স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে চলছে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এ জন্য যানজট নিরসনের পরিবর্তে প্রতিদিন তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে চাঁদা আদায় করে। নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন নানা ব্র্যান্ডের গাড়ি কারণে- অকারণে থামিয়ে কাগজপত্র দেখার অজুহাতে হয়রানি করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক রাখার ফলে নগরীতে যানজট আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র চেক করা নয়, সাধারণ মানুষকে হয়রানি আর টাকা আদায়ই তাদের মূল টার্গেট বলে ভুক্তভোগীরা জানান। রাস্তায় লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও সেদিকে তাদের নজর নেই। ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস আটক করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে এসব ফিটনেসবিহীন বাসের চালক ও মালিকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা মাসোহারা নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। আর এ মাসোহারার জোরেই রাস্তায় চলাচল বন্ধ হচ্ছে না লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন যানবাহন। চাঁদাবাজির বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার অস্বীকার করেছেন। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, ট্রাফিক পুলিশ চাঁদাবাজি করছে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, রাজধানীর টার্মিনাল ও সড়কসমূহে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজির স্থান হিসেবে শতাধিক পয়েন্টকে চিহ্নিত করে সেখানে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা ফুটেজের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া আছে। কতিপয় সার্জেন্ট, ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশ কমিশনার বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উত্তরায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী সেলিস বলেন, উত্তরা থেকে গুলিস্তান আসতে একটি প্রাইভেটকারকে ৯ থেকে ১০টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের তল্লাশি মোকাবেলা করতে হয়। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই গাড়ি থামিয়ে অবান্তর প্রশ্ন করা হয়। আবার ট্রাফিক পুলিশের দাবি করা টাকা দিলে কোনো কাগজপত্র না থাকলেও অনেক গাড়ি ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া রাতের বেলা চলে ট্রাক থামিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ট্রাক ড্রাইভার করিম অভিযোগ করে বলেন, শুধু দিনে নয় রাতেও চলে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এতেও চলছে ট্রাফিক পুলিশের বাণিজ্য। বিআরটিএর অভিযান টিম যে রাস্তায় থাকে ট্রাফিক পুলিশ তা আগেই ড্রাইভারদের জানিয়ে দেয়। এতে করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ওই রাস্তা এড়িয়ে অন্য রাস্তায় চলে যায়। পুলিশ ফিটনেসবিহীন বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান শুরু করেনি। এ জন্য অনেকেই পুলিশের চাঁদাবাজিকেই দায়ী করছেন। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হলে পুলিশের অবৈধ বাণিজ্য কমে যাবে।
রাজধানীর রামপুরার প্রাইভেটকারের চালক করিস বলেছেন, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে খিলগাঁও, টিটিপাড়ার মোড়, মানিকনগরসহ কমপক্ষে ৪-৫টি স্থানে ট্রাফিক পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই সড়কে চাতাবাজের গডফাদার সার্জেন্ট নাজমুল এ কারণে-অকারণে গাড়ি থামিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখায়। টাকা দিলে সব ঝামেলা চুকে যায়।
উত্তরা এলাকার রেন্ট-এ কারের ব্যবসায়ী মোশারফ জানান, তার দুইটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় চলে। তিনি বলেন, রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করতে গিয়ে তাকে নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়। ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা না দিলে গাড়ি রিকুইজেশনের নাম করে আটক করে নিয়ে যায়। আবার রাস্তায় নানা অজুহাতে প্রতিদিনই পুলিশ টাকা আদায় করে। না দিলে ভয়ভীতি দেখানো হয় চালককে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত রবিবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর প্রবেশপথ উত্তরা-আবদুল্লাহপুওে কিছু ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর ওই এলাকায় প্রচÐ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার প্রবেশপথের ওই স্থানটিতে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটক করে চাঁদা আদায়ের কারণে এক সময় ওই যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পুলিশের এ চাঁদাবাজি নিত্যদিনের। যানজটের তোয়াক্কা না করে শুধু দিনে নয়, রাতভর চাঁদা নিতে তৎপর এসব ট্রাফিক সদস্য। প্রতিটি ট্রাক থেকে ন্যূনতম ১০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা বা তারও বেশি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তাগোলা এলাকাতেও যানবাহন থামিয়ে পুলিশকে টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর একটি ট্যাক্সিক্যাব থামিয়ে চাঁদা আদায় করতে দেখেছেন স্থানীয় চা বিক্রেতা হোসেন। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে এবং কমলাপুর এলাকায়, টিটিপাড়া ও মানিকনগর ট্রাফিক পয়েন্টেও পুলিশ দিনে-রাতে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে।
স্থানীয় একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শুধু যাত্রাবাড়ী আর খিলগাঁও নয়, রাত হলেই রাজধানীজুড়েই ট্রাফিক পুলিশের বিপথগামী কিছু সদস্য চাঁদাবাজি চালায়। অতি তুচ্ছ কারণে রাতের বেলা রাস্তায় চলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন যানবাহন চালকরা।
রাজধানীর উত্তরা জোনে অপ্রতিরোধ্যভাবে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রাস্তার পাশে থামিয়ে টাকা আদায় করছে। বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও লরি থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে উত্তরা জোনের ট্রাফিক পুলিশ। উত্তরা জোনে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে যেমন পরিবহনের মালিক ও যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন তেমনি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে পুলিশই যানজট সৃষ্টি করছে।
অভিযোগ রয়েছে ইত্তেফাক মোড়েই বসে থাকে নাজমুল আর এখান থেকেই সে নিয়ন্ত্রন করে পুরো ট্রাফিক ওয়ারিজোন নিয়ন্ত্রন করেন।( চলবে)