চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. নুরনবী ম্যাক্সন ভারতে খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালীগঞ্জে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ম্যাক্সনের স্ত্রী ফারজানা আকতার বুধবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার ম্যাক্সন আমাকে ফোন করে বলে, অর্পিতা নামে এক নারী টাকার জন্য ঝামেলা করছে। টাকার জন্য প্রেসার দিচ্ছে। অর্পিতাকে দেওয়ার জন্য এর আগে অনেক টাকা আমরা পাঠিয়েছিলাম, জায়গা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।’ ফারজানা বলেন, ‘ম্যাক্সনকে তখন বলেছি, অর্পিতার কাছ থেকে সরে গেলে তো হয়। তখন বলে, সরলে এখানে আমাকে আশ্রয় দেবে কে? এখানে সবই আমার অচেনা। এরপর রাতে ফোন করে বলে, তারা তো আমাকে মেরে ফেলবে মনে হয়। এরপর অর্পিতার সঙ্গে ম্যাক্সনের ভাই আবছার উদ্দিন কথা বলেন গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে। তখন সে টাকা পাঠাতে বলে। কিছুক্ষণ পর অর্পিতা কল করে জানায় টাকা না থাকায় হতাশা থেকে ম্যাক্সন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমাদের ছবি পাঠায় না। অন্যদিকে ম্যাক্সনের মোবাইলে বারবার ফোন করলেও রিসিভ হয় না।’
সর্বশেষ বুধবার রাত ৩টার দিকে ম্যাক্সনের মোবাইলে ফোন করলে হাসপাতালের একজন ডাক্তার ফোন রিসিভ করে জানিয়ে ওই ডাক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যাক্সনের স্ত্রী বলেন, অর্পিতা ম্যাক্সনকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। এর আগে সে হাসপাতালকে ভুয়া ঠিকানা দেয়। হাসপাতালটির অবস্থান চব্বিশ পরগনা এলাকায়। ওই ডাক্তারই আমাদের কাছে ম্যাক্সনের ছবি পাঠান এবং তিনি বলেন, ‘ম্যাক্সনকে খুন করা হয়েছে, এটি আত্মহত্যা নয়।’
ফারজানা আকতার বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে দেশটির পুলিশ ম্যাক্সনকে গ্রেফতার করে। ম্যাক্সন ডানলপের নর্দার্ন পার্কে তমাল চৌধুরী নাম নিয়ে অর্পিতা পালের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর টাকার জন্যই অর্পিতা ও তার সহযোগীরা ম্যাক্সনকে খুন করে।
ম্যাক্সনের ছোট ভাই আবছার উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালীগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা কলকাতায় যাব। সেখানে একটি হত্যা মামলা দায়ের হবে বলে পুলিশ আমাদের জানিয়েছে।
সিএমপির বায়েজিদ থানার ওসি ফেরদৌস জাহান বলেন, ম্যাক্সনের পরিবার আমাদের কাছে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।
পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার জাহানপুর এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে ম্যাক্সন। তিনি ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জামিনে বের হয়ে কাতার চলে যান। কাতারে বসে অনুসারীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন তিনি। এরপর সেখান থেকে চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
এর আগে ২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নুরনবী ম্যাক্সন ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সারোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে একসময় পরিচিত ছিলেন ম্যাক্সন। পরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছিরের অনুসারী হয়ে ওঠেন তারা।
২০১৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাজ্জাদের সঙ্গে ম্যাক্সনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে এবং ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়। প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ আছে।