ঢাকা ০৬:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন Logo রাশিয়ায় কনসার্ট হলে বন্দুক হামলার নিহত ৬০, দায় স্বীকার আইএসের




ভিক্ষুকদের তাড়িয়ে সেতুর নাম ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০ ৬১ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধিঃ

হঠাৎ করে একটি সেতুর নামকরণ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র নায়ার কবির। ভিক্ষুকদের সরিয়ে সেতুর নাম ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’ করার পর থেকেই সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। তবে সেতুর নামকরণের মতো ছোট-খাটো বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগী হওয়ার জন্য পৌর মেয়র নায়ার কবিরকে পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের টি এ রোড এলাকার টাউন খালের ওপর থাকা ওই সেতুতে বসে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছিলেন ভিক্ষুকরা। এর ফলে সেতুটি ‘ফকিারপুল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তবে সেতুতে বসে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ফকিরাপুলে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করা বেশ কয়েকজন ভিক্ষুককে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়।

ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ ও চাল দেয়ার পরদিনই ব্রিজের নাম ‘থানা ব্রিজ’ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সেতুটির পাশেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভবনের অবস্থান। ফলে এই নাম দেয়া হয়েছে।

এদিকে সেতুর নামকরণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। থানা ব্রিজ নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সেতুটিকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ অথবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ নামকরণের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় ফেসবুক গ্রুপে সেতুটির নাম ‘ঘোড়াপট্টি পুল’ রাখার দাবি জানিয়ে লিখেছেন, জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এই পুলের আদি নামকরণে আমাদের আবেগ জড়িত। আমাদের আবেগের মর্যাদা দেবেন বলেই আপনাদের আমরা নির্বাচিত করেছি এবং আপনাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি। নাম বদলে ফেলার এই অনুশীলন আমাদের ভবিষ্যতে অন্য স্থানগুলোর নাম বদলে উৎসাহিত করতে পারে। এই অনুশীলন যথেষ্ট নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলেই বিশ্বাস।

হাসান হাশমী নামে আরেকজন লিখেছেন, কোন দিন জানি শহরের নামটাও বদলে যায়। পরিবর্তন আমরা সবাই চাই। কিন্তু যদি বাপের নাম পরিবর্তন আনা হয়, তা মেনে নেয়া যায় না।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান লেনিন ফেসবুকে লিখেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র মহোদয়া কর্তৃক ঐতিহাসিক নামকরণ! মেয়র মহোদয়া অনুগ্রহ করে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন নতুন নামকরণ বাদ দিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগী হোন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, সেতুটি যেখানে আছে, এর কাছেই যাতায়তের ঘোড়া এসে দাঁড়াতো। এজন্য এলাকাটি ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে সবাই সেতুটিকে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনত। পরবর্তীতে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার কারণে ফকিরাপুল নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। ঘোড়াপট্টির পুল দিলে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল থাকতো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতো বলে মানুষ ব্রিজটিকে ফকিরাপুল নামে ডাকতো। কিন্তু ব্রিজের কোনো নাম ছিল না। ফকিরাপুল শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যারা ব্রিজে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন- তাদেরকে নগদ অর্থ ও এক মাসের খাবার দেয়া হয়েছে। ফরিকরাপুল নাম ঘুচানোর জন্যই ব্রিজটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ভিক্ষুকদের তাড়িয়ে সেতুর নাম ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’

আপডেট সময় : ০৪:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

জেলা প্রতিনিধিঃ

হঠাৎ করে একটি সেতুর নামকরণ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র নায়ার কবির। ভিক্ষুকদের সরিয়ে সেতুর নাম ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’ করার পর থেকেই সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। তবে সেতুর নামকরণের মতো ছোট-খাটো বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগী হওয়ার জন্য পৌর মেয়র নায়ার কবিরকে পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের টি এ রোড এলাকার টাউন খালের ওপর থাকা ওই সেতুতে বসে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছিলেন ভিক্ষুকরা। এর ফলে সেতুটি ‘ফকিারপুল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তবে সেতুতে বসে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ফকিরাপুলে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করা বেশ কয়েকজন ভিক্ষুককে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়।

ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ ও চাল দেয়ার পরদিনই ব্রিজের নাম ‘থানা ব্রিজ’ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সেতুটির পাশেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভবনের অবস্থান। ফলে এই নাম দেয়া হয়েছে।

এদিকে সেতুর নামকরণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। থানা ব্রিজ নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সেতুটিকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ অথবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ নামকরণের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় ফেসবুক গ্রুপে সেতুটির নাম ‘ঘোড়াপট্টি পুল’ রাখার দাবি জানিয়ে লিখেছেন, জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এই পুলের আদি নামকরণে আমাদের আবেগ জড়িত। আমাদের আবেগের মর্যাদা দেবেন বলেই আপনাদের আমরা নির্বাচিত করেছি এবং আপনাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি। নাম বদলে ফেলার এই অনুশীলন আমাদের ভবিষ্যতে অন্য স্থানগুলোর নাম বদলে উৎসাহিত করতে পারে। এই অনুশীলন যথেষ্ট নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলেই বিশ্বাস।

হাসান হাশমী নামে আরেকজন লিখেছেন, কোন দিন জানি শহরের নামটাও বদলে যায়। পরিবর্তন আমরা সবাই চাই। কিন্তু যদি বাপের নাম পরিবর্তন আনা হয়, তা মেনে নেয়া যায় না।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান লেনিন ফেসবুকে লিখেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র মহোদয়া কর্তৃক ঐতিহাসিক নামকরণ! মেয়র মহোদয়া অনুগ্রহ করে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন নতুন নামকরণ বাদ দিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগী হোন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, সেতুটি যেখানে আছে, এর কাছেই যাতায়তের ঘোড়া এসে দাঁড়াতো। এজন্য এলাকাটি ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে সবাই সেতুটিকে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনত। পরবর্তীতে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার কারণে ফকিরাপুল নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। ঘোড়াপট্টির পুল দিলে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল থাকতো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতো বলে মানুষ ব্রিজটিকে ফকিরাপুল নামে ডাকতো। কিন্তু ব্রিজের কোনো নাম ছিল না। ফকিরাপুল শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যারা ব্রিজে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন- তাদেরকে নগদ অর্থ ও এক মাসের খাবার দেয়া হয়েছে। ফরিকরাপুল নাম ঘুচানোর জন্যই ব্রিজটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে।