ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




কুলাউড়ায় ভূমিখোকো রাহেল মেম্বারের দখল আতঙ্কে এলাকাবাসী 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ভূমিখোকো আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের ত্রাসের শিকার পুরো ওয়ার্ড। বিশেষ করে এলাকার হিন্দু ও দরিদ্র পরিবারের জায়গা নানা কৌশলে জবরদখল করাই তার মূল উদ্দেশ্য। আবার একাধিক নিরিহ পরিবারের জায়গায় ভূয়া দলীল করে জোরে দখলে নেন ওই ইউপি মেম্বার। কেউ এর প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা করে পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করান। এলাকায় গড়ে তোলেছেন একটি শক্তিশালী বাহিনী।

স্থানীয়দের অভিযোগ রাহেলকে পুলিশ প্রশাসনও পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করছে। তার হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। জনপ্রতিনিধির আড়ালেই তিনি এসব অপকর্ম করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তৎক্ষালিন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজারে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গেলে দুষ্কৃতিকারীরা তার উপর হামলা করে। ওই ঘটনার মামলায়ও আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলকে আসামী করা হয়, জানাযায় মুলত তার নেতৃত্বে সেই সময় ইউনওর উপর হামলা করা হয়েছিলো।

সরেজমিন রাউৎগাঁও ইউনিয়নের হাশামপুর এলাকায় গেলে ইউপি সদস্য রাহেলের নির্যাতনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননা। তারা বলেন, “আপনারা চলে যাওয়ার পর রাহেল তার লাটিয়াল বাহিনী দিয়ে আমাদের হয়রানি করবে। তবে এসময় সাহস করে সংখাললোঘু শৈলেন্দ্র মালাকার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ভাইদের মধ্যে জায়গা নিয়ে রাহেল বিরোধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিনকে তৃতীয় পক্ষ দাঁড় করিয়ে রাহেল মেম্বার গোপনে তার জায়গা দলিল করে নেয়।
এদিকে একই গ্রামের স্মৃতি রাণী মালাকারের বাড়িতে গেলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে ৩০ বছর আগে তার স্বামী মৃত মনরঞ্জণ মালাকারের বাড়ি এবং শ্মশান দখলে নেয় রাহেল মেম্বারের যোগসাজসে তার ভাইয়েরা। পরবর্তীতে হিন্দুদের সৌদি আরব নিচ্ছেনা বলে ৩৭ হাজার টাকা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। রাহেল মেম্বারের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ চোখের পানি ফেলে বলেন, রাহেল মেম্বারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশ দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য এলাকার একটি ডাকাতির মামলায় কারাগারে পাঠায়। ১ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসি। ইউনুছ উল্যাহ, আব্দুল হান্নান ও আব্দুল খালিক সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের হয়রানিতে আমরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারছি না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকে কিভাবে হয়রানি করা যায় এই চিন্তায় ওই জনপ্রতিনিধির দিন কাটে। পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক ও সম্পদের মালিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছু বলতেও পারেন না।

ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল বলেন, শৈলেন্দ্র মালাকারের জায়গা কিছু দিন আমার কাছে ছিল। পরবর্তীতে দলিল করে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। সরকারী গভীর নলকূপ আপনার লন্ডন প্রবাসী ভাইর বাড়িতে কিভাবে স্থাপন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ডিপ টিউবওয়েল চেয়ারম্যানের বরাদ্দ। নির্যাতন ও অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
স্থানীয় রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের ভাই লন্ডন প্রবাসী রুবেলের বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপনের বিষয়ে বলেন, আমার কাছে থেকে নিয়ে কাকে দিয়েছে আমি জানিনি। তবে এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। রাহেল মেম্বারের সাথে তার এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের জায়গা সংক্রান্ত একটি বিষয় আমার কাছে সালিশের জন্য এসেছে। ২/৪ দিনের মধ্যে সমাধানের জন্য বসব।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিণয় ভুষণ রায় বলেন,“আমি যোগদানের পরে এরকম হয়নি। আমার আগে হলে সে দায়িত্ব আমি নিতে পারব না”।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কুলাউড়ায় ভূমিখোকো রাহেল মেম্বারের দখল আতঙ্কে এলাকাবাসী 

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ভূমিখোকো আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের ত্রাসের শিকার পুরো ওয়ার্ড। বিশেষ করে এলাকার হিন্দু ও দরিদ্র পরিবারের জায়গা নানা কৌশলে জবরদখল করাই তার মূল উদ্দেশ্য। আবার একাধিক নিরিহ পরিবারের জায়গায় ভূয়া দলীল করে জোরে দখলে নেন ওই ইউপি মেম্বার। কেউ এর প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা করে পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করান। এলাকায় গড়ে তোলেছেন একটি শক্তিশালী বাহিনী।

স্থানীয়দের অভিযোগ রাহেলকে পুলিশ প্রশাসনও পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করছে। তার হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। জনপ্রতিনিধির আড়ালেই তিনি এসব অপকর্ম করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তৎক্ষালিন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজারে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গেলে দুষ্কৃতিকারীরা তার উপর হামলা করে। ওই ঘটনার মামলায়ও আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলকে আসামী করা হয়, জানাযায় মুলত তার নেতৃত্বে সেই সময় ইউনওর উপর হামলা করা হয়েছিলো।

সরেজমিন রাউৎগাঁও ইউনিয়নের হাশামপুর এলাকায় গেলে ইউপি সদস্য রাহেলের নির্যাতনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননা। তারা বলেন, “আপনারা চলে যাওয়ার পর রাহেল তার লাটিয়াল বাহিনী দিয়ে আমাদের হয়রানি করবে। তবে এসময় সাহস করে সংখাললোঘু শৈলেন্দ্র মালাকার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ভাইদের মধ্যে জায়গা নিয়ে রাহেল বিরোধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিনকে তৃতীয় পক্ষ দাঁড় করিয়ে রাহেল মেম্বার গোপনে তার জায়গা দলিল করে নেয়।
এদিকে একই গ্রামের স্মৃতি রাণী মালাকারের বাড়িতে গেলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে ৩০ বছর আগে তার স্বামী মৃত মনরঞ্জণ মালাকারের বাড়ি এবং শ্মশান দখলে নেয় রাহেল মেম্বারের যোগসাজসে তার ভাইয়েরা। পরবর্তীতে হিন্দুদের সৌদি আরব নিচ্ছেনা বলে ৩৭ হাজার টাকা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। রাহেল মেম্বারের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ চোখের পানি ফেলে বলেন, রাহেল মেম্বারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশ দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য এলাকার একটি ডাকাতির মামলায় কারাগারে পাঠায়। ১ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসি। ইউনুছ উল্যাহ, আব্দুল হান্নান ও আব্দুল খালিক সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের হয়রানিতে আমরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারছি না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকে কিভাবে হয়রানি করা যায় এই চিন্তায় ওই জনপ্রতিনিধির দিন কাটে। পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক ও সম্পদের মালিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছু বলতেও পারেন না।

ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল বলেন, শৈলেন্দ্র মালাকারের জায়গা কিছু দিন আমার কাছে ছিল। পরবর্তীতে দলিল করে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। সরকারী গভীর নলকূপ আপনার লন্ডন প্রবাসী ভাইর বাড়িতে কিভাবে স্থাপন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ডিপ টিউবওয়েল চেয়ারম্যানের বরাদ্দ। নির্যাতন ও অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
স্থানীয় রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের ভাই লন্ডন প্রবাসী রুবেলের বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপনের বিষয়ে বলেন, আমার কাছে থেকে নিয়ে কাকে দিয়েছে আমি জানিনি। তবে এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। রাহেল মেম্বারের সাথে তার এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের জায়গা সংক্রান্ত একটি বিষয় আমার কাছে সালিশের জন্য এসেছে। ২/৪ দিনের মধ্যে সমাধানের জন্য বসব।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিণয় ভুষণ রায় বলেন,“আমি যোগদানের পরে এরকম হয়নি। আমার আগে হলে সে দায়িত্ব আমি নিতে পারব না”।