অ্যাটর্নি জেনারেল শশুর কর্তৃক নির্যাতিত পুত্রবধূ নীলার দিশেহারা জীবন!
- আপডেট সময় : ১১:৫৭:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ নভেম্বর ২০২১ ২৬৪ বার পড়া হয়েছে
এইচ আর শফিক: যে শতাব্দীতে এসে আমরা নারীর ক্ষমতায়নে শতভাগ সাফল্য দাবি করি ঠিক সেই সময় আইনি ক্ষমতার পদতলে পিষ্ট হয়ে এক নারির বিচারের আহাজারি দেখেও সমাজ যেন অন্ধের ভূমিকা পালন করছে। বলছি একজন সংগ্রামী মায়ের কথা।
মাধবী আক্তার নিলা, তিনি একজন যোদ্ধা, তিনি একজন সংগ্রামী মা, যিনি তার গর্ভধারণ করা সন্তানকে ফিরে পেতে লড়ে যাচ্ছেন অবিরত। শশুর সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ায় আইনের সব দরজা যেনো তার জন্য বন্ধ। আইনের শাসনের সাফল্যের শতভাগ দাবি করা আইনের শাসন সংশ্লিষ্ট সকলেই যেন চোখ বন্ধ করে আছে।
প্রায় পাঁচ বছর আগে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজের সঙ্গে বিয়ে হয় মাধবী আক্তার নিলা’র স্বামী এবং শশুরবাড়ীর পরিবার তার নিঃসন্তান ননদ'(কানাডা-প্রবাসী)কে, নিলার ২ বছরের কন্যাসন্তান মাইরিন’কে দিয়ে দিতে চাইলে বাধা দেন মা নিলা এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে নিউমার্কেট থানায় জিডি করেছিলেন নিলা।
তারপর নিলা আবার দ্বিতীয়বার কনসিভ করেন তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে নিলাকে লাথি দিয়ে সেই সন্তানটিকে মেরে ফেলা হয় ভাগ্যক্রমে তখন নিলা বেঁচে যান কিন্তু তৃতীয় সন্তান পেটে আসার পরও আবার নির্যাতন করলে নিলা নির্যাতনকারী স্বামী ও শ্বশুর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
এরপর নিলার বিরুদ্ধে স্বামী’কে হত্যাচেষ্টার মিথ্যা মামলা দিয়ে আইনিভাবে নির্যাতন শুরু করেন নীলার স্বামী ও শ্বশুর। শশুর অ্যাটর্নি জেনারেল হাওয়ায় আইনকে নিজের গোলাম হিসেবে ব্যবহার করেন, ওই মিথ্যা মামলায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ১ মাস ৭ দিন জেল খাটেন নিলা আক্তার। কারাবন্দি অবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তার। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নিলা তার ২ বছরের প্রথম সন্তানকে দেখতে চাইলেও পারেননি এই নির্যাতিত সংগ্রামী মা।
তারপর থেকেই নিলার দ্বিতীয় নবজাতক শিশু’কে নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। আইনের দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে নিলা এখন প্রায় ক্লান্ত এবং দিশেহারা। দেশের আইন যেন অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের বাসার দারোয়ান। ঠিক তেমনি মিথ্যা মামলা সহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পুত্রবধূ ও দুই সন্তানের মাকে নির্যাতনের বিষক্রিয়ায় বিষিয়ে তুলেছেন।
তারপরও আদালতের কাছে নিলা’র মা’হিসেবে একমাত্র চাওয়া যে কোনো শর্ত দিক তারা আমি রাজি। কিন্তু আমার বাচ্চারা যেন ভালো থাকে। আমার বাচ্ছাটা’কে যেনো আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রচার হওয়ার পরেও টনক নড়েনি আইন ও প্রশাসনের।
নীলার অভিযোগ, এখনো তাকে হত্যার জন্য তার স্বামী ও শ্বশুর প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার করা মামলা ও অভিযোগের কোনো সুফল তিনি পারছেন না। আইনকে নিজের মতো করে ব্যবহারকারী নির্যাতিন কারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্যাতনের রোষানল থেকে মুক্তি পেতে গৃহবধূ নীলা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম দিকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অ্যাটর্নি জেনারেল ও তার ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন গৃহবধূ নীলা। তার মতে, মারধর, মিথ্যে মামলা, আদালত থেকে জামিন না পাওয়া সবই হয়েছে শশুর সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের ইশারায়।
নিজের বড় মেয়েকে নিঃসন্তান ননদকে দিয়ে দিতে পুত্রবধূ মাধবী আক্তার নিলাকে চাপ দিয়েছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ। রাজি না হওয়ায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় নিলাকে মারধর করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেয়া হয়।
ওই মামলায় এক মাস সাত দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে নিলাকে। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি এবং অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বারবার জামিন আবেদন করেও জামিন মেলেনি। অবশেষে দশমবারের আবেদনে জামিন পান তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই জন্ম দেন দ্বিতীয় সন্তানের।
আরামবাগে ভাড়া বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে হাসান আরিফ ও তার ছেলে মোয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেন নিলা।
এটর্নি জেনারেল কর্তৃক নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, ‘২৮ এপ্রিল নিজের দুই বছর বয়সী বড় মেয়েকে সর্বশেষ দেখেছিলেন। এরপর আর তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। মারধর, মামলা, আদালত থেকে জামিন না পাওয়া সবই হয়েছে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের ইশারায়।’
নিলা বলেন, ‘আমার অবুঝ মেয়েটাকে ওরা ননদকে দিয়ে দিতে চায়। আমি রাজি না হওয়ায় নির্যাতন, মামলা, জেল খাটিয়েছেন আমার শ্বশুর। আমি আদালতের মাধ্যমে আমার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছি। এর আগে ব্লাস্টের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য আমাদের বসানো হয়। সেখানে সমঝোতা না করে হাসান আরিফ সাহেবের একজন জুনিয়র উল্টো হুমকি দিয়েছেন, এবার হাসান আরিফের খেলা দেখবা।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মোয়াজ একজন অ্যাকোহলিক। নিজে কিছু করে না, বাবার টাকায় চলে। তার বাবা যা বলে তাই শুনে আমাকে মেরে একবার বাচ্চা নষ্ট করেছে। এখন আমার মেয়ে কেমন আছে জানি না। ওর নিরাপত্তা নিয়ে আমি সারাক্ষন চিন্তিত।’
সাধারণের মনে প্রশ্ন এ নির্যাতিত গৃহবধূ দুই সন্তানের জননী পাবেন কি আইনের সুফল?