সকালের সংবাদ রিপোর্ট: রাজধানী প্রাণকেন্দ্র কেরানীগঞ্জ, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের নকশার অনুমোদন না নিয়ে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন কেরানীগঞ্জ জিনজিরা ইউনিয়নে অবস্থিত মডেল টাউনের বেশিরভাগই বাড়ির মালিক, এ ব্লক এবং বি ব্লকের অনেকেই। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ১০ থেকে ১১ তলা ভবন নির্মাণ করছে, তবে রয়েছে তদারকির অভাব রাজউক নামের সংস্থাটির।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ভবন নির্মাণকালে রাজউকের অনুমোদিত নকশা না নিয়ে নিয়মবহির্ভূত স্থাপনা গড়ে তুলেছেন মডেল টাউনের অনেক ভবন মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীরা। এসব স্থাপনা নিজেদের সুবিধা মতো করে ভবন নির্মাণ করছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানও অনুমোদনের অতিরিক্ত উচ্চতার ভবন নির্মাণ করছে বলেও অভিযোগ উঠছে।রাজউকের যথাযথ তদারকির অভাবেই এসব সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্মিত ভবনের অনুমোদনহীন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। এসব অভিযানে গিয়ে অনুমোদনবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণাধীন ভবন মালিক বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজউক কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে বন্ধ করা যাচ্ছেনা অনুমোদনহীন অবকাঠামো নির্মাণ।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ ৭৫ শতাংশ এলাকায়ই একসময় বিভিন্ন ধরনের জলাশয় ছিল। বালি ও আবর্জনা ফেলে তা ভরাট করে ফেলায়, এসব এলাকার মাটির গঠন অত্যন্ত দুর্বল। নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ নিয়ম মেনেই এসব জায়গায় ভবন নির্মাণ করা উচিত অন্যথায় যেকোনো সময় বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে নির্মিত অবকাঠামো।
স্থাপত্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে কখনো ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে, কেরানীগঞ্জের অধিকাংশ বহুতল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে,
কেরানীগঞ্জে রাজউকের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজউকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। এসব অবকাঠামোর নির্মাণকাজ বিধি মেনে হচ্ছে কিনা, তা তদারকিতে ভূমিকা নেই রাজউকের। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব রাজউকেরই। নির্মাণ খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের ক্ষতি থেকে অবকাঠামো রক্ষায় নকশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে নকশা অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ হলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়।
বিগত কয়েক বছরে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। তাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়, আর্থিক ক্ষতি ও হয়েছে ব্যাপক। এ সময় উপজেলা প্রশাসন ও রাজউকের কর্মকর্তারা কিছুদিন মাঠে দৌড়ঝাঁপ শেষে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কেবল উপজেলা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ সম্পর্কে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জানান, এর আগে স্থানীয় প্রশাসন থেকে ভবন তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হতো। গত কয়েক বছর ধরে তা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে গত দুই থেকে তিন বছরে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রাজউকের অনুমতি না নিয়ে প্রায় শতাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি হাজী রহমান বলেন, কিছু কিছু বাড়ির প্লান পাশ আছে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এর কাছ থেকে আমরা এনেছি, এবং রাজউকে কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে ঢ্যাপের কারণে আমরা পেলান পাস পাচ্ছি না, রাজউকের অথরাইজ অফিসার অথবা ইন্সপেক্টর দের কাছ থেকে কোন আশ্বাস পেয়েছেন কিনা কাজ করার,এমন প্রশ্ন জবাবে সভাপতি বলেন, অথরাইজ অফিসার আমাদেরকে একটি আশ্বাস দিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসন যদি আপনাদের অনুমোদন দেন তাহলে আপনারা কাজ চলমান থাকতে পারেন, আমরা যত দিনে ঢ্যাপের সমস্যা সমাধান না হবে ততদিনে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব না,
মডেল টাউনের বাসিন্দা লিটন হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জের মাটির গঠন অত্যন্ত দুর্বল এখানে যদি এত বড় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয় তবে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে, রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার,
এ বিষয়ে রাজউক অঞ্চল ৭ এর ইমারত পরিদর্শক হাসান মিয়া বলেন,আমি কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি না আপনি আমার ঊর্ধ্বতন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন, এবং আরো বলেন আপনারা সাংবাদিকরা আয়নার মতো পরিষ্কার আপনারা তো আয়না দিয়ে দেখতেই পারছেন, এ নিয়ে আবার বক্তব্য কিসের।
বহুতল ভবন নির্মাণ বিষয়ে রাজউক অঞ্চল ৭ এর পরিচালক জনাব মমিন উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমাদের প্রতিদিন মোবাইল কোর্টের অভিযান চলমান রয়েছে, তারপরেও যদি বহুতল ভবন রাজউকের পেলান পাসের অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করা হয়, তাহলে আমরা দ্রুত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব, ইন্সপেক্টরা বাড়ির মালিকদের সাথে আঁতাত করে চলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিচালক বলেন, এই ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে রাজউক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।