ঢাকা ০৪:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বিএনপি নেতা মাহিদুর রহমান নেতৃত্বের বিস্ময় Logo স্বৈরাচারের দোসর প্রধান বিচারপতির ধর্ম ছেলে পরিচয়ে মোজাম্মেলের অধর্ম! Logo রাজধানীতে মার্কেট দখল করতে গিয়ে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আটক Logo স্কুলের ভেতরে নিয়মিত চলে তাশ ও জুয়া! Logo চাঁদা চাওয়ায় দাকোপে ৫ আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা Logo ভোলা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আল আমিন সম্পাদক শামসউদ্দিন Logo বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর উদ্যোগে দুমকিতে ক্যারিয়ার সামিট অনুষ্ঠিত Logo সওজ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রচারিত প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ Logo বিপ্লবী গান, আবৃত্তি এবং কাওয়ালী গানে মেতেছে আশা বিশ্ববিদ্যালয় Logo ছত্রিশ টাকার নকলনবীশ প্রভাবশালী কোটিপতি!




প্রতিষ্ঠানের প্রধান থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান সবখানে তার ক্ষমতা

চেয়ারম্যানের আহ্লাদে বেপরোয়া বিআইডব্লিউটিএ‘র কর্মচারি পান্না বিশ্বাস!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ২৩৮ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদকঃ একজন তুতীয় শ্রেণির কর্মচারিকে সাথে নিয়ে একটি সংস্থার প্রধান (এ গ্রেড পদমর্যাদার কর্মকর্তা) কি তার দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যেতে পারেন? সরকারি চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি কি বলে? অথচ: এই কাজটিই করেছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। কেন তিনি তার দপ্তরের স্টাফ অফিসার,পিএ বা পিএসকে বাদ দিয়ে একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিকে এতো প্রাধান্য দিলেন তার নেপথ্যে কাহিনী অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অনেক রহস্য। সে রহস্য ভেদ করার আগে এই মহা ক্ষমতা ধর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির আমলনামা একবার অবলোকন করা যাক।

বিআইডব্লিউটিএ’র তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি ও সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সীমাহীন,অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবিস্বাস্য দাদাগিরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী বিধি লঙ্গন করে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রমান রয়েছে। আর এসবের আড়ালে থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরন, সহকর্মীদের মারধর পূর্বক জেলখাটাসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। আর এসব অপকর্মের ছায়া দিচ্ছেন সয়ং চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। ফলে আতংকে আছেন বিআইডব্লিউটিএর কয়েকশত কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পান্না বিশ্বাস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারি ও অত্র দপ্তরের সিবিএ নেতা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি। গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে অপরাধ ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিনত করে রেখেছেন। নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, বিদেশে টাকা পাচার ও সম্পদ পাড়ার গড়ে তোলা, মাদক গ্রহণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধর, জেলখাটাসহ এহেন অপরাধ নেই যে তার বিরুদ্ধে নেই। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম ক্ষুন্নকারী এই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী পান্নার অপকর্ম ও দুর্নীতির কিছু তথ্য হাতে এসছে আমাদের ।
পান্না বিশ্বাস ২০১২ সালে বিআইডব্লিউটিএতে হিসাব বিভাগে সহকারী পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর প্রভাব দেখানোর জন্য মাদারীপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে পান্না বিশ্বাস কর্মজীবন শুরু করে। পান্নার বর্তমানে সর্বসাকুল্যে বেতন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি রাজধানীর টিকাটুলীর হুমায়ুন কমপ্লেক্সের পাশের লেনে যে ভাড়া বাসায় থাকেন তার মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলে মাসে তার সংসারে ব্যয় কমপক্ষে এক লাখ টাকা। এ থেকে বোঝা যায় কোন পথের আয়ে তার সংসার চলে।
পান্না বিশ্বাসের অবৈধ উপার্জনের টাকা নিজের নামে না রেখে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভারতের নাগরিক ভাইয়ের একাউন্টে রেখেছেন। তাদের নামে ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর করে রেখেছন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা। ভারতেও তার সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা পাচার করছেন ভারতে। তার ভাই রাহুল দেব বিশ্বাস ভারতের নাগরিক। তার আরেক ভাইয়ের স্ত্রীর নাম তাপসী বিশ্বাস, যিনি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। তার মাধ্যমেই মূলত অর্থ পাচার করে থাকেন পান্না বিশ্বাস।
এছাড়া শাশুড়ির নামে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে পানা বিশ্বাস। গাড়ীও কেনা আছে শাশুড়ির নামে। মাদারীপুরে বোনের নামে বাড়ি কেনা আছে পান্না বিশ্বাসের। গোপালগঞ্জ মকসুদপুরে আলিশান বাড়ি করেছেন। এছাড়া একাধিক জমি ক্রয় করা আছে তার। চাঁদাবাজির পাহাড় সম অপরাধ পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। প্রতিমাসে সদরঘাট, চাদঁপুর, আরিচা, বরিশাল ঘাট থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় পান্না বিশ্বাসকে। এছাড়া বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তানিয়া এন্টার প্রাইজ, দিপিকা ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না ট্রেডিংসসহ বেনামে আরো কিছু ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন পান্না বিশ্বাস। ক্ষমতাসীনদের ভুল বুঝিয়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নে এখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএ’র সাইনবোর্ড ডিজিটালকরণের ২৫ লাখ টাকা রাসেল এন্টার প্রাইজের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়, এটি মূলত পান্না বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামক ২টি প্রকল্প হতে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পান্না বিশ্বাস।
রাজধানীতে রফিক ঠিকাদার নামে এক যুবদল নেতার বাড়িতে নিয়মিত মাদকের আডডায় নিয়মিত যোগদান করে পান্না বিশ্বাস। মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে একটি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন পান্না বিশ্বাস। কারোর তোয়াক্কা না করে সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন। একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়।
সরকার যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে পান্না বিশ্বাস নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে যাচ্ছে। বিআইড্িব্লউটিএতে নিয়োগ পাওয়া অনেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন পান্না বিশ্বাস। এর মধ্যে রয়েছে নড়াইলের সুজন মোল্লা ও লস্কর অন্যতম। শুধু তাই নয়, আলামিন, লস্করকে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে চাকরি দিয়েছন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেছে। এছাড়া বেয়ারার পদে জুয়েল সরদার, শুল্ক প্রহরী পদে জয়দেব পাল, ট্রাফিক সুপারভাইজার পদে অনিমেষ বৈদ্য, দেবাশীষ মিত্র, বার্লিং সারেং পদে মো. আমিনুর রহমান, এমএলএস পদে মো. কুদ্দুস মোল্লা, সমীর গাঙ্গুলী, অমিত চাকমা, নিরপাত্তা প্রহরী পদে তুষার কান্তি ঘোষ, শঙ্কর বিশ্বাসকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে পান্না বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পান্না বিশ্বাস। ১১ দফা দাবি আদায়ে ২০ অক্টোবর-২০২০ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ধর্মঘট দীর্ঘায়িত করতে ইন্ধন যোগায় পান্না বিশ্বাস। ধর্মঘটে সহযোগিতার পুরষ্কার হিসেবে সম্প্রতি তাকে নৌযান শ্রমিক লীগ নামে সদরঘাট কেন্দ্রীক ওই সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে তাকে। একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে এ ধরনের কোনে সংগঠনে থাকার বৈধতা তার নেই। এরপরও পান্না বিশ্বাস সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সেই সংগঠনেই জড়িত।
চাকুরি জীবনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে মারধর, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছিলেন পান্না বিশ্বাস। অপকর্মের কারণে জেলও খেটেছেন। তার সেই অস্ত্রবাজি এখনো বহাল রয়েছে। এর আগে হিসাব বিভাগের রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাসকে মারধর করায় পান্না বিশ্বাসের নামে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাও হয়েছে (মামলা নং ১৫৯৭/২০১৭)। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই।
গত ৬ ডিসেম্বর সকালে ফুটিং শাখায় কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক (ড্রাইভার-১) ও মনির চৌধুরী (মাস্টার-১) কে মারধর করে জখম করেন পান্না বিশ্বাস। এ ঘটনা এখনো তদন্ত করছে অফিস। গত ৩১ ডিসেম্বর-২০২০ বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অফিস সহকারী দিদার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পান্না বিশ্বাস। সারাদেশ রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাহাজের পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলির আদেশ দেয়া হয়। এসব পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলি ঠেকাতে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পান্না বিশ্বাস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পান্না বিশ্বাস। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো বহাল তবিয়তে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত।
এত অপরাধ করার পরও তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএতে কথা বলার সাহস পায়না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এহেন অপরাধ নেই যে পান্না বিশ্বাস করছে না। বিআইডব্লিউটিএতে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে পান্না পান্না বিশ্বাস। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম রক্ষায় ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলা পড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই পানা বিশ্বাসের ত্রাসের রাজত্ব বন্ধ করার দাবী তুলেছেন বিআইডব্লি¬উটিএর সাধারণ কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। । পান্না বিশ্বাসের এই পাহাড়সম দুর্নীতি রুখতে পারে একমাত্র দুর্নীতি দমন করার কাজে নিয়োজিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দুদক।
এ বিষয়ে পান্না বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।

(আগামী পর্বে থাকবে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্নার কব্জায় ?

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




প্রতিষ্ঠানের প্রধান থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান সবখানে তার ক্ষমতা

চেয়ারম্যানের আহ্লাদে বেপরোয়া বিআইডব্লিউটিএ‘র কর্মচারি পান্না বিশ্বাস!

আপডেট সময় : ০৮:১০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদকঃ একজন তুতীয় শ্রেণির কর্মচারিকে সাথে নিয়ে একটি সংস্থার প্রধান (এ গ্রেড পদমর্যাদার কর্মকর্তা) কি তার দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যেতে পারেন? সরকারি চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি কি বলে? অথচ: এই কাজটিই করেছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। কেন তিনি তার দপ্তরের স্টাফ অফিসার,পিএ বা পিএসকে বাদ দিয়ে একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিকে এতো প্রাধান্য দিলেন তার নেপথ্যে কাহিনী অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অনেক রহস্য। সে রহস্য ভেদ করার আগে এই মহা ক্ষমতা ধর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির আমলনামা একবার অবলোকন করা যাক।

বিআইডব্লিউটিএ’র তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি ও সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সীমাহীন,অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবিস্বাস্য দাদাগিরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী বিধি লঙ্গন করে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রমান রয়েছে। আর এসবের আড়ালে থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরন, সহকর্মীদের মারধর পূর্বক জেলখাটাসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। আর এসব অপকর্মের ছায়া দিচ্ছেন সয়ং চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। ফলে আতংকে আছেন বিআইডব্লিউটিএর কয়েকশত কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পান্না বিশ্বাস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারি ও অত্র দপ্তরের সিবিএ নেতা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি। গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে অপরাধ ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিনত করে রেখেছেন। নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, বিদেশে টাকা পাচার ও সম্পদ পাড়ার গড়ে তোলা, মাদক গ্রহণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধর, জেলখাটাসহ এহেন অপরাধ নেই যে তার বিরুদ্ধে নেই। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম ক্ষুন্নকারী এই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী পান্নার অপকর্ম ও দুর্নীতির কিছু তথ্য হাতে এসছে আমাদের ।
পান্না বিশ্বাস ২০১২ সালে বিআইডব্লিউটিএতে হিসাব বিভাগে সহকারী পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর প্রভাব দেখানোর জন্য মাদারীপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে পান্না বিশ্বাস কর্মজীবন শুরু করে। পান্নার বর্তমানে সর্বসাকুল্যে বেতন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি রাজধানীর টিকাটুলীর হুমায়ুন কমপ্লেক্সের পাশের লেনে যে ভাড়া বাসায় থাকেন তার মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলে মাসে তার সংসারে ব্যয় কমপক্ষে এক লাখ টাকা। এ থেকে বোঝা যায় কোন পথের আয়ে তার সংসার চলে।
পান্না বিশ্বাসের অবৈধ উপার্জনের টাকা নিজের নামে না রেখে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভারতের নাগরিক ভাইয়ের একাউন্টে রেখেছেন। তাদের নামে ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর করে রেখেছন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা। ভারতেও তার সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা পাচার করছেন ভারতে। তার ভাই রাহুল দেব বিশ্বাস ভারতের নাগরিক। তার আরেক ভাইয়ের স্ত্রীর নাম তাপসী বিশ্বাস, যিনি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। তার মাধ্যমেই মূলত অর্থ পাচার করে থাকেন পান্না বিশ্বাস।
এছাড়া শাশুড়ির নামে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে পানা বিশ্বাস। গাড়ীও কেনা আছে শাশুড়ির নামে। মাদারীপুরে বোনের নামে বাড়ি কেনা আছে পান্না বিশ্বাসের। গোপালগঞ্জ মকসুদপুরে আলিশান বাড়ি করেছেন। এছাড়া একাধিক জমি ক্রয় করা আছে তার। চাঁদাবাজির পাহাড় সম অপরাধ পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। প্রতিমাসে সদরঘাট, চাদঁপুর, আরিচা, বরিশাল ঘাট থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় পান্না বিশ্বাসকে। এছাড়া বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তানিয়া এন্টার প্রাইজ, দিপিকা ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না ট্রেডিংসসহ বেনামে আরো কিছু ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন পান্না বিশ্বাস। ক্ষমতাসীনদের ভুল বুঝিয়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নে এখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএ’র সাইনবোর্ড ডিজিটালকরণের ২৫ লাখ টাকা রাসেল এন্টার প্রাইজের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়, এটি মূলত পান্না বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামক ২টি প্রকল্প হতে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পান্না বিশ্বাস।
রাজধানীতে রফিক ঠিকাদার নামে এক যুবদল নেতার বাড়িতে নিয়মিত মাদকের আডডায় নিয়মিত যোগদান করে পান্না বিশ্বাস। মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে একটি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন পান্না বিশ্বাস। কারোর তোয়াক্কা না করে সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন। একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়।
সরকার যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে পান্না বিশ্বাস নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে যাচ্ছে। বিআইড্িব্লউটিএতে নিয়োগ পাওয়া অনেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন পান্না বিশ্বাস। এর মধ্যে রয়েছে নড়াইলের সুজন মোল্লা ও লস্কর অন্যতম। শুধু তাই নয়, আলামিন, লস্করকে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে চাকরি দিয়েছন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেছে। এছাড়া বেয়ারার পদে জুয়েল সরদার, শুল্ক প্রহরী পদে জয়দেব পাল, ট্রাফিক সুপারভাইজার পদে অনিমেষ বৈদ্য, দেবাশীষ মিত্র, বার্লিং সারেং পদে মো. আমিনুর রহমান, এমএলএস পদে মো. কুদ্দুস মোল্লা, সমীর গাঙ্গুলী, অমিত চাকমা, নিরপাত্তা প্রহরী পদে তুষার কান্তি ঘোষ, শঙ্কর বিশ্বাসকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে পান্না বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পান্না বিশ্বাস। ১১ দফা দাবি আদায়ে ২০ অক্টোবর-২০২০ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ধর্মঘট দীর্ঘায়িত করতে ইন্ধন যোগায় পান্না বিশ্বাস। ধর্মঘটে সহযোগিতার পুরষ্কার হিসেবে সম্প্রতি তাকে নৌযান শ্রমিক লীগ নামে সদরঘাট কেন্দ্রীক ওই সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে তাকে। একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে এ ধরনের কোনে সংগঠনে থাকার বৈধতা তার নেই। এরপরও পান্না বিশ্বাস সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সেই সংগঠনেই জড়িত।
চাকুরি জীবনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে মারধর, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছিলেন পান্না বিশ্বাস। অপকর্মের কারণে জেলও খেটেছেন। তার সেই অস্ত্রবাজি এখনো বহাল রয়েছে। এর আগে হিসাব বিভাগের রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাসকে মারধর করায় পান্না বিশ্বাসের নামে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাও হয়েছে (মামলা নং ১৫৯৭/২০১৭)। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই।
গত ৬ ডিসেম্বর সকালে ফুটিং শাখায় কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক (ড্রাইভার-১) ও মনির চৌধুরী (মাস্টার-১) কে মারধর করে জখম করেন পান্না বিশ্বাস। এ ঘটনা এখনো তদন্ত করছে অফিস। গত ৩১ ডিসেম্বর-২০২০ বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অফিস সহকারী দিদার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পান্না বিশ্বাস। সারাদেশ রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাহাজের পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলির আদেশ দেয়া হয়। এসব পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলি ঠেকাতে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পান্না বিশ্বাস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পান্না বিশ্বাস। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো বহাল তবিয়তে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত।
এত অপরাধ করার পরও তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএতে কথা বলার সাহস পায়না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এহেন অপরাধ নেই যে পান্না বিশ্বাস করছে না। বিআইডব্লিউটিএতে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে পান্না পান্না বিশ্বাস। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম রক্ষায় ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলা পড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই পানা বিশ্বাসের ত্রাসের রাজত্ব বন্ধ করার দাবী তুলেছেন বিআইডব্লি¬উটিএর সাধারণ কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। । পান্না বিশ্বাসের এই পাহাড়সম দুর্নীতি রুখতে পারে একমাত্র দুর্নীতি দমন করার কাজে নিয়োজিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দুদক।
এ বিষয়ে পান্না বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।

(আগামী পর্বে থাকবে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্নার কব্জায় ?