কেরানীগঞ্জে চায়ের দোকানদার মাসুম আলী এখন কোটিপতি
- আপডেট সময় : ০৬:০৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১ ১৮১ বার পড়া হয়েছে
এস এম রাজু আহমেদঃ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার চায়ের দোকানদার মাসুম আলী এখন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে এই সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তার আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। একসময়ের চা বিক্রেতা মাসুম আলীর এমন সম্পদে ফুলেফেপে উঠার রহস্য উদ্ঘাটনে দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ জমা পড়েছে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে স্থ্নাীয় লোকজনের সাথে কথা বলে মাসুম আলীর সম্পর্কে সেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তা নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসনাবাদ মাজার রোডের বাসিন্দা মরহুম মর্তুজা আলীর ছেলে মাসুম আলী। অভাবের জীবনে চায়ের দোকানদারী করেই ঘুরাতো তার সংসারের চাকা। তবে চায়ের দোকানদারী করে কি এমন আলাদিনে প্রদীপ পেলেন যার বদৌলতে আজ তিনি কোটিপতি বনে গেলেন। এমন রহস্য উদ্ঘাটনেই বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। মাসুমের আপন মামা ফজলুল হক ওরফে সুদন সাব। নিজের ভাইবোনদের জমিজমা গ্রাস করে গড়ে তুলেছেন ভোগ-বিলাশী জীবন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ভুমিদস্যু, নারী লোভী ও গিরিঙ্গিবাজ সুদন সাব নামেই ব্যাপক পরিচিত। আর মামার পথ অনুসরণ করেই মাসুম আলী গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। নিজ বংশের ভাই বোনের জমিজমা ভাগ-বন্টন করে বুঝিয়ে না দিয়ে একাই জবরদখল করে রেখেছেন। শুধু জবরদখলই নয়, আপন চাচাতো ভাইকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করতে তাদের রাস্তা বন্ধ করে জবরদখল করা জমিতেই নির্মান করেছেনে ৪তলা ভবন। বিয়ে করেছেনে রাজধানী জুরাইন মুরাদপুর মাদ্রাসা রোড, কুদের বাজার এলাকার বাসিন্দা আলিম মিধার মেয়েকে। বিয়ের কয়েক বছর পরেই বউ তালাক দেয়ার হুমকি দিয়ে শ^শুরের নিকট থেকে লিখে নেন জমি। আর ঐ জমিতেও গড়ে তুলেছেন ৩লা ভবন। তবে এই বাড়ীটি আবার রাজউকের প্ল্যান বিহীন নির্মানাধীন। এলাকাবাসীর কাছে ঝুকিপূর্ন বলে প্রতীয়মান। যেকোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হাসনাবাদের কনটেইনার রোডে রয়েছে আনোয়ারা কমিউনিটি সেন্টার নামে ৪তলা ভবন। এছাড়া কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভার ভিউ ও হাসনাবাদ হাউজিং প্রজেক্টে সেভভিউ প্রপার্টিজ নামের এপার্টমেন্ট ব্যবসায় রয়েছে ২৫ শতাংশ মালিকানা। সেভভিউ প্রপার্টিজ নামের রয়েছে ৬টি বহুতল ভবন। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ। এতো সম্পদ কিভাবে অর্জন করলেন তা নিয়ে জানা গেছে কিছু অজানা কথা।
সুত্র জানা, মাসুম চায়ের দোকানদারী ফেলে রেখে সিঙ্গাপুরে চলে যায়। সিঙ্গাপুরে গিয়ে আপন ফুফাতো ভাইকে পার্টনারশিপে ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকে মোটা অংকের ডলার হাতিয়ে নিয়ে তাকে মামলার ফাদে ফেলে রেখে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে এসে আবার সেই চায়ের দোকানে বসেই শুরু করেন মাদক ব্যবসা ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছেই লাভে টাকা খাটানোর ব্যবসা। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে লিয়াজো করে ৫/৬ বছর মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত থেকে বিশাল অংকের টাকা ইনকাম করেন। এরপর গড়ে তুলেন জমি বেচাকেনার দালালী সিন্ডিকেট। তবে এই দালালী সিন্ডিকেটেও পরিচিতদের পার্টনারশিপের কথা বলে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অবশেষে ঝামেলা বাধিয়ে সটকে পড়েন। এখন সে সেভভিউ প্রপার্টিজের ২৫ শতাংশ মালিক বলে নিজেকে প্রচার করেন।
এলাকাবাসী আরো জানায়, মাসুম আলী অবৈধ উপায়ে এসব অর্জন করলেও তিনি কখনো আয়কর পরিশোধ করেননি। আয়কর পরিশোধের সময় সম্পদ অর্জনের বিবরনী উপস্থাপন করতে হয়। বৈধভাবে সম্পদ অর্জন করলেই আয়কর পরিশোধ করার সুযোগ থাকে । আর অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের আয়কর দাখিল করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং আইনে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ের শাস্তি পাওয়ার বিধান রয়েছে। সুতরাং মাসুম আলীর আয়কর রিটার্নের প্রোফাইল পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই এসব সম্পদ অর্জনের সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মাসুম আলী বলেন, আমি কিভাবে সম্পদ অর্জন করলাম তা নিয়ে আপনার কি সমস্যা। আমি আপনার নামে মামলা করবো।