ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকার প্রত্যক্ষদর্শী আমি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১ ১০২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহ সম্পর্কে, তার বডি এখানে এসেছে কি-না সে সম্পর্কে যে কথাগুলো এখন আওয়ামী লীগ বলেছে, আমি শুধু আজকে তার একটা প্রমাণ তুলে ধরতে চাই যে, চট্টগ্রাম থেকে জিয়াউর রহমানের মরদেহ তোলা হয়, পরে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। ডা. তোফায়েল আহমেদ তার পোস্ট পোর্টেম করেছিলেন এবং ২২টি বুলেট তার শরীর থেকে বের করেছিলেন।’

শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে এক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘২৮ আগস্ট ১৯৭১ : জিয়াউর রহমান কর্তৃক রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমান লাশ নেই’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারপরে বিগ্রেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ (প্রয়াত) তার মরদেহকে সামরিক এয়ার ক্রাফটে করে কুর্মিটোলায় নিয়ে এসেছিলেন, যেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার মনে হয় তখন ড. মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এসএ বারী এটি (উপ-প্রধানমন্ত্রী) প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা সেখানে দেখেছি- একটা কাঁচের বাস্কেট ছিল, সেখান থেকে তার দেহ দেখেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এ ধরনের কথাবার্তা বলার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে, ইতিহাসকে বিকৃত করে দেওয়া। জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া। আমাকে একজন সাংবাদিক বলেছেন, ওবায়দুল কাদের ছবি দেখাতে বলেছেন। ছবি কেউ কোনোদিন দেখায় না। উনাদের ছবিটাও কী উনারা দেখাতে পারবেন? এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে, তারা ভিন্ন দিকে নিতে চায়, ভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। সত্যি কথা বলতে কী এই সরকার একটা ভণ্ড সরকারে পরিণত হয়েছে, হিপোক্রেট সরকার।’

বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য আমাদের বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে জন ঐক্য সৃষ্টি করা। ১৯৭১ সালে যেমন জিয়াউর রহমান জনযুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই রকম জনযুদ্ধের জন্য আমাদেরকে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।’

বিষয়বস্তুর ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘রৌমারী মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরবময় ইতিহাস, আমাদের গর্বের স্থান। জেড ফোর্সের অধীনে এই অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন দেশের মুক্তাঞ্চল। ২৮ আগস্ট আমাদের জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান সেখানে বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন করেন। ওই সময় রৌমারীর জনগণ ট্যাক্স দেওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। তারা জানে যে, তাদের ট্যাক্সের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান কেবলমাত্র একজন সমর নায়কই ছিলেন না। কীভাবে বেসামরিক প্রশাসন চালাতে হবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি রৌমারীতে। আজকে ইতিহাসের এমনই বিকৃতি ঘটেছে যে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কি-না এটাও আমাদের বক্তৃতা দিয়ে বলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশিদের বক্তব্য কিংবা ইতিহাসের যে নির্মোহ সত্য এগুলোকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, জেড ফোর্সের বীরত্ব গাঁথা, রৌমারীর সেই মুক্তাঞ্চলের আকাশ-বাতাস, বৃক্ষ-লতা সব কিছুই সাক্ষী দেবে যে, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকারের কথায় দেশবাসী মোটেও আলোড়িত হবে না। মিথ্যা আর কত টিকবে এখানে?’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটি অবরুদ্ধ দেশে বসবাস করছি। প্রয়োজন সেই গামছা পরা, গেঞ্জি গায়ে দেওয়া গ্রামীণ মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদেরকে এসে শহর দখল করতে হবে, তাদেরকে দেশবাসী সামনে পরিচয় দিতে হবে কারা মুক্তিযুদ্ধে করেছিল এই দেশে, আর কারা বিদেশে গিয়ে আরামে ছিল।’

জাতীয় কমিটির সদস্য আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও চিলমারী উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার বক্তব্য রাখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকার প্রত্যক্ষদর্শী আমি

আপডেট সময় : ১১:০৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহ সম্পর্কে, তার বডি এখানে এসেছে কি-না সে সম্পর্কে যে কথাগুলো এখন আওয়ামী লীগ বলেছে, আমি শুধু আজকে তার একটা প্রমাণ তুলে ধরতে চাই যে, চট্টগ্রাম থেকে জিয়াউর রহমানের মরদেহ তোলা হয়, পরে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। ডা. তোফায়েল আহমেদ তার পোস্ট পোর্টেম করেছিলেন এবং ২২টি বুলেট তার শরীর থেকে বের করেছিলেন।’

শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে এক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘২৮ আগস্ট ১৯৭১ : জিয়াউর রহমান কর্তৃক রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমান লাশ নেই’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারপরে বিগ্রেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ (প্রয়াত) তার মরদেহকে সামরিক এয়ার ক্রাফটে করে কুর্মিটোলায় নিয়ে এসেছিলেন, যেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার মনে হয় তখন ড. মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এসএ বারী এটি (উপ-প্রধানমন্ত্রী) প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা সেখানে দেখেছি- একটা কাঁচের বাস্কেট ছিল, সেখান থেকে তার দেহ দেখেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এ ধরনের কথাবার্তা বলার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে, ইতিহাসকে বিকৃত করে দেওয়া। জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া। আমাকে একজন সাংবাদিক বলেছেন, ওবায়দুল কাদের ছবি দেখাতে বলেছেন। ছবি কেউ কোনোদিন দেখায় না। উনাদের ছবিটাও কী উনারা দেখাতে পারবেন? এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে, তারা ভিন্ন দিকে নিতে চায়, ভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। সত্যি কথা বলতে কী এই সরকার একটা ভণ্ড সরকারে পরিণত হয়েছে, হিপোক্রেট সরকার।’

বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার যতদিন থাকবে, বাংলাদেশ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য আমাদের বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে জন ঐক্য সৃষ্টি করা। ১৯৭১ সালে যেমন জিয়াউর রহমান জনযুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই রকম জনযুদ্ধের জন্য আমাদেরকে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।’

বিষয়বস্তুর ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘রৌমারী মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরবময় ইতিহাস, আমাদের গর্বের স্থান। জেড ফোর্সের অধীনে এই অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন দেশের মুক্তাঞ্চল। ২৮ আগস্ট আমাদের জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান সেখানে বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন করেন। ওই সময় রৌমারীর জনগণ ট্যাক্স দেওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। তারা জানে যে, তাদের ট্যাক্সের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান কেবলমাত্র একজন সমর নায়কই ছিলেন না। কীভাবে বেসামরিক প্রশাসন চালাতে হবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি রৌমারীতে। আজকে ইতিহাসের এমনই বিকৃতি ঘটেছে যে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কি-না এটাও আমাদের বক্তৃতা দিয়ে বলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশিদের বক্তব্য কিংবা ইতিহাসের যে নির্মোহ সত্য এগুলোকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, জেড ফোর্সের বীরত্ব গাঁথা, রৌমারীর সেই মুক্তাঞ্চলের আকাশ-বাতাস, বৃক্ষ-লতা সব কিছুই সাক্ষী দেবে যে, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকারের কথায় দেশবাসী মোটেও আলোড়িত হবে না। মিথ্যা আর কত টিকবে এখানে?’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটি অবরুদ্ধ দেশে বসবাস করছি। প্রয়োজন সেই গামছা পরা, গেঞ্জি গায়ে দেওয়া গ্রামীণ মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদেরকে এসে শহর দখল করতে হবে, তাদেরকে দেশবাসী সামনে পরিচয় দিতে হবে কারা মুক্তিযুদ্ধে করেছিল এই দেশে, আর কারা বিদেশে গিয়ে আরামে ছিল।’

জাতীয় কমিটির সদস্য আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও চিলমারী উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার বক্তব্য রাখেন।