ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ের উদ্বেগজনক হার! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১৫ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্বি পেয়েছে বাল্যবিয়ে। জেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া তথ্য মতে, করোনাকালিন এই সময়ে জেলায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে মাতৃত্বকালিন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে ১৭ বছরের কম বয়সী মেয়েরা।

জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী গত দেড় বছরে সাতক্ষীরায় ১২ হাজার ২৪১টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

আর ৫ হাজার ৯৪৬টি ডিভোর্স হয়েছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ ডিভোর্সের আবেদন করেছেন নারীরা। এই নারীদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের স্বীকার। এসব বাল্যবিয়ে হয়েছে অধিকাংশ মফস্বলে বা গ্রামে।

সচেতন মহলের মতে অধিকাংশ বাল্যবিয়ে দেওয়া হয় গোপনে অথবা ভূয়া জন্ম-নিবন্ধন তৈরী করে ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরীদের। ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত মেয়েরা। একই সাথে মাতৃত্বকালিন মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।
জেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির প্রশাসনিক প্রধান মোঃ সাকিবুর রহমান জানান, কোভিট-১৯ মহামারিকালে শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।

জেলার ৭টি উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে বাল্যবিয়ের এসব ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য মতে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি থেকে এসএসসি পরিক্ষার্থী ৫৭ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের দাবি ৫০ জন ছাত্রীর হয়েছে বাল্যবিয়ে। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত গত ৯ মাসে ২৭ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়া ঘোনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।

এছাড়া তালা উপজেলার শার্শা দাখিল মাদ্রাসায় ৪০ জন, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৫ জন, কলারোয়া উপজেলার রায়টা দাখিল মাদ্রাসায় ১৫ জন ও দেবহাটা উপজেলার বহেরা এটি বালিকা বিদ্যালয়ে ২৪ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় তাদের জরিপের কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব ছাত্রীদের অধিকাংশই সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে তৈরি হওয়া অভাব অনাটনের কারণে গ্রামীণ পরিবেশে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা মহামারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি কম থাকার সুযোগ নিয়েই এক প্রকার এই বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে জেলা বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটির কার্যক্রম করোনাকালিন সময়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে পর্যাপ্ত অভিযান না হওয়া এবং অভিযানে পণ্ড হয়ে যাওয়া বিয়ে গুলোর ফলোআপ ও মনিটরিং না থাকায় পরবর্তীতে তারা গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করে অধিকাংশ কিশোরী শ্বশুর বাড়িতে সংসার করছে।
এদিকে সাতক্ষীরা বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) একে এম শফিউল আযম জানান, গত ১৬ মাসে ১৬০ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর বাল্যবিয়ে পণ্ড করা হয়েছে। এসব কিশোরীর শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী। জেলার সাত উপজেলায় ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি এবং ২০২১ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ১০১টি সহ মোট ১৬০টি বাল্যবিয়ে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন ও বল্যবিয়ে নিরোধ কমিটি। এর মধ্যে চলতি মাসে ৬টি এবং শুধু আগস্ট মাসেই ৩০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এই আগস্ট মাসেই তালা উপজেলাতে ১৫টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এসব কিশোরীর অধিকাংশ সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রী। দারিদ্র ও পারিবারিক অসেচতনার কারণে এসব বাল্যবিয়ে বৃদ্বি পাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন যতেষ্ট তৎপর। এই সময়ে গ্রাম-গঞ্জে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে শতকারা হার ৭৫ শতাংশ নয়, এর কম হতে পারে। করোনাকালিন এই সময়ে কর্ম হারিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে দারিদ্রতা এখন তাদের নিত্য সঙ্গী। এ অবস্থায় শত শত কিশোরীকে বাল্যবিয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অসচেতন অভিভাবকরা। তবে সচেতন নাগরিক ও জন প্রতিনিধিদের উদ্যোগই এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ের উদ্বেগজনক হার! 

আপডেট সময় : ১১:৫২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্বি পেয়েছে বাল্যবিয়ে। জেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া তথ্য মতে, করোনাকালিন এই সময়ে জেলায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে মাতৃত্বকালিন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে ১৭ বছরের কম বয়সী মেয়েরা।

জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী গত দেড় বছরে সাতক্ষীরায় ১২ হাজার ২৪১টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

আর ৫ হাজার ৯৪৬টি ডিভোর্স হয়েছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ ডিভোর্সের আবেদন করেছেন নারীরা। এই নারীদের অধিকাংশই বাল্যবিয়ের স্বীকার। এসব বাল্যবিয়ে হয়েছে অধিকাংশ মফস্বলে বা গ্রামে।

সচেতন মহলের মতে অধিকাংশ বাল্যবিয়ে দেওয়া হয় গোপনে অথবা ভূয়া জন্ম-নিবন্ধন তৈরী করে ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরীদের। ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত মেয়েরা। একই সাথে মাতৃত্বকালিন মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।
জেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির প্রশাসনিক প্রধান মোঃ সাকিবুর রহমান জানান, কোভিট-১৯ মহামারিকালে শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।

জেলার ৭টি উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে বাল্যবিয়ের এসব ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য মতে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি থেকে এসএসসি পরিক্ষার্থী ৫৭ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের দাবি ৫০ জন ছাত্রীর হয়েছে বাল্যবিয়ে। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত গত ৯ মাসে ২৭ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়া ঘোনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।

এছাড়া তালা উপজেলার শার্শা দাখিল মাদ্রাসায় ৪০ জন, আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৫ জন, কলারোয়া উপজেলার রায়টা দাখিল মাদ্রাসায় ১৫ জন ও দেবহাটা উপজেলার বহেরা এটি বালিকা বিদ্যালয়ে ২৪ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় তাদের জরিপের কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব ছাত্রীদের অধিকাংশই সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে তৈরি হওয়া অভাব অনাটনের কারণে গ্রামীণ পরিবেশে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা মহামারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি কম থাকার সুযোগ নিয়েই এক প্রকার এই বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে জেলা বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটির কার্যক্রম করোনাকালিন সময়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে পর্যাপ্ত অভিযান না হওয়া এবং অভিযানে পণ্ড হয়ে যাওয়া বিয়ে গুলোর ফলোআপ ও মনিটরিং না থাকায় পরবর্তীতে তারা গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করে অধিকাংশ কিশোরী শ্বশুর বাড়িতে সংসার করছে।
এদিকে সাতক্ষীরা বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) একে এম শফিউল আযম জানান, গত ১৬ মাসে ১৬০ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীর বাল্যবিয়ে পণ্ড করা হয়েছে। এসব কিশোরীর শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী। জেলার সাত উপজেলায় ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি এবং ২০২১ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ১০১টি সহ মোট ১৬০টি বাল্যবিয়ে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন ও বল্যবিয়ে নিরোধ কমিটি। এর মধ্যে চলতি মাসে ৬টি এবং শুধু আগস্ট মাসেই ৩০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এই আগস্ট মাসেই তালা উপজেলাতে ১৫টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এসব কিশোরীর অধিকাংশ সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রী। দারিদ্র ও পারিবারিক অসেচতনার কারণে এসব বাল্যবিয়ে বৃদ্বি পাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন যতেষ্ট তৎপর। এই সময়ে গ্রাম-গঞ্জে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে শতকারা হার ৭৫ শতাংশ নয়, এর কম হতে পারে। করোনাকালিন এই সময়ে কর্ম হারিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে দারিদ্রতা এখন তাদের নিত্য সঙ্গী। এ অবস্থায় শত শত কিশোরীকে বাল্যবিয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অসচেতন অভিভাবকরা। তবে সচেতন নাগরিক ও জন প্রতিনিধিদের উদ্যোগই এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে।