ঢাকা ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ‘ফুল ভলিয়মে ভাইরাল গানে মগ্ন অন্তর্বর্তী জোট’ Logo স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে স্বৈরাচারের দোসর সৈয়দ হাবিবুরের দুর্নীতির ফিরিস্তি- পর্ব ১ Logo স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকায় সাংবাদিক হাফিজুর রহমান শফিক Logo রাজধানীর বাউনিয়ার ভূমিদস্যু খোরশেদ পরিবারের কব্জায় ভুক্তভোগীদের ভিটামাটি  Logo স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক পথচলা Logo রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানঃ  উপদেষ্টা আসিফ Logo গণপূর্তে পীরের কেরামতি: পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রধান প্রকৌশলী চেয়ারে বহাল! Logo ডিবির অভিযানে দোহার থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদকসহ পাঁচজন গ্রেফতার Logo অবসরে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার – পর্ব ১ Logo ১০০ কেজি গাঁজা ও কাভার্ড পিকআপসহ দুই মাদক কারবারি ডিবির হাতে গ্রেফতার

করোনা হাসপাতালঃ কেউ লাশের অপেক্ষায়, কেউ অসুস্থ স্বজন ফেলে পালিয়ে!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ ১৯২ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন প্রতিবেদকঃ প্রিয়জন হারানোর বেদনা যেমন অস্তিত্বের শেকড় নাড়িয়ে দেয়, আবার নিজেকে বিপন্ন করে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার দৃষ্টান্ত আশা জাগায়। রাতের নিস্তব্ধতায় ক্লান্ত নগর ঘুমের রাজ্যে বুঁদ। তবে নিদ্রাহীন চাঁদটার মতোই ঘুম নেই কারও কারও চোখে। কেউ জেগে আছেন উৎকণ্ঠায়, কেউ দায়িত্বের খাতিরে। কেউবা ফেলে রেখে যাওয়া স্বজনের অপেক্ষায়, আবার কেউ অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর কাজে। এভাবেই রাজধানীর করোনা হাসপাতালগুলোয় প্রতি রাতেই জন্ম নেয় নিত্যনতুন গল্প আর ঘটনা। হঠাৎই বুকফাটা আর্তনাদ। জানা গেল, করোনাযুদ্ধে হার মেনে চিরবিদায় নিয়েছেন ভাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটে বিফল হয়েছে ১৬ দিনের প্রচেষ্টা। এখন শুধুই ভোরের অপেক্ষা। আর অপেক্ষা লাশের। ভুক্তভোগীরা জানান, তার পরিবারে ভাই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার লাশ সকাল না হলে দেবে না। কেউ স্বজনের লাশের জন্য অপেক্ষায় রাত পার করছেন, আবার কেউ রাতের সুযোগে অসুস্থ স্বজনকে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, গত ৬ জুন ৫০ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগমকে হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তার ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে করোনার ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি করে। ওই ওয়ার্ডের মাস্টার আবুল হোসেন জানান, হাসপাতালে করোনা রোগী এবং তাদের স্বজনের আনাগোনা রাত-দিন একই ধরনের থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢামেক হাসপাতালের চিত্র ছিল এমন- অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে যেন ছেদ পড়ে যায় নীরবতায়। রোগীবাহী গাড়ি দ্রুত ঢুকে পড়ে জরুরি বিভাগের সামনে। নিজেদের সুস্থতার পরোয়া না করা অ্যাম্বুলেন্সচালক আর স্বেচ্ছাসেবীরা রেখে চলেছেন মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত। ঢামেকের এক অ্যাম্বুলেন্সচালক জানান, আগে প্রাইভেটকার চালাতেন। যখন দেখতে পেলেন বাবা-মার কাছে সন্তান যায় না, তখন তিনি ইচ্ছা করেই করোনা রোগী বহন করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালনায় আসেন। অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সুবাদে তার সঙ্গে এখন অনেকে মেশে না। পুরো রমজান মাস একা একা ইফতার করেছেন। হাসপাতালের গল্পের শেষটা এখানেই নয়। রাত ১২টা হলেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গাড়ি।

অপেক্ষারত স্বজন আর স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষুধা নিবারণে জন্য তাদের এ প্রচেষ্টা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এক কর্মী জানান, এত রাতে কোনো দোকান খোলা থাকে না যে কেউ খাবার কিনে খাবে। আবার বাইরের খাবারও স্বাস্থ্যসম্মত না। এজন্য এসব করোনা রোগী-স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো। কিছুটা হলেও সাহায্য করা। এ কাজগুলো নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য করা। মহামারী কাটিয়ে এক দিন আবার উঠে দাঁড়াবে মানুষ। সেদিন সেবা ও সাহসিকতার এই গল্পগুলো পথ দেখাবে নতুন আলোয়।
কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী জানালেন, কষ্টের রাতগুলো একটু দীর্ঘই হয়, হয় কঠিন। তবে করোনা যুদ্ধকালীন এই সময়ের একটি রাতের গল্পই হয়তো প্রমাণ করে মহৎ কিছু প্রাণের সহাসিকতা আর মানবিকতার শক্তিতে শিগগিরই কেটে যাবে অন্ধকার। আসবে করোনামুক্ত সুন্দর একটি ভোর।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াছিন এ প্রতিবেদককে জানান, সপ্তাহে প্রতিদিন তারা দুটি করে হাসপাতালে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের জন্য খাবার সরবরাহ করে থাকেন। গত রাতে তাদের রুটিনে ঢামেক হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে খাবার গাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল। এর আগের দিন তারা মগবাজারের নারী মৈত্রী ও কমিউনিটি হাসপাতালে খাবার দিয়েছেন। তার আগের দিন কুর্মিটোলা ও কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

করোনা হাসপাতালঃ কেউ লাশের অপেক্ষায়, কেউ অসুস্থ স্বজন ফেলে পালিয়ে!

আপডেট সময় : ১০:৫১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০

অনলাইন প্রতিবেদকঃ প্রিয়জন হারানোর বেদনা যেমন অস্তিত্বের শেকড় নাড়িয়ে দেয়, আবার নিজেকে বিপন্ন করে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার দৃষ্টান্ত আশা জাগায়। রাতের নিস্তব্ধতায় ক্লান্ত নগর ঘুমের রাজ্যে বুঁদ। তবে নিদ্রাহীন চাঁদটার মতোই ঘুম নেই কারও কারও চোখে। কেউ জেগে আছেন উৎকণ্ঠায়, কেউ দায়িত্বের খাতিরে। কেউবা ফেলে রেখে যাওয়া স্বজনের অপেক্ষায়, আবার কেউ অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর কাজে। এভাবেই রাজধানীর করোনা হাসপাতালগুলোয় প্রতি রাতেই জন্ম নেয় নিত্যনতুন গল্প আর ঘটনা। হঠাৎই বুকফাটা আর্তনাদ। জানা গেল, করোনাযুদ্ধে হার মেনে চিরবিদায় নিয়েছেন ভাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটে বিফল হয়েছে ১৬ দিনের প্রচেষ্টা। এখন শুধুই ভোরের অপেক্ষা। আর অপেক্ষা লাশের। ভুক্তভোগীরা জানান, তার পরিবারে ভাই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার লাশ সকাল না হলে দেবে না। কেউ স্বজনের লাশের জন্য অপেক্ষায় রাত পার করছেন, আবার কেউ রাতের সুযোগে অসুস্থ স্বজনকে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, গত ৬ জুন ৫০ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগমকে হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তার ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে করোনার ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি করে। ওই ওয়ার্ডের মাস্টার আবুল হোসেন জানান, হাসপাতালে করোনা রোগী এবং তাদের স্বজনের আনাগোনা রাত-দিন একই ধরনের থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢামেক হাসপাতালের চিত্র ছিল এমন- অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে যেন ছেদ পড়ে যায় নীরবতায়। রোগীবাহী গাড়ি দ্রুত ঢুকে পড়ে জরুরি বিভাগের সামনে। নিজেদের সুস্থতার পরোয়া না করা অ্যাম্বুলেন্সচালক আর স্বেচ্ছাসেবীরা রেখে চলেছেন মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত। ঢামেকের এক অ্যাম্বুলেন্সচালক জানান, আগে প্রাইভেটকার চালাতেন। যখন দেখতে পেলেন বাবা-মার কাছে সন্তান যায় না, তখন তিনি ইচ্ছা করেই করোনা রোগী বহন করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালনায় আসেন। অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সুবাদে তার সঙ্গে এখন অনেকে মেশে না। পুরো রমজান মাস একা একা ইফতার করেছেন। হাসপাতালের গল্পের শেষটা এখানেই নয়। রাত ১২টা হলেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গাড়ি।

অপেক্ষারত স্বজন আর স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষুধা নিবারণে জন্য তাদের এ প্রচেষ্টা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এক কর্মী জানান, এত রাতে কোনো দোকান খোলা থাকে না যে কেউ খাবার কিনে খাবে। আবার বাইরের খাবারও স্বাস্থ্যসম্মত না। এজন্য এসব করোনা রোগী-স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো। কিছুটা হলেও সাহায্য করা। এ কাজগুলো নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য করা। মহামারী কাটিয়ে এক দিন আবার উঠে দাঁড়াবে মানুষ। সেদিন সেবা ও সাহসিকতার এই গল্পগুলো পথ দেখাবে নতুন আলোয়।
কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী জানালেন, কষ্টের রাতগুলো একটু দীর্ঘই হয়, হয় কঠিন। তবে করোনা যুদ্ধকালীন এই সময়ের একটি রাতের গল্পই হয়তো প্রমাণ করে মহৎ কিছু প্রাণের সহাসিকতা আর মানবিকতার শক্তিতে শিগগিরই কেটে যাবে অন্ধকার। আসবে করোনামুক্ত সুন্দর একটি ভোর।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াছিন এ প্রতিবেদককে জানান, সপ্তাহে প্রতিদিন তারা দুটি করে হাসপাতালে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের জন্য খাবার সরবরাহ করে থাকেন। গত রাতে তাদের রুটিনে ঢামেক হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে খাবার গাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল। এর আগের দিন তারা মগবাজারের নারী মৈত্রী ও কমিউনিটি হাসপাতালে খাবার দিয়েছেন। তার আগের দিন কুর্মিটোলা ও কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করেছেন।