ঢাকা ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বিএনপি নেতা মাহিদুর রহমান নেতৃত্বের বিস্ময় Logo স্বৈরাচারের দোসর প্রধান বিচারপতির ধর্ম ছেলে পরিচয়ে মোজাম্মেলের অধর্ম! Logo রাজধানীতে মার্কেট দখল করতে গিয়ে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আটক Logo স্কুলের ভেতরে নিয়মিত চলে তাশ ও জুয়া! Logo চাঁদা চাওয়ায় দাকোপে ৫ আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা Logo ভোলা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আল আমিন সম্পাদক শামসউদ্দিন Logo বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর উদ্যোগে দুমকিতে ক্যারিয়ার সামিট অনুষ্ঠিত Logo সওজ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রচারিত প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ Logo বিপ্লবী গান, আবৃত্তি এবং কাওয়ালী গানে মেতেছে আশা বিশ্ববিদ্যালয় Logo ছত্রিশ টাকার নকলনবীশ প্রভাবশালী কোটিপতি!




সোনারগাঁও চেক স্টেশনে মাসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • আপডেট সময় : ১২:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১৬০ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বৈধ-অবৈধ কাঠ পরিবহনে প্রতিমাসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলছে বন বিভাগের সোনারগাঁও চেক স্টেশনে। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রতিদিন শতাধিক কাঠ বোঝাই ট্রাক সোনারগাঁও স্টেশন অতিক্রম করে। এই স্টেশনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্য চলে।

ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন এই চেক স্টেশনটি অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধের জন্য স্থাপিত হলেও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রতি রাতের ঘুষের হাট বসে এখানে। সোনারগাঁও স্টেশনে এক বছরের স্থলে টানা তিন বছর ধরে দায়িত্বে থাকা আমিরুল হাসান নামের একজন সংযুক্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই ঘুষ বাণিজ্য চলছে রীতিমতো প্রকাশ্যে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বন বিভাগের আওতাধীন নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনটি অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেক স্টেশন। এই স্টেশনের মাধ্যমেই সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সব বন অঞ্চলের অবৈধ কাঠ পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতি এই স্টেশনটি কাঠ পাচার প্রতিরোধের পরিবর্তে সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। দেশের প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ), বন সংরক্ষক (সিএফ) ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (ডিএফও) ম্যানেজ করার কথা বলে এই স্টেশনে কাঠের ট্রাক প্রতি সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। প্রতি মাসে আদায়কৃত ঘুষের অংক প্রায় কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বৈধ ট্রানজিট পাসের (টিপি) মাধ্যমে কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী হোসেন জানান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন অঞ্চল থেকে যেসব কাঠবাহী ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ঢাকার উদ্দেশ্যে যায়, সেসব ট্রাক চেকিং-এর জন্য থামানো হয় সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনে। সেখানে যেসব কাঠের বৈধ ট্রানজিট পাস থাকে সেগুলো থেকে ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা (টিপি চেকিং ঘুষ) এবং যেসব ট্রাকের কাঠ সম্পূর্ণ অবৈধ বা কোনো ট্রানজিট পাস থাকে না সে ট্রাকগুলো থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে দিনে একশ’র বেশি ট্রাক ঘুষ দিয়ে পারাপার হয় সোনারগাঁও চেক স্টেশন।

চট্টগ্রামের অপর কাঠ ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, ‘ট্রানজিট পাসের মাধ্যমে কাঠ নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সোনারগাঁও চেক স্টেশনে প্রতি ট্রাকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে স্টেশনে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। প্রধান বন সংরক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার কথা বলে এখানে ঘুষ আদায় একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনের সংযুক্ত কর্মকর্তা আমিরুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বছর ধরেই কাঠের গাড়ি থেকেই এভাবে ঘুষ আদায় চলে প্রকাশ্যেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্টেশনগুলোতে কর্মকর্তাদের পোস্টিও দেওয়া হয় এক বছরের জন্য। কিন্তু আমিরুল হাসান নামের ওই কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে টানা তিন বছর ধরে একই স্টেশনে কর্মরত আছেন রহস্যজনকভাবে।’

সোনারগাঁও স্টেশনের প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সায়্যেদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বদলি কমিটির মিটিং না হওয়ায় টানা তিন বছর ধরে দায়িত্বে রয়েছেন আমিরুল হাসান। তাই তাকে বদলি করা যায়নি।

বদলির বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিটির মিটিং হলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া সোনারগাঁও স্টেশনে বৈধ-অবৈধ কাঠের ট্রাকপ্রতি ঘুষ আদায়ের বিষয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক আরএসএম মুনিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধে এই বন অঞ্চল কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরপরও কোনো কর্মকর্তার যোগসাজসে যদি কাঠ পাচারের ঘটনা ঘটে বা কোনো কর্মকর্তা যদি ঘুষ নিয়ে অবৈধ কাঠের গাড়ি ছাড় দেন তাহলে তার ব্যপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সোনারগাঁও স্টেশনে এক বছরের পোস্টিং নিয়ে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তার নজরে নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সোনারগাঁও চেক স্টেশনে মাসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

আপডেট সময় : ১২:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বৈধ-অবৈধ কাঠ পরিবহনে প্রতিমাসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলছে বন বিভাগের সোনারগাঁও চেক স্টেশনে। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রতিদিন শতাধিক কাঠ বোঝাই ট্রাক সোনারগাঁও স্টেশন অতিক্রম করে। এই স্টেশনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্য চলে।

ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন এই চেক স্টেশনটি অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধের জন্য স্থাপিত হলেও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রতি রাতের ঘুষের হাট বসে এখানে। সোনারগাঁও স্টেশনে এক বছরের স্থলে টানা তিন বছর ধরে দায়িত্বে থাকা আমিরুল হাসান নামের একজন সংযুক্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই ঘুষ বাণিজ্য চলছে রীতিমতো প্রকাশ্যে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বন বিভাগের আওতাধীন নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনটি অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেক স্টেশন। এই স্টেশনের মাধ্যমেই সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সব বন অঞ্চলের অবৈধ কাঠ পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতি এই স্টেশনটি কাঠ পাচার প্রতিরোধের পরিবর্তে সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। দেশের প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ), বন সংরক্ষক (সিএফ) ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (ডিএফও) ম্যানেজ করার কথা বলে এই স্টেশনে কাঠের ট্রাক প্রতি সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। প্রতি মাসে আদায়কৃত ঘুষের অংক প্রায় কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বৈধ ট্রানজিট পাসের (টিপি) মাধ্যমে কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী হোসেন জানান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন অঞ্চল থেকে যেসব কাঠবাহী ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ঢাকার উদ্দেশ্যে যায়, সেসব ট্রাক চেকিং-এর জন্য থামানো হয় সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনে। সেখানে যেসব কাঠের বৈধ ট্রানজিট পাস থাকে সেগুলো থেকে ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা (টিপি চেকিং ঘুষ) এবং যেসব ট্রাকের কাঠ সম্পূর্ণ অবৈধ বা কোনো ট্রানজিট পাস থাকে না সে ট্রাকগুলো থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে দিনে একশ’র বেশি ট্রাক ঘুষ দিয়ে পারাপার হয় সোনারগাঁও চেক স্টেশন।

চট্টগ্রামের অপর কাঠ ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, ‘ট্রানজিট পাসের মাধ্যমে কাঠ নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সোনারগাঁও চেক স্টেশনে প্রতি ট্রাকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে স্টেশনে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। প্রধান বন সংরক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার কথা বলে এখানে ঘুষ আদায় একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত সোনারগাঁও ফরেস্ট চেক স্টেশনের সংযুক্ত কর্মকর্তা আমিরুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বছর ধরেই কাঠের গাড়ি থেকেই এভাবে ঘুষ আদায় চলে প্রকাশ্যেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্টেশনগুলোতে কর্মকর্তাদের পোস্টিও দেওয়া হয় এক বছরের জন্য। কিন্তু আমিরুল হাসান নামের ওই কর্মকর্তা মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে টানা তিন বছর ধরে একই স্টেশনে কর্মরত আছেন রহস্যজনকভাবে।’

সোনারগাঁও স্টেশনের প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সায়্যেদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বদলি কমিটির মিটিং না হওয়ায় টানা তিন বছর ধরে দায়িত্বে রয়েছেন আমিরুল হাসান। তাই তাকে বদলি করা যায়নি।

বদলির বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিটির মিটিং হলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া সোনারগাঁও স্টেশনে বৈধ-অবৈধ কাঠের ট্রাকপ্রতি ঘুষ আদায়ের বিষয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক আরএসএম মুনিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অবৈধ কাঠ পাচার প্রতিরোধে এই বন অঞ্চল কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরপরও কোনো কর্মকর্তার যোগসাজসে যদি কাঠ পাচারের ঘটনা ঘটে বা কোনো কর্মকর্তা যদি ঘুষ নিয়ে অবৈধ কাঠের গাড়ি ছাড় দেন তাহলে তার ব্যপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সোনারগাঁও স্টেশনে এক বছরের পোস্টিং নিয়ে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তার নজরে নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।