কুবিতে ফরম ফিলআপ করালেও নেওয়া হচ্ছে না পরীক্ষা
- আপডেট সময় : ০৪:০২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের তিন শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতির শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনের ফলে একাডেমিক কার্যক্রম চার মাস বন্ধ ছিল। অবশেষে একাডেমিক কাউন্সিলের হস্তক্ষেপে ওই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ফরম ফিলআপ করা দুই শিক্ষার্থীকে বসতে দেওয়া হয়নি পরীক্ষায়। অথচ এ বিষয়টি তাদের আগেই অবগত করার দায়িত্ব ছিল বিভাগের।
উপস্থিতির শর্ত পূরণ না হওয়া একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে দুই বার রিঅ্যাডমিশন নিয়ে ১৩তম ব্যাচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার উপস্থিতির শর্ত পূরণ না করতে পারায় তার ছাত্রত্ব বাতিল হতে যাচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে চার মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের দায় পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের ওপর দিচ্ছেন বিভাগীয় প্রধান। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলছেন, বিষয়টি ‘দুঃখজনক’। আর উপাচার্য বলছেন ‘নিয়মের বাইরে গিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে মানবিক কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, পরীক্ষা পেছানোর কালচার নিয়ে অসন্তুষ্ট একাডেমিক কাউন্সিল।’
ওই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপকালে শুরুতে তারা ‘বিভাগের ভয়ে’ কথা বলতে রাজি হননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুখ খোলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। করোনার দীর্ঘ ক্ষতির পর নতুন করে চার মাস একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অন্য সব বিভাগের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় কেউ কেউ মাদকের দিকে ধাবিত হওয়ার পথে।
বিভাগটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ আগস্ট ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ সেমিস্টার পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপস্থিতির শর্ত পূরণ না হওয়ায় তিন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি পাননি। অথচ, তাদের ফরম ফিলআপ করা এবং টাকা জমা দিতে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিভাগে তাদের কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময়ও জানানো হয়নি যে, তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
ফরম ফিলআপের সব কাজ শেষ হওয়ার পর তাদের জানানো হয়, তারা উপস্থিতির শর্ত পূরণ না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান ওই ব্যাচের সব শিক্ষার্থী। তারা সহপাঠী তিন জনকে নিয়ে পরীক্ষায় বসতে চেয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্তে নেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষায় বসতে লিখিত আবেদন, উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সমাধান পাননি তারা। এভাবে কেটে যায় চার মাস। এ ঘটনা পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলে গেলে উপস্থিতির শর্ত পূরণ করতে না পারা সেই তিন শিক্ষার্থীকে ছাড়াই ২ জানুয়ারি থেকে চার মাস ধরে আটকে থাকা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভাগ থেকে আমরা শুধুই অবহেলা পেয়েছি। চার মাস একাডেমিক কার্যক্রম থেকে দূরে ছিলাম। এতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরিবার থেকে মা-বাবা পড়াশোনা কতদূর জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারি না। মারাত্মক হতাশায় দিন কেটেছে। এভাবে একাডেমিক পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবো এটা কল্পনাও করিনি। পারিবারিক চাপে ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের এমন অবহেলায় অনেকেরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।’
ছাত্রত্ব বাতিল হতে চলা সেই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ইনকোর্সের সবকিছু সম্পন্ন করেছি। চারটি কোর্সের মধ্যে দুইটিতে আমার ৬০ পার্সেন্টের ওপর উপস্থিতি রয়েছে। আর দুইটিতে ৩৫ পার্সেন্ট করে উপস্থিতি। কারণ ক্লাস খুব বেশি নেওয়া হয়নি, যা নেওয়া হয়েছে কোর্সের শুরুতেই হয়েছে। অথচ আমাকে কখনো জানানো হয়নি যে, এই দুই কোর্সে আমার উপস্থিতি কম, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নাও পেতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। আমি ফরম ফিলআপ করেছি, ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। এমনকি বিভাগেও কাজগপত্র জমা দেওয়ার সময়ও বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। পরে জানানো হয়, আমার উপস্থিতির শর্ত পূরণ হয়নি বিধায় পরীক্ষা দিতে পারবো না।’
এদিকে পরীক্ষা চার মাস পিছিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ দায় শিক্ষার্থীদের ওপরই দিচ্ছেন বিভাগীয় প্রধান মোসা. শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘তারা ইচ্ছা করেই পরীক্ষা দেয়নি। তাদের দাবি ছিল, সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষায় দিবে। কিন্তু ওদের উপস্থিতির শর্ত পূরণ হয়নি। তারা উপাচার্যের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছে। একাডেমিক কাউন্সিলেও তাদের ছাড়া পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত আসে। তিন শিক্ষার্থীর বিষয়ে বিভাগের বা পরীক্ষা কমিটির কোনো দায় নেই। ওরা পরীক্ষা পিছিয়েছে এটা ওদেরই দায়।’
বিভাগ ছাড় দিলে সুযোগ ছিল বলে মনে করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবকিছু যেমন নির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুযায়ী চলে তেমনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেও কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির শর্ত পূরণ হয়নি। তবে বিভাগ থেকে যদি সুপারিশ করা হতো তবে আমরা হয়তো ছাড় দিতাম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এটা নিয়ে একাডমিক কাউন্সিলে দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আমাদের মানবিক হতে হয় নিয়মের মাঝে থেকেই। যে উপস্থিতির শর্ত পূরণ করতে পারেনি তার বিষয়টা বিভাগও গ্রহণ করেনি। বিভাগও আমার মনে হয় না কোনো সুপারিশ দিয়েছে। আর যে আগেও রিঅ্যাড নিয়েছে, এবারও শর্ত পূরণ করতে পারেনি এখানে তার নিজেরও গাফলতি রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মে চলে। দুই বার রিঅ্যাড নিয়েও এবার ৪০ পার্সেন্ট উপস্থিতির যে শর্ত সেটা তার ছিল না। একাডেমিক কাউন্সিলে মানবিকভাবে দেখা বা কোনোভাবে সুযোগ দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্ত নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই একাডেমিক কাউন্সিলও মানবিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর কালচার নিয়ে একাডেমিক কান্সিলের সদস্যরা সবাই অসন্তুষ্ট। যাদের সমস্যা তারা ছাড়া বাকিদের পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন।’