ঢাকা ১২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




কামরাঙ্গীরচরে কাউন্সিলর হোসেন আতঙ্ক, তার কথাই যেন ‘আইন’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬২ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ:

‘এই দেশে জুলুম চলব না। একমাত্র খালি আমি জুলুম করুম।’ এমন হুঙ্কার একজন জনপ্রতিনিধির। নাম মোহাম্মদ হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি। কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাট এলাকার একটি বাড়ি বিক্রিকে কেন্দ্র করে ক্যাডার বাহিনীসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে একটি পরিবারকে এভাবেই হুমকি দিয়েছিলেন এলাকার দাপুটে কাউন্সিলর হোসেন। এমন হুঙ্কার দিয়েই এ পর্যন্ত বহু অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে আসছেন তিনি।

কামরাঙ্গীরচরে কাউন্সিলর হোসেনের কথাই যেন ‘আইন’। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, জমি দখল, হুমকি-ধমকি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে হোসেনের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও হোসেন ও তার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি। একাধিক ভুক্তভোগী সংবাদমাধ্যম এর কাছে কাউন্সিলর হোসেনের নানা অপকর্মের কাহিনি তুলে ধরেছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে প্রতিকারের অপেক্ষায় আছেন। অন্যদিকে যত দিন যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা। তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ মাদক কারবারেও সম্পৃক্ত। এলাকার বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, অবৈধ ইঞ্জিনচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে তার বাহিনী। কাউন্সিলরের অন্যতম সহযোগী ইসমাইল হোসেন ওরফে মাউরা ইসমাইল অবৈধ গ্যাস সংযোগের অন্যতম হোতা। প্রতিটি সংযোগের বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।

কামরাঙ্গীরচর এলাকায় চাঁদাবাজি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে- তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও শুনলে। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ডিশ ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনকে প্রতি মাসে চাঁদা দিতেন; কিন্তু টাকা দেওয়া নিয়েও দেখা দেয় জটিলতা। চাঁদার টাকা কাকে দেওয়া হবে- এই টানাপোড়েনের একপর্যায়ে আলী আহম্মদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে। আলী আহম্মদ চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে কাউন্সিলর হোসেন ও তার সহযোগী বিপ্লব মিলে তার আওতাধীন এলাকার পাঁচশ বাসার ডিশ লাইন দখল করে নেন। কিছুদিন আগে দায়ের হওয়া এক মামলার আসামি হয়ে আলী আহম্মদ এখন জেল খাটছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান ও ভাইরাল হওয়া অডিও-ভিডিও থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব পুরোনো অভিযোগ। অভিযোগকারীরা বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। অভিযোগগুলোর তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।’ ‘এই দেশে জুলুম চলব না, জুলুম করুম খালি একমাত্র আমি’- এমন হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে হোসেন বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা।’

তবে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর হোসেন একচ্ছত্রভাবে কামরাঙ্গীরচর নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমপির চেয়ে যেন বেশি প্রভাব নিয়ে চলেন। দখল বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই তার হাত। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্য নেই তার কাছে। রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানের পোস্টার পর্যন্ত লাগানো যায় না। দিনে লাগালে রাতে ছিঁড়ে ফেলা হয়।

কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম বলেন, ২৫ বছর ধরে এলাকায় ডিশ ব্যবসা করতাম। প্রায় ছয় বছর আগে হোসেনের নেতৃত্বে অন্যরা ব্যবসার দখল নিয়ে নেয়। অথচ ব্যবসা-সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আমার নামে। ব্যবসা না করেও আমাকে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

হোসেন-আতঙ্ক: গত কয়েক দিন কামরাঙ্গীরচরে সরেজমিনে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের অভিযোগ- মোহাম্মদ হোসেন কামরাঙ্গীরচরে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষ কথা বলার সাহস পান না। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, পত্রিকায় তাদের নাম প্রকাশ তো দূরের কথা, হোসেনের বিরুদ্ধে তারা কথা বলেছেন- এ খবর জানতে পারলেও বড় বিপদে পড়তে হবে।

মাসখানেক আগে বড়গ্রাম এলাকায় একটি পরিবার বাড়ির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দেয়। পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর সঙ্গে আগে থেকেই নানা কারণে পরিবারটির দ্বন্দ্ব চলছিল। যে কারণে বাড়ির দেয়াল তোলার খবর পৌঁছে যায় মোহাম্মদ হোসেনের কানে। তার অন্যতম সহযোগী ইসমাইল হোসেন ৩০-৩৫ জন ক্যাডার নিয়ে হাজির হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কাছে তারা জানতে চায়- বাড়ির কাজ চলছে কার অনুমতিতে? কাজ চালু রাখতে হলে আগে কাউন্সিলর হোসেনের অনুমতি আনতে হবে। এর পরই পরিবারের লোকজন হোসেনের কাছে যান। হোসেন তাদের জানিয়ে দেন- বাড়ির কাজ করতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে। অন্যথায় বাড়ি যেমন আছে, তেমনই রাখতে হবে। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। হোসেনের সহযোগী ইসমাইলের হাতে চাঁদার দুই লাখ টাকা তুলে দেয় ওই পরিবার।

কাউন্সিলর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা: কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়ার বাসিন্দা শেখ আনোয়ার কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীর ১৫ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন। ওই মামলায় বলা হয়েছে- আসামিরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আনোয়ারের বাড়ি দখলের প?াঁয়তারা করছে। মোহাম্মদ হোসেন গত ২৮ জুন ইসমাইল ও রহমানের মাধ্যমে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় পরদিন রাতে আনোয়ারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ: কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে হোসেনের ক্যাডার বাহিনী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়। এ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন ইসমাইল হোসেন। সম্প্রতি মজিবর ঘাট এলাকার শাকিল ও কালামের বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে। এ ছাড়া বড়গ্রামের বাদশা মিয়ার গলিতে মৃত সিরাজের বাড়ি, ইসলামনগর থেকে সুতাওয়ালা গলি এবং সিরাজের গলি থেকে ঘোড়াওয়ালা গলিতে গ্যাসের অবৈধ লাইন দেওয়া হয়। এসব লাইন থেকে বিভিন্ন বাসায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে।

হোসেন বাহিনীর শিকার এক তরুণী: মোহাম্মদ হোসেনের অন্যতম সহযোগী ইসমাইল প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় সোনিয়া আক্তার প্রিয়া নামের এক তরুণীকে গত ১৩ আগস্ট লালবাগের একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সোনিয়া মিরপুরে বাবার বাড়ি চলে যান। পরে সোনিয়া জানতে পারেন, ইসমাইলের প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর ইসমাইলের উপস্থিতিতে সোনিয়াকে ফোন করেন তার প্রথম স্ত্রী। এ নিয়ে দু’জনের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। বিষয়টি তালাকের নোটিশ দেওয়া পর্যন্ত গড়ায়। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে তালাকের নোটিশ পৌঁছে সোনিয়ার হাতে। ২৪ অক্টোবর ইসমাইল মিরপুরে সোনিয়াদের বাসায় গিয়ে তাকে চাকু দিয়ে হাতে আঘাত করেন। গত ২৬ নভেম্বর সোনিয়া কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় যান। এ খবর পেয়ে চার-পাঁচজন সহযোগী নিয়ে তাকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ইসমাইল। বাধার মুখে সোনিয়াকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সহযোগীদের নিয়ে চলে যান তিনি। এ ঘটনায় সোনিয়া ২৭ নভেম্বর ইসমাইলের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় জিডি করেন।

সোনিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইসমাইল কাউন্সিলর হোসেনের ডানহাত। এখন হোসেনের লোকজনই তাকে হুমকি দিচ্ছে। ইসমাইলকে নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়ে বলেছে, চুপচাপ থাকতে হবে। কাউন্সিলর হোসেন বিষয়টি দেখবেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি হোসেন, ইসমাইলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য ইসমাইলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের দাবিতে এরই মধ্যে আদালতে মামলা করেছেন।

রেহাই পাননি পুলিশ সদস্যও: মোহাম্মদ হোসেনের দাপটে তার ক্যাডার বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা চালাতেও পিছপা হয়নি। কামরাঙ্গীরচর থানার তৎকালীন এসআই মোতালেব ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে চাঁদ মসজিদ এলাকায় ফোর্স নিয়ে ডিউটিতে ছিলেন। এ সময় এক বৃদ্ধকে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। এসআই মোতালেব মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান চালক আসিফ বাবুর কাছে। মোটরসাইকেল থামানোর কারণে পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেকে হোসেনের লোক বলে পরিচয় দেন বাবু। এরপর ফোন করেন হোসেনকে। ফোন পেয়ে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হোসেন নিজেই স্পটে গিয়ে মোতালেবকে গালাগাল করেন। এসব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা মোতালেব ও ফোর্সের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মোতালেব কাউন্সিলর হোসেন, আসিফ বাবুসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আর ওই রাতেই এসআই মোতালেব ও তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বদলি হয়ে যান।

দলীয় নেতার ওপর হামলা: কাউন্সিলর হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল দেওয়ান গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে জামাল দেওয়ান বলেছেন- ‘গত কয়েক মাস যাবৎ কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গত ৭ জুলাই হঠাৎ করে হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্য বাবুল ওরফে কালা বাবু, শহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান, ইসমাইল ওরফে মাউরা ইসমাইল, রহমান, চীনা সোহেল ও মাউরা জাবেদসহ অজ্ঞাত পাঁচ-সাতজন আমার ৫২৬/১ পশ্চিম রসুলপুর বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে বিদ্যুতের সব মিটার ও পানির পাম্প খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়ির বাইরের অংশে তিনটি সাইনবোর্ড লাগায় তারা। খবর শুনে আমি ছুটে যাই। কালা বাবু জানায়, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিলে সাইনবোর্ড নামিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাস্থলেই সবার সামনে হোসেন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।’ জামাল দেওয়ান ঘটনার দিনই কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ১৭ আগস্ট সকালে জামাল দেওয়ানের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনি হোসেনের ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৭ আগস্ট কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়- মশিউর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মো. রাসেল, সালাম, মেহেদী হাসান রুবেল, ইসমাইল হোসেন, রাজ্জাক, টিপু, মো. বাবুল ওরফে কালা বাবু, জামিল, মো. রুবেলসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে।

গত ১৬ নভেম্বর জামাল দেওয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাউন্সিলর ও তার লোকজন আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি, এরপরও আমাকেই হামলার শিকার হতে হয়েছে। তাহলে অন্য মানুষের ওপর কী রকম জুলুম চলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খলতে সাহস পায় না।

মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হুমকি: ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন লিখিত অভিযোগ করেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে। আনোয়ার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- তিনি ৩৫ বছর ধরে পশ্চিম রসুলপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনী তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

আনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করতে যান তিনি। বিবাদী হিসেবে মোহাম্মদ হোসেন ও তার বাহিনীর নাম দেখে থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। ফলে গত বছরের ৯ অক্টোবর তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি মোহাম্মদ হোসেন জানতে পেরে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তার বাসায় এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কামরাঙ্গীরচরে কাউন্সিলর হোসেন আতঙ্ক, তার কথাই যেন ‘আইন’

আপডেট সময় : ১০:২০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০

সকালের সংবাদ:

‘এই দেশে জুলুম চলব না। একমাত্র খালি আমি জুলুম করুম।’ এমন হুঙ্কার একজন জনপ্রতিনিধির। নাম মোহাম্মদ হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি। কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাট এলাকার একটি বাড়ি বিক্রিকে কেন্দ্র করে ক্যাডার বাহিনীসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে একটি পরিবারকে এভাবেই হুমকি দিয়েছিলেন এলাকার দাপুটে কাউন্সিলর হোসেন। এমন হুঙ্কার দিয়েই এ পর্যন্ত বহু অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে আসছেন তিনি।

কামরাঙ্গীরচরে কাউন্সিলর হোসেনের কথাই যেন ‘আইন’। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, জমি দখল, হুমকি-ধমকি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে হোসেনের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও হোসেন ও তার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি। একাধিক ভুক্তভোগী সংবাদমাধ্যম এর কাছে কাউন্সিলর হোসেনের নানা অপকর্মের কাহিনি তুলে ধরেছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে প্রতিকারের অপেক্ষায় আছেন। অন্যদিকে যত দিন যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা। তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ মাদক কারবারেও সম্পৃক্ত। এলাকার বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, অবৈধ ইঞ্জিনচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করে তার বাহিনী। কাউন্সিলরের অন্যতম সহযোগী ইসমাইল হোসেন ওরফে মাউরা ইসমাইল অবৈধ গ্যাস সংযোগের অন্যতম হোতা। প্রতিটি সংযোগের বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।

কামরাঙ্গীরচর এলাকায় চাঁদাবাজি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে- তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও শুনলে। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ডিশ ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনকে প্রতি মাসে চাঁদা দিতেন; কিন্তু টাকা দেওয়া নিয়েও দেখা দেয় জটিলতা। চাঁদার টাকা কাকে দেওয়া হবে- এই টানাপোড়েনের একপর্যায়ে আলী আহম্মদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে। আলী আহম্মদ চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে কাউন্সিলর হোসেন ও তার সহযোগী বিপ্লব মিলে তার আওতাধীন এলাকার পাঁচশ বাসার ডিশ লাইন দখল করে নেন। কিছুদিন আগে দায়ের হওয়া এক মামলার আসামি হয়ে আলী আহম্মদ এখন জেল খাটছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান ও ভাইরাল হওয়া অডিও-ভিডিও থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব পুরোনো অভিযোগ। অভিযোগকারীরা বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। অভিযোগগুলোর তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।’ ‘এই দেশে জুলুম চলব না, জুলুম করুম খালি একমাত্র আমি’- এমন হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে হোসেন বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা।’

তবে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর হোসেন একচ্ছত্রভাবে কামরাঙ্গীরচর নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমপির চেয়ে যেন বেশি প্রভাব নিয়ে চলেন। দখল বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই তার হাত। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্য নেই তার কাছে। রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানের পোস্টার পর্যন্ত লাগানো যায় না। দিনে লাগালে রাতে ছিঁড়ে ফেলা হয়।

কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম বলেন, ২৫ বছর ধরে এলাকায় ডিশ ব্যবসা করতাম। প্রায় ছয় বছর আগে হোসেনের নেতৃত্বে অন্যরা ব্যবসার দখল নিয়ে নেয়। অথচ ব্যবসা-সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আমার নামে। ব্যবসা না করেও আমাকে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

হোসেন-আতঙ্ক: গত কয়েক দিন কামরাঙ্গীরচরে সরেজমিনে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের অভিযোগ- মোহাম্মদ হোসেন কামরাঙ্গীরচরে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষ কথা বলার সাহস পান না। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, পত্রিকায় তাদের নাম প্রকাশ তো দূরের কথা, হোসেনের বিরুদ্ধে তারা কথা বলেছেন- এ খবর জানতে পারলেও বড় বিপদে পড়তে হবে।

মাসখানেক আগে বড়গ্রাম এলাকায় একটি পরিবার বাড়ির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দেয়। পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর সঙ্গে আগে থেকেই নানা কারণে পরিবারটির দ্বন্দ্ব চলছিল। যে কারণে বাড়ির দেয়াল তোলার খবর পৌঁছে যায় মোহাম্মদ হোসেনের কানে। তার অন্যতম সহযোগী ইসমাইল হোসেন ৩০-৩৫ জন ক্যাডার নিয়ে হাজির হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কাছে তারা জানতে চায়- বাড়ির কাজ চলছে কার অনুমতিতে? কাজ চালু রাখতে হলে আগে কাউন্সিলর হোসেনের অনুমতি আনতে হবে। এর পরই পরিবারের লোকজন হোসেনের কাছে যান। হোসেন তাদের জানিয়ে দেন- বাড়ির কাজ করতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে। অন্যথায় বাড়ি যেমন আছে, তেমনই রাখতে হবে। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। হোসেনের সহযোগী ইসমাইলের হাতে চাঁদার দুই লাখ টাকা তুলে দেয় ওই পরিবার।

কাউন্সিলর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা: কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়ার বাসিন্দা শেখ আনোয়ার কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীর ১৫ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন। ওই মামলায় বলা হয়েছে- আসামিরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আনোয়ারের বাড়ি দখলের প?াঁয়তারা করছে। মোহাম্মদ হোসেন গত ২৮ জুন ইসমাইল ও রহমানের মাধ্যমে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় পরদিন রাতে আনোয়ারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ: কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে হোসেনের ক্যাডার বাহিনী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়। এ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন ইসমাইল হোসেন। সম্প্রতি মজিবর ঘাট এলাকার শাকিল ও কালামের বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে। এ ছাড়া বড়গ্রামের বাদশা মিয়ার গলিতে মৃত সিরাজের বাড়ি, ইসলামনগর থেকে সুতাওয়ালা গলি এবং সিরাজের গলি থেকে ঘোড়াওয়ালা গলিতে গ্যাসের অবৈধ লাইন দেওয়া হয়। এসব লাইন থেকে বিভিন্ন বাসায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে।

হোসেন বাহিনীর শিকার এক তরুণী: মোহাম্মদ হোসেনের অন্যতম সহযোগী ইসমাইল প্রথম স্ত্রী থাকা অবস্থায় সোনিয়া আক্তার প্রিয়া নামের এক তরুণীকে গত ১৩ আগস্ট লালবাগের একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সোনিয়া মিরপুরে বাবার বাড়ি চলে যান। পরে সোনিয়া জানতে পারেন, ইসমাইলের প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর ইসমাইলের উপস্থিতিতে সোনিয়াকে ফোন করেন তার প্রথম স্ত্রী। এ নিয়ে দু’জনের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। বিষয়টি তালাকের নোটিশ দেওয়া পর্যন্ত গড়ায়। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে তালাকের নোটিশ পৌঁছে সোনিয়ার হাতে। ২৪ অক্টোবর ইসমাইল মিরপুরে সোনিয়াদের বাসায় গিয়ে তাকে চাকু দিয়ে হাতে আঘাত করেন। গত ২৬ নভেম্বর সোনিয়া কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় যান। এ খবর পেয়ে চার-পাঁচজন সহযোগী নিয়ে তাকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ইসমাইল। বাধার মুখে সোনিয়াকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সহযোগীদের নিয়ে চলে যান তিনি। এ ঘটনায় সোনিয়া ২৭ নভেম্বর ইসমাইলের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় জিডি করেন।

সোনিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইসমাইল কাউন্সিলর হোসেনের ডানহাত। এখন হোসেনের লোকজনই তাকে হুমকি দিচ্ছে। ইসমাইলকে নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়ে বলেছে, চুপচাপ থাকতে হবে। কাউন্সিলর হোসেন বিষয়টি দেখবেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি হোসেন, ইসমাইলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য ইসমাইলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের দাবিতে এরই মধ্যে আদালতে মামলা করেছেন।

রেহাই পাননি পুলিশ সদস্যও: মোহাম্মদ হোসেনের দাপটে তার ক্যাডার বাহিনী পুলিশের ওপর হামলা চালাতেও পিছপা হয়নি। কামরাঙ্গীরচর থানার তৎকালীন এসআই মোতালেব ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে চাঁদ মসজিদ এলাকায় ফোর্স নিয়ে ডিউটিতে ছিলেন। এ সময় এক বৃদ্ধকে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। এসআই মোতালেব মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান চালক আসিফ বাবুর কাছে। মোটরসাইকেল থামানোর কারণে পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেকে হোসেনের লোক বলে পরিচয় দেন বাবু। এরপর ফোন করেন হোসেনকে। ফোন পেয়ে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হোসেন নিজেই স্পটে গিয়ে মোতালেবকে গালাগাল করেন। এসব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা মোতালেব ও ফোর্সের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মোতালেব কাউন্সিলর হোসেন, আসিফ বাবুসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আর ওই রাতেই এসআই মোতালেব ও তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বদলি হয়ে যান।

দলীয় নেতার ওপর হামলা: কাউন্সিলর হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল দেওয়ান গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে জামাল দেওয়ান বলেছেন- ‘গত কয়েক মাস যাবৎ কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গত ৭ জুলাই হঠাৎ করে হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্য বাবুল ওরফে কালা বাবু, শহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান, ইসমাইল ওরফে মাউরা ইসমাইল, রহমান, চীনা সোহেল ও মাউরা জাবেদসহ অজ্ঞাত পাঁচ-সাতজন আমার ৫২৬/১ পশ্চিম রসুলপুর বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে বিদ্যুতের সব মিটার ও পানির পাম্প খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়ির বাইরের অংশে তিনটি সাইনবোর্ড লাগায় তারা। খবর শুনে আমি ছুটে যাই। কালা বাবু জানায়, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিলে সাইনবোর্ড নামিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাস্থলেই সবার সামনে হোসেন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।’ জামাল দেওয়ান ঘটনার দিনই কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ১৭ আগস্ট সকালে জামাল দেওয়ানের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনি হোসেনের ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৭ আগস্ট কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়- মশিউর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মো. রাসেল, সালাম, মেহেদী হাসান রুবেল, ইসমাইল হোসেন, রাজ্জাক, টিপু, মো. বাবুল ওরফে কালা বাবু, জামিল, মো. রুবেলসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে।

গত ১৬ নভেম্বর জামাল দেওয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাউন্সিলর ও তার লোকজন আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি, এরপরও আমাকেই হামলার শিকার হতে হয়েছে। তাহলে অন্য মানুষের ওপর কী রকম জুলুম চলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খলতে সাহস পায় না।

মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হুমকি: ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন লিখিত অভিযোগ করেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে। আনোয়ার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- তিনি ৩৫ বছর ধরে পশ্চিম রসুলপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনী তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

আনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করতে যান তিনি। বিবাদী হিসেবে মোহাম্মদ হোসেন ও তার বাহিনীর নাম দেখে থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। ফলে গত বছরের ৯ অক্টোবর তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি মোহাম্মদ হোসেন জানতে পেরে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তার বাসায় এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন।