ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন Logo রাশিয়ায় কনসার্ট হলে বন্দুক হামলার নিহত ৬০, দায় স্বীকার আইএসের




মা কেন কাঁদে! মা-মায়ের অনুভূতি; রেবেকা সুলতানা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ১০১ বার পড়া হয়েছে

 

মা, কি অদ্ভুত চরিত্র, তাইনা? কতো কারনে যে মায়ের চোখে জল আসে ভেবে পাইনা। যখন অনেক ছোট ছিলাম মা কে দেখতাম কারনে অকারনে চোখ মুছে চলে। ভাই বোন বাড়িতে এলে কাদে, বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাদে, চাকরিতে প্রমোশন পেলেও কাদে, এলোমেলো জায়গায় পোস্টিং পেলেও কাদে, নাতি পুতিদের পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও কাদে আবার সাফল্যেও অশ্রুসজল হয়। অবাক হয়ে ভাবি কেন কাদে এ মহিলা সবকিছুতে! মানুষ তো আনন্দের ঘটনায় হাসবে আর বিষাদে কাদবে, তাইনা? মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে – আনন্দে কান্না আসে। আনন্দে আবার কেউ কাদে নাকি? কি বলেন আম্মা!!

– দিন যায় অভিজ্ঞতা বদলে যায়। একদিন শৈশব ছিল- কড়া শাসন কিংবা যা চাচ্ছি তা না হলে কান্না আসতো! আস্তে আস্তে বড় হয়েছি জীবনের নানান সময়ে নানান ঘটনায় কখনো হেসেছি কখনো কেদেছি। হাসি এবং কান্নার মাঝেই তো জীবন, তাইনা? কিন্তু! যতোই মা হয়ে উঠছি কারনে অকারনে চোখে জল চলে আসে। আজ হয়তো বুঝি- মা কেন কাদে সন্তানের ভালো মন্দে।

– প্রায় দশ বছর আগে চাকুরির প্রয়োজনে ছেলেদের নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসি। ছোট ছোট বাচ্চা তিনটা ছেলে আমার। সপ্তাহের ছুটির দিনে ওদের বাবা কে পাওয়া হয় আজ অবধি। বাকিটা সময় মা ওদের দিন রাতের চলার সাথী। চাকুরি করে বেলা অবেলায় যত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে আমার সন্তানেরা। আমি ওদের দিকে তাকাই ওদের বড় হওয়া, পরিবর্তন খেয়াল করি। আর অবাক হই। ছোট ছোট ছেলেগুলার বড় হয়ে উঠা আর আমার নিয়ত ছুটে চলা জীবনের সাথে ওদের মানিয়ে নেওয়া আমাকে মুগ্ধ করে। আমার ছোট ছেলেটা যখন থিয়েটারের মঞ্চে সংলাপ ছুড়ে চোখ ভিজে যায়। চোখ ভিজে যায় মেঝ ছেলে যখন স্কুলের জার্সি পরে এসে বলে আম্মু আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে আমাকে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে শুনি আমার বড় ছেলের হাতে গিটারের সুর আর আড়ালে চোখ মুছি। যখন দেখি আমার কোলে নিয়ে ফেরা ছোট বাচ্চাটা আজ মায়ের ব্যস্ততার জন্য একা একাই স্কুলে যায় আমার চোখ ভিজে যায়। কতো সকালে অফিস যাওয়ার তাড়ায় আমার মেঝ ছেলেটা যে আম্মু না তুলে দিলে বা বেড়ে দিলে খেতে পারেনা সে অভিমানে না খেয়ে স্কুলে চলে যায়। আমার এই ব্যস্ততাজনিত অপারগতায় সারাদিন অফিস কাজের ফাকেও চোখ মুছে যাই। আমার বড় ছেলেটার বেড়ে উঠা, তার দায়িত্ববোধ, তার স্থিরতা আমাকে ভেতর থেকে ভালো থাকতে শেখায়। মাত্র একটি সাবজেক্টে জিপিএ-৪ পাওয়ায় যখন মেঝ ছেলে এপ্লাস হারিয়ে আমায় পা ছুয়ে বলে আম্মু ক্ষমা করে দাও, সামনে ভাল করবো- ভেতরে হাসি আসে আর চোখে জল। অবুঝ এই ছেলেটা আমার অনেক বুঝে কিন্তু কিছুই বুঝেনা। ওর এই ছেলেমানুষী আমাকে ভাবায়, কাদায় আবার কখনো হাসায়। মা কেন কাদে আজ বুঝি!!

সন্তানের মুখের দিকে তাকালে ভেসে উঠে ওদের জন্ম থেকে শুরু করে অদ্যবধি চলা সংগ্রাম- আর এই সংগ্রামের সফলতা, ব্যর্থতা। সন্তান বড় করার পেছনে মা-বাবা দুজনের ই সংগ্রাম থাকে। দুজনের বোধ আলাদা হয়। আমি জানি একইভাবে হয়তো আড়ালে ওদের জ্যামিতিক বিশ্লেষণে আমারই মতো কান্নার জল মুছেন ওদের জনক।

আসলে কিছু অনুভুতি লিখে রাখি সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই। সময় বয়ে যায় খুব দ্রুত। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। আকারে ওরা দুজন আমাকে ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। আজ বড় ছেলেটা এসএসসি দিতে বসেছে। ওকে স্কুল ক্যাম্পাসে দেয়ার সময় ভাবছিলাম- এইতো আমার সংগ্রামের সফলতা। বড় হও বাবা! জ্ঞানে-গুনে-মানবিকতায় সমৃদ্ধ হও!! ওকে পৌছে দিয়ে যখন পিছু ফিরে হাটছি সেই চিরচেনা চোখের জল গড়াচ্ছে!! আজ তাই আমার মা কে বলতে চাই, আমি মা হয়েছি আজ আমি তোমার চোখের জলের অর্থ বুঝি মা!!

– চলমান এসএসসি পরীক্ষায় আমার ছেলের সাথে আরও যারা পরীক্ষায় বসেছে সবাই সফল হোক, খুব ভাল ফল আসুক। আমার মতো সব মায়েদের চোখ ভিজে উঠুক বারবার, মমতায়-ভালোবাসায়-আদরে-শাসনে-বারনে আমাদের সন্তানেরা সমাজে উদাহরন হয়ে উঠুক এটুকুই চাওয়া।

লেখকঃ রেবেকা সুলতানা, 
উন্নয়ন কর্মী, নির্বাহী পরিচালক, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মা কেন কাঁদে! মা-মায়ের অনুভূতি; রেবেকা সুলতানা

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

 

মা, কি অদ্ভুত চরিত্র, তাইনা? কতো কারনে যে মায়ের চোখে জল আসে ভেবে পাইনা। যখন অনেক ছোট ছিলাম মা কে দেখতাম কারনে অকারনে চোখ মুছে চলে। ভাই বোন বাড়িতে এলে কাদে, বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাদে, চাকরিতে প্রমোশন পেলেও কাদে, এলোমেলো জায়গায় পোস্টিং পেলেও কাদে, নাতি পুতিদের পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও কাদে আবার সাফল্যেও অশ্রুসজল হয়। অবাক হয়ে ভাবি কেন কাদে এ মহিলা সবকিছুতে! মানুষ তো আনন্দের ঘটনায় হাসবে আর বিষাদে কাদবে, তাইনা? মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে – আনন্দে কান্না আসে। আনন্দে আবার কেউ কাদে নাকি? কি বলেন আম্মা!!

– দিন যায় অভিজ্ঞতা বদলে যায়। একদিন শৈশব ছিল- কড়া শাসন কিংবা যা চাচ্ছি তা না হলে কান্না আসতো! আস্তে আস্তে বড় হয়েছি জীবনের নানান সময়ে নানান ঘটনায় কখনো হেসেছি কখনো কেদেছি। হাসি এবং কান্নার মাঝেই তো জীবন, তাইনা? কিন্তু! যতোই মা হয়ে উঠছি কারনে অকারনে চোখে জল চলে আসে। আজ হয়তো বুঝি- মা কেন কাদে সন্তানের ভালো মন্দে।

– প্রায় দশ বছর আগে চাকুরির প্রয়োজনে ছেলেদের নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসি। ছোট ছোট বাচ্চা তিনটা ছেলে আমার। সপ্তাহের ছুটির দিনে ওদের বাবা কে পাওয়া হয় আজ অবধি। বাকিটা সময় মা ওদের দিন রাতের চলার সাথী। চাকুরি করে বেলা অবেলায় যত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে আমার সন্তানেরা। আমি ওদের দিকে তাকাই ওদের বড় হওয়া, পরিবর্তন খেয়াল করি। আর অবাক হই। ছোট ছোট ছেলেগুলার বড় হয়ে উঠা আর আমার নিয়ত ছুটে চলা জীবনের সাথে ওদের মানিয়ে নেওয়া আমাকে মুগ্ধ করে। আমার ছোট ছেলেটা যখন থিয়েটারের মঞ্চে সংলাপ ছুড়ে চোখ ভিজে যায়। চোখ ভিজে যায় মেঝ ছেলে যখন স্কুলের জার্সি পরে এসে বলে আম্মু আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে আমাকে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে শুনি আমার বড় ছেলের হাতে গিটারের সুর আর আড়ালে চোখ মুছি। যখন দেখি আমার কোলে নিয়ে ফেরা ছোট বাচ্চাটা আজ মায়ের ব্যস্ততার জন্য একা একাই স্কুলে যায় আমার চোখ ভিজে যায়। কতো সকালে অফিস যাওয়ার তাড়ায় আমার মেঝ ছেলেটা যে আম্মু না তুলে দিলে বা বেড়ে দিলে খেতে পারেনা সে অভিমানে না খেয়ে স্কুলে চলে যায়। আমার এই ব্যস্ততাজনিত অপারগতায় সারাদিন অফিস কাজের ফাকেও চোখ মুছে যাই। আমার বড় ছেলেটার বেড়ে উঠা, তার দায়িত্ববোধ, তার স্থিরতা আমাকে ভেতর থেকে ভালো থাকতে শেখায়। মাত্র একটি সাবজেক্টে জিপিএ-৪ পাওয়ায় যখন মেঝ ছেলে এপ্লাস হারিয়ে আমায় পা ছুয়ে বলে আম্মু ক্ষমা করে দাও, সামনে ভাল করবো- ভেতরে হাসি আসে আর চোখে জল। অবুঝ এই ছেলেটা আমার অনেক বুঝে কিন্তু কিছুই বুঝেনা। ওর এই ছেলেমানুষী আমাকে ভাবায়, কাদায় আবার কখনো হাসায়। মা কেন কাদে আজ বুঝি!!

সন্তানের মুখের দিকে তাকালে ভেসে উঠে ওদের জন্ম থেকে শুরু করে অদ্যবধি চলা সংগ্রাম- আর এই সংগ্রামের সফলতা, ব্যর্থতা। সন্তান বড় করার পেছনে মা-বাবা দুজনের ই সংগ্রাম থাকে। দুজনের বোধ আলাদা হয়। আমি জানি একইভাবে হয়তো আড়ালে ওদের জ্যামিতিক বিশ্লেষণে আমারই মতো কান্নার জল মুছেন ওদের জনক।

আসলে কিছু অনুভুতি লিখে রাখি সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই। সময় বয়ে যায় খুব দ্রুত। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। আকারে ওরা দুজন আমাকে ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। আজ বড় ছেলেটা এসএসসি দিতে বসেছে। ওকে স্কুল ক্যাম্পাসে দেয়ার সময় ভাবছিলাম- এইতো আমার সংগ্রামের সফলতা। বড় হও বাবা! জ্ঞানে-গুনে-মানবিকতায় সমৃদ্ধ হও!! ওকে পৌছে দিয়ে যখন পিছু ফিরে হাটছি সেই চিরচেনা চোখের জল গড়াচ্ছে!! আজ তাই আমার মা কে বলতে চাই, আমি মা হয়েছি আজ আমি তোমার চোখের জলের অর্থ বুঝি মা!!

– চলমান এসএসসি পরীক্ষায় আমার ছেলের সাথে আরও যারা পরীক্ষায় বসেছে সবাই সফল হোক, খুব ভাল ফল আসুক। আমার মতো সব মায়েদের চোখ ভিজে উঠুক বারবার, মমতায়-ভালোবাসায়-আদরে-শাসনে-বারনে আমাদের সন্তানেরা সমাজে উদাহরন হয়ে উঠুক এটুকুই চাওয়া।

লেখকঃ রেবেকা সুলতানা, 
উন্নয়ন কর্মী, নির্বাহী পরিচালক, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা ।