দিনের কাজ রাতে করেন বোরহানউদ্দিন সাব- রেজিস্টার মামুন
- আপডেট সময় : ০৬:২০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫৬ বার পড়া হয়েছে
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাবরেজিস্টার দিনের অফিস রাতে করছেন। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর রাত ১১) টায় সাব রেজিস্টার মামুন শিকদার এজলাসে বসে দলিল করেন।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শীতের তিব্রতা বেশী; কিন্তু বৃদ্ধ মানুষের পক্ষে এতরাত পর্যন্ত বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাব-রেজিস্টারের অফিসে দলিল নিবন্ধন করা দুরূহ। দলিলের সিরিয়াল যখন সামনে এলো তখন বৃদ্ধ সেবা ভূগী সাব- রেজিস্টারের সামনে দাড়িয়ে শীতে কাঁপছেন। রাত তখন ১১;১৫ মিনিট। একজন বৃদ্ধা সেবা ভূগী’র জন্য বিষয়টি কতটা মানবিক? রাষ্ট্রের কর্মচারীদের সেবা দেওয়া চলন্ত উদাহরণ।
এর আগেও সাব রেজিস্টার মামুন শিকদার মধ্যরাতে অফিস করেছেন। এমন তথ্য ও অভিযোগ স্থানীয় সেবা ভোগীদের কাছে আছে।
সরকারের পরিবিধানে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অফিস। কিন্তু এই শীতে রাতে সরকারের বিধান কতটুকু মেনে চলছেন সাব – রেজিস্টার মামুন শিকদার। কেন তিনি মধ্য রাতে সরকারের সেবার নামে বৃদ্ধা ও জনসাধারণকে বাধ্য করছেন রাতে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে। কেন তিনি দলিল গৃহীতাকে বাধ্য করছেন শুধু মাত্র সাব – রেজিস্টার মামুন শিকদার ও তার দালাল সিন্ডিকেটের অনৈতিক অর্থের যোগান দিতেই মধ্য রাত পর্যন্ত অফিস খোলা রেখে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে।
বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন উদ্যাগ ম্নান হচ্ছে সাব – রেজিস্টার মামুন শিকদারের দূর্নীতি ও আনিয়মের কারণে। বর্তমান সরকার জ্বালানি সাশ্রয় করতে অফিস টাইম একঘন্টা কমিয়ে এনেছে, অফিসের দরজা জানালা খোলা রেখে সূর্যের আলো ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফলে কালিমা লেপন করে মধ্যরাতে অফিস করার নামে সাধারাণ সেবা ভোগীদের কাছ থেকে জোকের মত চুষে নিচ্ছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা।
মধ্য রাতে অফিস করার বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর রাত ৮ – ৮;৩০ টায়) বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসে গেলে শত শত মানুষের ভীর দেখা যায়। দরজার গেটে দালাল সিন্ডিকেটের লোকজন কে আসছে আর কে যাচ্ছে এর এই খবর ভেতরে জানিয়ে দিচ্ছিন – রেজিস্টার মামুন শিকদারের অবৈধ অর্থ লিপ্সু দালাল চক্র দরজা বন্ধ করে পথরোধ করে দাড়ায়।
এর পর এজলাস রুমে ঢোকার আগে প্রধান সহকারীর টেবিলে আবার প্রশ্নে জর্জরিত! কেন আসছেন? আপনার চা খরচ পাঠিয়ে দিচ্ছি নিচে গিয়ে দাঁড়ান। এতরাতে দলিল করছেন এমন প্রশ্নে? সাবরেজিস্টারের সাথে দেখা করার অনুমতি পাওয়া গেল।
এই প্রতিবেদকে দেখেই বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাবরেজিস্টার মামুন শিকদার বলেন, ছবি তুলবেন না। আসছেন ভেতরে বসেন চা খান।
এতরাতে দলিল করছেন? প্রশ্ন করতেই তিনি এজলাস থেকে নেমে তার খাস কামরায় ডেকে নিলেন। তার সহকারীকে ডেকে কফি জন্য বললেন। তারপর অনুরোধ করে বলেন, আপনি এসছেন ওরা (গেটের পাহারাদার) বলছে। আসার দরকার ছিল কি আপনার চা খরচ পাঠিয়ে দিতাম।
এতরাতে (রাত তখন সারে ৯টা) এজলাসে বসে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করছেন? এমন প্রশ্নে হাত এগিয়ে বললেন, বুজলেন না। বছর শেষ তাই সবাই বললো; তাই রাতেই কাজ করছি। ফের আবার হাত ধরে অনুরোধ করলেন, প্লিজ নিউজ করবেন না। কফি খেয়ে নিন বলে, সহকারীর দেওয়া কফি’র কাপ এগিয়ে দিলেন। যে ছবি ও ভিডিও করছেন, প্লিজ ডিলেট করে দিন।
এরই মধ্যে দু’জন স্থানীয় দালাল ডুকলেন সাব- রেজিস্টার মামুন শিকদারের রুমে। দু’জনের একজন জানতে চাইলো, কেন ডুকছোস এই অফিসে? তুই কিসের সাংবাদিক? তোর কি কাজ এখানে? জসিম চেয়ারম্যান ছেলে তোরে মারছে, ভুলে গেছত! এবার খবর আছে তোর!
সাব- রেজিস্টার মামুন শিকদারের খাস কামরায় এতক্ষণ শান্ত পরিবেশ থাকলেও দুই দালালের অসৌজন্যমূলক আচরণে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাব-রেজিস্টার মামুন বলেন, আমার অফিসের ভেতরে না।
একথার পরই তারা সাব- রেজিস্টার মামুন শিকদারের খাস কামরা থেকে বের হয়ে যান। এরপর সাবরেজিস্টার বলেন, কোন সমস্যা নাই। আপনি এবার আসুন।
সাবরেজিস্টারের খাম কামরা থেকে বের হয়ে, শত শত মানুষের ভীর ঠেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই, রাতের অন্ধকারে ঝাপটে ধরে, প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোন কেরে নেয়, সেই চিন্হিত দালাল সিন্ডিকেটের লোক, অন্ধকারে তাদের চেহারা চিনতে না পারলেও, তাদের একজন ফোনে বলতে শোনে এই প্রতিবেদক, স্যার মোবাইল লইছি! এরপর পাশের একজনকে বলতে শোনে, আরে ভিডিও আর ছবি গুলো ডিলেট করতে বলছে স্যারে।
অন্ধকারের মধ্যে কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না। পকেটের মোবাইল তো আগেই নিয়েছে। মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে বললো, ফকিন্নির পুত! তোর মানিব্যাগো তো ১৮০টাকা আছে। ধর! তোর মানিব্যাগ। অন্ধকারে মধ্যে কাউকে চেনা না গেলেও স্যার, স্যার শব্দ কানে আসছে। তাদের একজনকে বলতে শোনা গেল, স্যার বলছে, ছবি আর ভিডিও ডিলেট করে ফোন ফেরত দিয়ে দিতে।
এসময়ে সামনে এগুতে চাইলে, পাশ থেকে একজন বলে ওঠে, আরে খানকির পুতে তো দৌড় দিব। এরই মধ্যে একজন দূর থেকে বলছে, এই ধর ধর, ফোন ফেরত দে।
ফোন হাতে পাওয়া পর তাদের সামনে থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে বলে, এই ব্যাটা জীবনটা ভিক্ষা দিলাম তোর। এইখানে যা কিছু ঘটছে তা গিয়ে বাহিরে বললে তোরে শ্যাষ কইরা দিমু! যা এখন। পেছনে তাকাবি না। দৌড় দে, দৌড় দে।
ছয়-সাত জনের দলটি বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের গেইটের দিকে আলো থাকায়, বলে উঠলো, ঐদিকে যা। বাঁচতে চাইলে। নিউজ করবি না। কাউকে কিছু বলবি না।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের সামনে গিয়ে এই প্রতিবেদক যখন হাফ ছেড়ে বাঁচলো, তখন মোবাইল চেক করে দেখলো, ছবি ও ভিডিও ডিলেট করা হয়েছে। ফোন বুক চেক করে দেখা গেল, নাম্বার লিষ্টও ডিলেট করা হয়েছে।
বিস্তারিত আরও আসছে…