ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




ডিএনসিসি এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছে: মেয়র আতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ ১০৫ বার পড়া হয়েছে

মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ভুল পদ্ধতির কারণে মশার তো লার্ভা ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই দ্রুতসময়ের মধ্যে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করবে ডিএনসিসি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘মশা নিধন নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা কলেন ডিএনসিসি মেয়র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ‘ল’ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ফ্লোরিডা সফরে রয়েছেন ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এ সফল কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।

প্রতি বছর মশা নিধনে শতকোটি টাকা ব্যয় করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ডিএনসিসি তাদের চলতি বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে ৭২ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭০ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫৮ কোটি টাকা।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।

এখন ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগাতে চান ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই তাই দ্রুতসময়ের মধ্যে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করবো। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশামুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করবো। তারা আসলে কীভাবে সফল সেই কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।’

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরণ একই। তাই তারা সফল হলে আমরা হবো। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’

এর আগে কর্মশালায় তুলে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে। রাজধানীর ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। মাঝে মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিসবাহিত ডেঙ্গুসহ সবধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারতো মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরণ বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা ইতি ও মিতু আক্তার, ডিএনসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) অতিরিক্ত ড্রেনেজ সার্কেল আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) খন্দকার মাহবুব আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগ তাবাসসুম আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ, মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে:
প্রথমমতো তারা মশার প্রজনন স্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজনন স্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায়, এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি।

আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতিত নির্ণয় করা থাকে। মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। মশার ধরণ বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্ভিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ শতাংশই খরচ হয় লার্ভিসাইডিং কার্যক্রমে। তাদের দাবি ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনো মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যেকারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি।

মিয়ামিতে যে ল্যাব রয়েছে সেটি খুব বড় কোন জায়গা নিয়ে নয়। মাত্র ৫০ বর্গফুটের দুটি রুমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে মশার জীবনচক্র নির্ণয় করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কীটনাশক ব্যবহারে তারা মানুষের ব্যবহার কমিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা দেখিয়েছেন। এখানেও রয়েছে ভিন্নতা। তাদের দাবি মানুষের মাধ্যমে কীটনাশক মিশ্রণ ঘটালে কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে কীটনাশক মিশিয়ে একটি গাড়ির মাধ্যমে খোলা জায়গায় স্প্রে করে থাকে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ডিএনসিসি এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছে: মেয়র আতিক

আপডেট সময় : ১২:৩৪:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ভুল পদ্ধতির কারণে মশার তো লার্ভা ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই দ্রুতসময়ের মধ্যে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করবে ডিএনসিসি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘মশা নিধন নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা কলেন ডিএনসিসি মেয়র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ‘ল’ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ফ্লোরিডা সফরে রয়েছেন ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এ সফল কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।

প্রতি বছর মশা নিধনে শতকোটি টাকা ব্যয় করছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ডিএনসিসি তাদের চলতি বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে ৭২ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭০ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫৮ কোটি টাকা।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি।

এখন ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগাতে চান ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই তাই দ্রুতসময়ের মধ্যে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করবো। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশামুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করবো। তারা আসলে কীভাবে সফল সেই কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।’

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরণ একই। তাই তারা সফল হলে আমরা হবো। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’

এর আগে কর্মশালায় তুলে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে। রাজধানীর ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। মাঝে মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিসবাহিত ডেঙ্গুসহ সবধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারতো মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরণ বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা ইতি ও মিতু আক্তার, ডিএনসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) অতিরিক্ত ড্রেনেজ সার্কেল আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) খন্দকার মাহবুব আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগ তাবাসসুম আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ, মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে:
প্রথমমতো তারা মশার প্রজনন স্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজনন স্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায়, এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি।

আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতিত নির্ণয় করা থাকে। মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। মশার ধরণ বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্ভিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ শতাংশই খরচ হয় লার্ভিসাইডিং কার্যক্রমে। তাদের দাবি ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনো মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যেকারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি।

মিয়ামিতে যে ল্যাব রয়েছে সেটি খুব বড় কোন জায়গা নিয়ে নয়। মাত্র ৫০ বর্গফুটের দুটি রুমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে মশার জীবনচক্র নির্ণয় করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কীটনাশক ব্যবহারে তারা মানুষের ব্যবহার কমিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা দেখিয়েছেন। এখানেও রয়েছে ভিন্নতা। তাদের দাবি মানুষের মাধ্যমে কীটনাশক মিশ্রণ ঘটালে কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণে কীটনাশক মিশিয়ে একটি গাড়ির মাধ্যমে খোলা জায়গায় স্প্রে করে থাকে।