সকাল ১০টা থেকে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ২০ মিনিট স্থায়ী এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের সুরা সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় নেতা মাওলানা ক্কারী মো. জোবায়ের হাসান।
আখেরি মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনা করা হয়। এসময় দুহাত তুলে মহান আল্লাহ’র দরবারে ফরিয়াদ জানায় লাখ লাখ মুসল্লি।
এর আগে হেদায়তী বয়ান করা হয়। ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমানের হেদায়তী বয়ানের পর পরই শুরু করা হয় আখেরি মোনাজাত। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই ইজতেমাস্থল টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। রোববার সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শীত-ধুলো-বালি উপেক্ষা করে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কার, ট্যাক্সি ও অন্যান্য যানবাহন রেখে হেঁটেই মুসুল্লিরা ছুটে আসেন ইজতেমা ময়দানের দিকে।
মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বোর্ডবাজার-গাজীপুরা-টঙ্গী-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন সড়ক মুসুল্লিতে একাকার হয়ে যায়। যে দিকেই চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবী-টুপি পড়া মানুষ আর মানুষ।
মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমার মূল ময়দানে ঢুকতে না পেরে পত্রিকা, পাটি, চট, জায়নামাজ, পলিথিন বিছিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন মুসুল্লিরা। অনেকেই আবার মোবাইল ফোনে দূর থেকে মোনাজাতে শরিক হন।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঢল নামে মুসল্লিদের। ভোগাড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এই পুরো জায়গা হেঁটেই মুসল্লিরা রওনা হয়েছেন ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে।
ইজতেমায় আখেরি মোনজাতে অংশ নিতে ভোরের আলো ফোঁটার পরপরই হাজার হাজার মুসল্লি পায়ে হেঁটে ময়দানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এর মধ্যে হঠাৎ দুই একটা মিনিবাস, পিকআপ, অটোরিকশার দেখা মিললেও মুসল্লিদের কারণে ধীর গতিতে চলতে দেখা যায়।
বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা তো ছিলেনই, শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমারে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন।
রোববার ভোর থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। কয়েক লাখ মানুষ রাতেই ইজতেমার মাঠ কিংবা আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যে গোটা এলাকা জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়।
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিচ্ছেন নারীরাও। তারা ময়দানের পাশে শহীদ আহসান উল্ল্যাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান নেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটায় দেখা যায় প্রায় শতাধিক নারী আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন অলিগলিতেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে নারীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকাল থেকেই টঙ্গীর উদ্দেশে রওনা হন হাজারো মানুষ। বাসে, ব্যক্তিগত বাহনে কিংবা হেঁটেই যাচ্ছেন। বাদ নেই মেট্রোরেলও।
রোববার সরেজমিনে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমার মোনাজাতে অংশ নিতে স্টেশনে ভিড় জমায় যাত্রীরা। তারা বলেন, মেট্রো রেলে চড়ে টঙ্গী পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হবে না। উত্তরা পর্যন্ত তো যাওয়া যাবে। তাই যানজটের ভোগান্তি এড়াতেই মেট্রোরেলে যাত্রা।
এর আগে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। চার দিন বিরতির পর আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি হবে।