায় সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। অথচ আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি বাড়ি-গাড়ি-প্লট-ফ্ল্যাটসহ অর্থবিত্তে ফুলে-ফেঁপে একপ্রকার রাজকীয় জীবন-যাপন করছেন!” তবে দুঃখের বিষয়- দুদক অদ্যাবধি এ বিষয়ে কে ব্যবস্থা গহণ করেনি।
আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ফারহানার মূল কাজই হচ্ছে রাজউকের বিভিন্ন বিষয়ে তদবীর করা। তদবীর বাণিজ্য করেই তারা অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আনোয়ারের কর্মস্থল রাজউকের জোনাল অফিস (জোন-৮) নারায়ণগঞ্জে হলেও তিনি অধিকাংশ সময়ই রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে স্ত্রী ফারহানার সান্নিধ্যে থাকেন। এরপর স্বামী-স্ত্রী দু’জন একে অপরের সহযোগিতায় রাজউকে বিভিন্ন ধরনের তদবীর করেন। চাকরিতে যোগদানের পর গত দুই যুগ তদবীর বাণিজ্য করেই নগদ অর্থ, বাড়ি-গাড়ি-প্লট-ফ্ল্যাটসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি।
আনোয়ার-ফারহানা দম্পতির সম্পদের ফিরিঙ্কি :
রাজধানীর উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে ২টি বিলাশবহুল ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ১টি বাড়ি, পূর্বাচলে ৩+৩ কাঠার দুটি প্লট উত্তরখান মাস্টারবাড়ী এলাকায় সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট ছাড়াও শশুর বাড়ীর আত্মীয়দের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন আনোয়ার-ফাহানা দম্পতি। এছাড়াও রাজধানীর উত্তরা ১৮ নং সেক্টরে ৯নং ভবনের উপ ফ্লোরে ১৬৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। ১৬/২, উত্তর পশ্চিম যাত্রাবাড়ি, ওয়াসা রোডে প্রথমে ১টি ফ্ল্যাট কিনলেও পরবর্তীতে ৯ তলা এই ভবনের প্রায় সবগুলো ফ্ল্যাট আত্মীয়দের নামে কিনেছেন আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি। ঢাকা মেট্রো-গ, ৪২-০১৩৮ বিলাসবহুল গাড়িটি আনোয়ার-ফারজানা দম্পতির। প্রতিমাসে গাড়ির পেছনেই ৫০/৬০ হাজার টাকা ব্যয় করেন আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি, যা তাদের দু’জনের বেতনের সমতুল্য। এছাড়াও আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গুলশান এস্টেটের ফাইল গায়েবে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আনোয়ার হোসেন আলমের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ১৯ অক্টোবর আনোয়ারের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার।
অভিযোগকারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম উক্ত কর্মচারীর আয়ের উৎস ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আর্জি করেছেন।
রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রায় নিয়মিত প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ভাই এখানে চাকরি নিয়েও আসলে সামাজিকভাবে হওয়া প্রতিপন্নতার শিকার হচ্ছি। এমন সব নিয়মিত খবরে আত্মীয়-স্বজন সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না।
আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এসব অসত্য বানোয়াট। এসব আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তের একটি অংশ।