কখন মরদেহ আসে ঠিক নেই আগেই খুঁড়ে রাখা হয় কবর
- আপডেট সময় : ১০:১২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৬০ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক: শাম্মীআরা বিনতে হুদা। বয়স ৫৭। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমমইউ) হাসপাতালে করোনাভাইরাস পজিটিভ নিয়ে ভর্তি হন। অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউর ১৩ নম্বর বেডে শিফট করা হয়। রোববার (১১ এপ্রিল) সকাল পৌনে সাতটায় মারা যান তিনি।
বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মরদেহ রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি সংলগ্ন কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। মরদেহের সঙ্গে স্বজনদের প্রথমে দেখা যায়নি। যদিও পরে প্রয়াতের ছোট ভাই কবরস্থানে আসেন। কিন্তু বোনের মরদেহ নামাতে সাহস পাননি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর তাকে দাফন করা হয়।
তবে তার জন্য নতুন করে কবর খুঁড়তে হয়নি। আগে থেকে খুঁড়ে রাখা একটি কবরে তাকে দাফন করা হয়। এখানে এরকম একটি কবরই আগে থেকে তৈরি থাকে না, অনেক কবরই খুঁড়ে রাখেন গোরখোদকরা। কখন যে কার মরদেহ আসে, তার ঠিক নেই। এ কারণেই আগে থেকে কবর খুঁড়ে রাখা হয়।
রায়েরবাজার বধ্যভূমি সংলগ্ন কবরস্থানে কথা হয় গোরখোদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে । তিনি বলেন, প্রতিদিন করোনায় মৃতের লাশ আসছে ৬-৭টা করে। কার লাশ কখন আসে তার কোন ঠিক নেই। তাই কবর খুঁড়ে রাখছি। আজ ২০টি কবর খুঁড়েছি। তিনটি লাশ কবর দিয়েছি। এখন বাকি আছে ১৭টি। দিনের অনেকটা সময় এখনও আছে। যেকোনো সময় লাশ চলে আসতে পারে। গতকাল আমরা সাতটি লাশ কবর দিয়েছিলাম। করোনার যারা মারা যান তাদের ৮ নম্বর ব্লকে কবর দেওয়া হয়। আজকে এখন পর্যন্ত যাকে শেষ কবর দেওয়া হয়েছে তার সিরিয়াল নম্বর হলো ১০৯২।
তিনি আরও বলেন, করোনার ভয়ে স্বজনরা লাশ ধরছেন না। আমরা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা রোগীদের দাফন করছি। আমরা ৩০ জন লোক এখানে কাজ করি। আমাদের একজনেরও করোনা হয়নি। গত ১ বছরে এখানে করোনা রোগী দাফন হয়েছে ১০৯২ জন। তাদের দাফনে কোনো সরকারি ফি নেই। করোনার কফিন আমরা আগুনে পুড়িয়ে দিই। যাতে এখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে না পারে।
করোনায় মারা যাওয়া যুগ্ম সচিবের ভাই ডা. জুবায়ের আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বড় বোন গত ৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। আজ ভোরে মারা যান তিনি।
করোনায় মারা যাওয়া রোকেয়া বেগম নামক এক নারীর মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে এখানে। তার ছেলে ইসমাইল জানান, আমার মা গত ২৩ মার্চ করোনায় মারা গিয়েছেন। আমি এসেছি মায়ের কবর জিয়ারত করতে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাসতুল ফাউন্ডেশনের এক্সিউটিভ ডিরেক্টর (ইডি) কাজী রিয়াজ রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা রোগীদের জন্য আমরা ফ্রি অক্সিজেন দিই। করোনায় যারা মারা যান, আমরা তাদের দাফন করি। গতকালও আমরা কয়েকটা লাশ দাফন করেছি। আমরা অনেক কল পাচ্ছি লাশ দাফন করার জন্য।
করোনা আপনজনকেও পর করে দিয়েছে। আজ যে লাশটি দাফন করলাম তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অথচ তার আপন কেউ আসেনি কবরস্থানে। চিন্তা করা যায় না এমন অবস্থার কথা। সবাই সচেতন থাকবেন, মাস্ক পরবেন। করোনার লাশ দাফন করতে হলে আমাদের খবর দিন। আমরা ফ্রিতে লাশ দাফন করি- যোগ করেন কাজী রিয়াজ।