নাগরিকত্বের অবৈধ সনদ জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় পদ হারিয়েছেন নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী রবি লামিচানে। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট লামিচানেকে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা নিম্ন পরিষদের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেন। এতে উপ-প্রধানমন্ত্রী থাকার যোগ্যতাও হারান তিনি।
রায়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বলেন, গত বছরের নভেম্বরে নেপালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পর ৪৮ বছর বয়সী লামিচানে নেপালি নাগরিকত্বের অবৈধ সনদ ব্যবহার করে ওই নির্বাচনে অংশ নেন।
একই বছরের ডিসেম্বরে নেপালের সাতদলীয় জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে লামিচানেকে নব্যগঠিত সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা যায়, নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারক করে।
লামিচানের আইনজীবী সুনিল পোখরেল বলেন, তিনি তার মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। এখন তার আসনে উপ-নির্বাচন হবে। তাছাড়া লামিচানে অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়মিত জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করবেন ও দক্ষিণ নেপালে তার আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেবেন।
নেপালের রাজনৈতিক বিশ্লেষক কৃষ্ণা খানালের দাবি, লামিচানের বিদায়ে ক্ষমতাসীন জোটের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত হবে না।
রাজনীতিতে আসার আগে লামিচানে জনপ্রিয় একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। পদ হারানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে বংশোদ্ভূত নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন লামিচানে। সে বছরই তিনি নেপালের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনে অংশ নেন।
এদিকে, বিশ বছর পর ২০১৪ সালে লামিচানে মার্কিন নাগরিকত্ব পান। নেপালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, যেদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন, সেদিন সয়ংক্রিয়ভাবেই তার নেপালি নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে গেছে।
নেপালি সংবিধানের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নেপালি নাগরিক যদি স্বেচ্ছায় বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশীয় নাগরিকত্ব হারাবেন। এ ধারায় আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি নেপালের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে চান তাহলে, তাকে বিদেশি নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের বাধ্যতামূলক আবেদন করতে হবে।
২০২২ সালের ২০ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে লামিচানে চিতওয়ান- ২ আসন থেকে রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন-ইউএমএল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন তিনি।
ওই নির্বাচনে একই বছরের ১ জুলাই গঠিত রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি ২৭৫টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় পায় ও নিম্নকক্ষের চতুর্থ বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে। পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় লামিচানের চিতওয়ান- ২ আসনে এখন উপ-নির্বাচন করা হবে।