ঢাকা ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ায় মাসে খরচ ২০ কোটি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০২০ ১১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; করোনা চিকিৎসার জন্য খাজনার থেকে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে গত মাস থেকে। আর এই ১ মাসে চিকিৎসকদের থাকা খাওয়ার বাবদ খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। আর এই বিল দেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চোখ কপালে উঠেছে। তাঁরা বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ এত হলে করোনা চিকিৎসা হবে কিভাবে? যেখানে সরকার করোনা চিকিৎসার জন্য করোনাকালীন সময়ে কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলা হচ্ছে, ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই চিকিৎসা বিলাসীতা নতুন করে চিন্তার উদ্রেগ করেছে সরকারের মাঝে।

ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এত খরচ ভবিষ্যতে আর বহন করা যাবেনা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে সরকারি যে ডরমেটরি আছে, সেই ডরমেটরিতে চিকিৎসকদের রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে যে, কোভিড পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেলের একাংশকে নির্ধারণ করার বিষয়টি শুরু থেকেই ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেলের নতুন বর্ধিতাংশকে কোভিড চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত করা হয়। সেসময় পাঁচশ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এখানের দায়িত্বে দেওয়া হয়। জানা গেছে, একজন চিকিৎসক ৭ দিন মাত্র ডিউটি করেন এবং বাকি ২১ দিন হোটেলে থাকে। ঢাকার একটি চার তারকা হোটেল নেওয়া হয় এই চিকিৎসকদের রাখার জন্য। এর ফলে ১ মাসে তাঁদের বিল এসেছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি টাকা শুধু খাবারের বিলই এসেছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যে, ৭ দিন ডিউটি এবং ২১ দিন ছুটির নিয়মটি বদল করতে হবে, বরং ১৪ দিন ডিউটি করে পরের ১৪ দিন ছুটির নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা ৭ দিন ডিউটি করে ২১ দিনের ছুটি ভোগ করছেন। এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে যে, এইসময় তাঁদের হোটেলের বিল এসেছে ১২ কোটি টাকা এবং খাবারের বিল এসেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। যখন সরকার করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এবং করোনা মোকাবেলার সঙ্গে অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়েছে, সেইসময় এমন ব্যয় অযাচিত এবং অর্থ মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বলেও জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে যে, এবার তাদেরকে বিল দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে এমন বিলাসিতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে করোনা সঙ্কটের শুরু থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে নানা রকম সমস্যা হয়েছে। প্রথমেই চিকিৎসকরা সব ধরণের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবা একেবারেই বন্ধ করে দেন। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং নির্দেশে করোনা চিকিৎসা যেন নিশ্চিত করা হয় এবং কোনো হাসপাতালে কোনো রোগীকে চিকিৎসাহীন যেন না থাকতে হয় সেজন্য কঠোর অনুশাসন জারি করা হয়। কিন্তু এমন নির্দেশনার পরেও চিকিৎসকরা নন কোভিডদের চিকিৎসা এখনো সুষ্ঠভাবে করছে না।

এদিকে করোনা চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও নানারকম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়। চিকিৎসকদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক বা পিপিই দেওয়া হয়েছিল তা ছিল নিম্নমানের। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবথেকে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছে। এই বাস্তবতায় যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিরাংশকে কোভিড হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন চিকিৎসকরা তাঁদের সুরক্ষার দাবি করেন।

উল্লেখ্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু এই ব্যবস্থার নামে এক ধরণের বিলাসীতা করেছেন, যা কোনভাবে কাম্য নয়। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, এরপর কোভিড চিকিৎসার জন্য যে চিকিৎসকরা কোভিড চিকিৎসা করবেন তাঁদেরকে সরকারি ভালো, উন্নত মানের ডরমেটরিতে রাখা হবে এবং সেখানে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ায় মাসে খরচ ২০ কোটি

আপডেট সময় : ১২:০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক; করোনা চিকিৎসার জন্য খাজনার থেকে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে গত মাস থেকে। আর এই ১ মাসে চিকিৎসকদের থাকা খাওয়ার বাবদ খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। আর এই বিল দেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চোখ কপালে উঠেছে। তাঁরা বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ এত হলে করোনা চিকিৎসা হবে কিভাবে? যেখানে সরকার করোনা চিকিৎসার জন্য করোনাকালীন সময়ে কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলা হচ্ছে, ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই চিকিৎসা বিলাসীতা নতুন করে চিন্তার উদ্রেগ করেছে সরকারের মাঝে।

ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এত খরচ ভবিষ্যতে আর বহন করা যাবেনা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে সরকারি যে ডরমেটরি আছে, সেই ডরমেটরিতে চিকিৎসকদের রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে যে, কোভিড পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেলের একাংশকে নির্ধারণ করার বিষয়টি শুরু থেকেই ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেলের নতুন বর্ধিতাংশকে কোভিড চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত করা হয়। সেসময় পাঁচশ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এখানের দায়িত্বে দেওয়া হয়। জানা গেছে, একজন চিকিৎসক ৭ দিন মাত্র ডিউটি করেন এবং বাকি ২১ দিন হোটেলে থাকে। ঢাকার একটি চার তারকা হোটেল নেওয়া হয় এই চিকিৎসকদের রাখার জন্য। এর ফলে ১ মাসে তাঁদের বিল এসেছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি টাকা শুধু খাবারের বিলই এসেছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যে, ৭ দিন ডিউটি এবং ২১ দিন ছুটির নিয়মটি বদল করতে হবে, বরং ১৪ দিন ডিউটি করে পরের ১৪ দিন ছুটির নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা ৭ দিন ডিউটি করে ২১ দিনের ছুটি ভোগ করছেন। এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে যে, এইসময় তাঁদের হোটেলের বিল এসেছে ১২ কোটি টাকা এবং খাবারের বিল এসেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। যখন সরকার করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এবং করোনা মোকাবেলার সঙ্গে অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়েছে, সেইসময় এমন ব্যয় অযাচিত এবং অর্থ মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বলেও জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে যে, এবার তাদেরকে বিল দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে এমন বিলাসিতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে করোনা সঙ্কটের শুরু থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে নানা রকম সমস্যা হয়েছে। প্রথমেই চিকিৎসকরা সব ধরণের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবা একেবারেই বন্ধ করে দেন। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং নির্দেশে করোনা চিকিৎসা যেন নিশ্চিত করা হয় এবং কোনো হাসপাতালে কোনো রোগীকে চিকিৎসাহীন যেন না থাকতে হয় সেজন্য কঠোর অনুশাসন জারি করা হয়। কিন্তু এমন নির্দেশনার পরেও চিকিৎসকরা নন কোভিডদের চিকিৎসা এখনো সুষ্ঠভাবে করছে না।

এদিকে করোনা চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও নানারকম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়। চিকিৎসকদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক বা পিপিই দেওয়া হয়েছিল তা ছিল নিম্নমানের। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবথেকে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছে। এই বাস্তবতায় যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিরাংশকে কোভিড হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন চিকিৎসকরা তাঁদের সুরক্ষার দাবি করেন।

উল্লেখ্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু এই ব্যবস্থার নামে এক ধরণের বিলাসীতা করেছেন, যা কোনভাবে কাম্য নয়। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, এরপর কোভিড চিকিৎসার জন্য যে চিকিৎসকরা কোভিড চিকিৎসা করবেন তাঁদেরকে সরকারি ভালো, উন্নত মানের ডরমেটরিতে রাখা হবে এবং সেখানে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।